গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত
Published: 24th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই ৭৬ জনের মধ্যে ৫০ জনই গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ছিলেন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৮৫ জন।
শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সি।
শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫৩ হাজার ৮২২ জন এবং ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ অনেকেই ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। অন্যদিকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।
কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে বর্ষা এলেই বাড়ে টিলা কাটা
কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না সিলেটে টিলা কাটা। প্রতিনিয়ত পাহাড়-টিলা কেটে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে। কোথাও এক্সক্যাভেটর লাগিয়ে, আবার কোথাও শাবল দিয়ে কাটা হচ্ছে টিলা। বর্ষায় কাটলে সহজে ধসে পড়ে, এ কারণে টিলা কাটার পরিমাণও বেড়ে যায়। পরে এসব মাটি বিক্রি করে চলে ব্যবসা।
এদিকে বন্ধ হচ্ছে না টিলার পাদদেশে বসবাস। প্রায় প্রতিটি টিলায় গড়ে উঠছে বসতি। এ অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে লোকজন। সিলেট জেলার পাহাড়-টিলা কাটা রোধে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না।
গত কয়েক দিন সিলেটের মেজরটিলা, টিলাগাঁও, বালুচর, মলাইটিলা, ব্রাক্ষ্মণশাসন, হাওলাদারপাড়া, মজুমদারপাড়া, আখালিয়া, ডলিয়া, সাহেববাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টিলা কেটে বসতি নির্মাণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খাদিম টি এস্টেট, বুরজান, তারাপুর, মালনীছড়া, লাক্কাতুরা, দলদলি, আলীবাহারসহ নগরীর আশপাশের সব চা বাগানেই নির্বিচারে পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে।
খাদিমনগর ও খাদিমপাড়া এলাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে খাস জমি। এ ছাড়া সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া চা বাগানের জমিও বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে টিলাগাঁও এলাকায় গত রোববার গিয়ে দেখা যায়, বিশাল টিলা সাবাড় করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগে যেখানে টিলা ছিল, এখন সমতল ভূমি। খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর টিলা পরিদর্শন করে টিলার মালিকসহ পাঁচজনকে শোকজ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল হোসেন জানান, ১৩ বছর ধরে তিনি এ এলাকায় বাস করছেন। টিলায় পাঁচ শতক জায়গা কিনে ঘর বানিয়েছেন কয়েক বছর আগে। কম দামে জমি পেয়ে কিনেছেন। টিলায় ঝুঁকি থাকলেও কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।
সিলেট সদরের টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত লন্ডনি টিলা। সবাই এখন এটিকে চেনে জাহাঙ্গীরনগর আবাসিক এলাকা নামে। স্বল্প মূল্যে জায়গা কিনে সেখানে বাড়ি বানাচ্ছে নিম্নআয়ের লোকজন। সরেজমিন দেখা গেছে, এরই মধ্যে প্রায় ১৫ একর আয়তনের টিলার বেশির ভাগ স্থানে গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেডের ঘর। এগুলোতে বাস করছে শতাধিক পরিবার। কয়েকটি পাকা বাড়িও রয়েছে টিলার পাদদেশে। গত ছয়-সাত বছরে স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা মানুষ এসব বাড়ি গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই এসব ব্যাপারে।
শুধু ‘লন্ডনি টিলা’ নয়, আইন অমান্য করে গত দুই যুগে কেটে ফেলা হয়েছে সিলেটের অনেক টিলা। নগরীর আশপাশ এখন অনেকটা টিলাশূন্য। প্রভাবশালী একটি চক্র এসব টিলা কাটায় জড়িত। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।
কী পরিমাণ টিলা সিলেটে ছিল, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৮৭৫টি টিলা রয়েছে। এসব টিলার আয়তন ৪ হাজার ৮১১ একর। এর বাইরে আড়াই দশকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টিলা কেটে ফেলা হয়েছে।
টিলা কাটা বন্ধে তারা মাঠে রয়েছেন বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার। টিলা কাটা বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি। আমরা সবসময়ই তদারকি করছি। রাতে গোপনে টিলা কেটে ফেলে অনেকেই। যখনই কোনো সংবাদ পাই, আমাদের লোকজন ছুটে যায়। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু লোকজন সচেতন না হওয়ার কারণে টিলার পাদদেশে অনেকে বাস করছে।