চাঁপাইনাবগঞ্জে শিক্ষক সঙ্কটে প্রাথমিক শিক্ষা
Published: 20th, May 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষককের পদ শূন্য। ২০২১ সালে বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক মারা যাওয়ার পর থেকেই এখন পর্যন্ত পদটিতে কাউকে নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে একজন সহকারী শিক্ষককে দিয়ে চালানো হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের কাজ।
নরেন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া বিদ্যালয় যেন জেলার অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতীকী চিত্র। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। একই সঙ্গে রয়েছে সহকারী শিক্ষকের সংকটও। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরীসংখ্যান অনুযায়ী- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭০৮টি। এরমধ্যে পরীক্ষণ বিদ্যালয় রয়েছে দুটি। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৪১৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাকি ২৯৩ বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়গুলোতে একজন সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রায় দেড়শতাধিক সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ হয় ৩৫ শতাংশ। বেশ কয়েক বছর ধরে এ পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। বাকি ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। অবসরের তুলনায় পদোন্নতি ও নিয়োগের গতি কম থাকায় এই সমস্যা দিনদিন বাড়ছে বলে মনে করেন অনেকেই।
প্রধান শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে সবচেয়ে বেশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলায়। বাকি তিনটি উপজেলায় শিক্ষক সঙ্কট থাকলেও এই দুটি উপজেলার থেকে তুলনামূলক বেশি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান- প্রধান শিক্ষক সঙ্কটের কারণে একজন সহকারী শিক্ষককে বিদ্যালয়টির দায়িত্বভার দেওয়া হয়। এতে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করা শিক্ষক কমে যায়। ফলে অনান্য শিক্ষকদেরও উপর বাড়তি চাপ পড়ে।
শিক্ষক স্বল্পতার কারণে একজন শিক্ষককে যখন একাধিক ক্লাস করাতে হয়, তখন তিনি বাধ্য হয়ে দায়সারাভাবে পাঠদান করান। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হন।
শাজাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাইমুল হক বলেন, “প্রধান শিক্ষক থাকলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে ভালো হয়। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাকেই উপজেলার বিভিন্ন মিটিংয়ে যেতে হয়। পরে এই ঘাটতি পূরণ হয় না।”
নরেন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “একটি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক হলেন প্রধান অভিভাবক। তিনি অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এতে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমে যায়। এরপরেও স্কুলের প্রশাসনিক কাজেও প্রধান শিক্ষকের ব্যাপক ভূমিকা থাকে।”
মিঠিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আখতার বলেন, “শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকলে পাঠদান ব্যাহত হয়। স্বল্প শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ে বাড়তি ক্লাস নিতে হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত পাঠ পায় না। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক সঙ্কট দূর করা প্রয়োজন।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.
শিক্ষার মান নিয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক কিছু সঙ্কটের মুখোমুখী হয়েছেন। তবে শিক্ষার মান একেবারেই কমে যায়নি। চতুর্মুখী সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে শিক্ষাদান। তবে অনান্য জায়গার থেকে আমরা অনেক ভালো করছি।”
ঢাকা/শিয়াম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ একজন সহক র শ ক ষকক উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য (রিসাইকেলড) প্লাস্টিকের তৈরি ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড সেবা চালু করেছে মেঘনা ব্যাংক। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মেঘনা ব্যাংক মোট দুই ধরনের ভিসা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড বাজারে এনেছে। একটি হলো গ্রিন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড ও অন্যটি উইমেন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড।
নতুন এই উদ্যোগে একজন গ্রিন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ডধারী বছরে দুই লাখ টাকার বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। অন্যদিকে উইমেন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী একজন নারী গ্রাহক বছরে এক লাখ টাকার বেশি সুবিধা পাবেন।
মেঘনা ব্যাংক জানায়, প্রচলিত কার্ডের তুলনায় ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানে তৈরি এসব কার্ড উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমেছে। কার্ড এনভায়রনমেন্টাল ক্যালকুলেটর অনুযায়ী, এ ধরনের কার্ড উৎপাদনে শক্তির ব্যবহার ৪১ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া কার্ড উৎপাদনে যেসব বর্জ্য হয়, তা–ও পুনরায় কার্ড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। কার্ড তৈরিতে হ্যালোজেন উপাদানের ব্যবহারও ৫২ শতাংশ কমেছে।
যেসব সুবিধা পাওয়া যাবেমেঘনা ব্যাংকের এই দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ডধারীরা সাধারণ ব্যাংকিং সেবার বাইরে বিভিন্ন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডে সুবিধা ও ক্যাশব্যাক অফার পাবেন। এর পাশাপাশি ভ্রমণে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে নানা সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
গ্রিন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, মারমেইড ইকো রিসোর্ট, রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, ফোর্টিস ডাউনটাউন রিসোর্ট, গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেল ও রিসোর্টে এক রাত থাকলে আরেক রাত ফ্রিতে থাকা যাবে।
এ ছাড়া আড়ং, যাত্রা বাংলাদেশ, নর্থ অ্যান্ড কফি রোস্টার্স, যাত্রাবিরতি, রুয়েন বুসাবা, বান বুসাবা, ভল্ট ঢাকা, হারলান, টাইম জোন, ব্র্যাক নার্সারি ও গ্রিন লাইন পরিবহনে গ্রিন প্লাটিনাম কার্ডধারীরা ৪৩ হাজার ও উইমেন প্লাটিনামে ৩৭ হাজার পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা পাবেন।
এই দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ডধারীরা পাঁচ তারকা হোটেলে একটি খাবার কিনলে আরেকটি খাবার ফ্রি পাবেন। সেই সঙ্গে ভ্রমণে শেয়ারট্রিপ ও ওয়ান্ডার ওম্যানে ছয় মাস পর্যন্ত শূন্য শতাংশ ইএমআই সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিশ্বের দেড় হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাউঞ্জে নানা সেবা পাবে মেঘনা ব্যাংকের কার্ডধারীরা। এসব কার্ড ব্যবহারে জুয়েলারি, ফিটনেস, প্রসাধনী ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহক ও পরিবেশের জন্য দায়িত্বশীল উদ্ভাবন আমাদের মূল লক্ষ্য। দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য মেঘনা ব্যাংক পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রমে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে। দেশে প্রথম শতভাগ রিসাইকেলড প্লাস্টিক কার্ড চালু করা টেকসই ব্যাংকিংয়ের পথে আমাদের সাহসী পদক্ষেপ। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দায়িত্বশীল ও গ্রিন ইকোনমি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।’
যেভাবে আবেদন করা যাবেগ্রাহকেরা এই নতুন কার্ডের জন্য মেঘনা ব্যাংকের কল সেন্টারে কলের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অথবা যেকোনো মেঘনা ব্যাংক শাখায় গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজ দিয়ে এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে।
মেঘনা ব্যাংকের হেড অব কার্ডস মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘গ্রিন প্ল্যাটিনাম ও উইমেন প্ল্যাটিনাম কার্ড কেবল প্রিমিয়াম সুবিধা নয়। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের গ্রিন ভবিষ্যতে অবদান রাখার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি দেশে গ্রিন ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়ে তোলা।’