কবরস্থানের কমিটি গঠন হবে—এ খবরে সভাপতি পদ পেতে তৎপর হয়েছিলেন যুবদল ও শ্রমিক দলের দুই নেতা। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচনের। গঠিত হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন নির্ধারণ করে মনোনয়নপত্রও বিক্রি করা হয়। দুই প্রার্থী রীতিমতো পোস্টার ছাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচন আর হলো না। ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছেন গঠিত নির্বাচন কমিশন। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে। ইউনিয়নটির বালুদিয়া, মহরখালী ও জগতলা গ্রামের ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থানের সভাপতি পদ নিয়ে ২৪ মে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই আজ বুধবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় নির্বাচনটি স্থগিত করা হয়েছে।

কবরস্থানটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিশনের প্রধান আবদুল মতিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটির সভাপতি নির্ধারণ করা হবে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কবরস থ ন পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকায় গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন মাত্র ৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে (১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট) ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র সাতজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন।

ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথি পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তকাজে সহায়তায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় এই নথি পাঠায়।

নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেদের আওতাধীন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন। অন্যরা ‘গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে সংখ্যা, অস্ত্রের ধরন’-সংক্রান্ত তথ্যে ‘না’ উল্লেখ করেছেন।

যে সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা গুলিবর্ষণের অনুমতি দেননি। ঘটনার কয়েক দিন পর তাঁদের কাছ থেকে গুলিবর্ষণের অনুমতিসংক্রান্ত কাগজে সই নেওয়া হয়। আর তখন সই না দিয়ে তাঁদের কোনো উপায় ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর অনুমতি ছাড়াই দায়িত্বের আওতাধীন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলির ঘটনা ঘটেছিল। তবে এতে কোনো আহত-নিহত ছিল না। ঘটনার দিন কয়েক পরে তিনি গুলির অনুমতির কাগজে সই করেছিলেন।

আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন চলাকালে তিনি দুই দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। গুলিবর্ষণের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

উল্লিখিত পাঁচজনের বাইরে আরেকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নথিতে নাম থাকলেও আন্দোলন চলাকালে তিনি মাঠে ছিলেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মুঠোফোন খুদে বার্তা পাঠালে সাড়া দেননি।

হাজারো গুলি

ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সাত ধরনের তথ্য চায়।

যেসব তথ্য চাওয়া হয়, সেগুলো হলো, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নাম ও পরিচিতি নম্বর। কর্তব্যে নিয়োজিত হওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান। গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে সংখ্যা ও অস্ত্রের ধরন। অস্ত্র ব্যবহারকারী সদস্যের নাম ও পরিচিতি। হতাহত হয়ে থাকলে তার বিবরণ। নির্বাহী তদন্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিবেদনের অনুলিপি। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথিতে ১ হাজার ১৩২টি গুলি ছোড়ার তথ্যের উল্লেখ আছে। তবে হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র বলছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে ডিএমডির বিভিন্ন থানায় করা ২৮টি মামলার এজাহারে ৪ দিনেই প্রায় ২৫ হাজার গুলি ছোড়ার তথ্য পাওয়া যায়।

ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নথির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে রামপুরা এলাকায়। বাকি গুলির ঘটনা ঘটেছে যাত্রাবাড়ী, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বিজয় সরণি ও সংসদ ভবন এলাকায়। এসব স্থানে যাঁরা গুলি করেছেন, তাঁদের নাম নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গুলির ধরন হিসেবে উল্লেখ আছে এসএমজি ও আরএফএল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ডিএমপির একটি থানায় দায়িত্ব পালককারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ জুলাই থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপরই পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন, করিডোর, বন্দর ও মব নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আতঙ্কে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা
  • আলোচিত সেই কবরস্থানের সভাপতি পদের নির্বাচন স্থগিত
  • গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে ৬ ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক
  • ব্যবসায়ী সমাজ ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন
  • সিলেটে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, এখনো বিপৎসীমার নিচে
  • দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক প্রধান উপদেষ্টার
  • মানিকগঞ্জে কবরস্থান থেকে পাঁচটি কঙ্কাল চুরি
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকায় গুলিবর্ষণের তথ্য দিয়েছেন মাত্র ৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট