বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ও তা ফেরত আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। সেই চাপের কারণে লন্ডনে কিছু অর্থ জব্দ হয়েছে। এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। লন্ডনে আরও যেসব অর্থ গেছে, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশে পাচারের অর্থ গেছে তা ফেরত আনার জন্য চাপ রাখতে হবে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের।’

শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ঋণ সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির লন্ডনে মালিকানাধীন ৯০ মিলিয়ন বা প্রায় ৯ কোটি পাউন্ডের (প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা) বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। এরা হলেন– সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও সালমান এফ রহমানের ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান। এর ফলে এখন লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, দেশ থেকে চুরি করা অর্থ ফেরত আনা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সব সরকারেরই এই অঙ্গীকার থাকা উচিত। কিছুদিন আগে অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনার জন্য আমি লন্ডনে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা চেষ্টা করছেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলি, লন্ডন টাইমস বা আল–জাজিরার মতো গণমাধ্যম বাংলাদেশের অর্থ পাচার নিয়ে বড়–বড় নিবন্ধ লিখছে। আগামীতে এধরনের আরও প্রতিবেদন আসবে। সামনের দিনে এই চাপ আরও বেগবান করতে হবে। সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি আছে যাদের অর্থ বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও বিভিন্ন দেশে এধরনের সম্পদ রয়েছে সে বিষয়ে কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি। গত সপ্তাহে দুবাই গিয়েছিলাম। শিগগিরই সিঙ্গাপুর যাবো। আবারও লন্ডনে যাবো। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসবকে সক্রিয় রাখতে হবে। এটা সক্রিয় না রেখে ভুলে গেলে আর এগোবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। এটা নৈতিকতা বিরোধী। অন্যের অর্থ রাখা ঠিক নয়, এটা জনগণের সম্পদ, আমানতকারীর সম্পদ। এটা বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

জব্দ করা অর্থ কতোদিনের মধ্যে ফেরত আসতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থ ফেরত আসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। অর্থ ফেরত আসবে বিচার শেষ হওয়ার পর। তবে এখন আর তারা এই সম্পদ বিক্রি করতে পারবে না। এর পরবর্তী ধাপ হিসেবে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তারা যদি বিক্রি করে চলে যেতো তাহলে তো আর আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে লাভ হতো না। সম্পদটা আটকে গেল। এটা খুবই একটা গুরিুত্বপূর্ণ ধাপ। আর নড়া–চড়া করতে পারবে না। বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন, এসব সম্পদ যুক্তরাজ্যের না বাংলাদেশের।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড আহস ন এইচ মনস র র অর থ রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ বছর বেতন তার ১৫০০ টাকা!

‘‘১৫ বছর আগে চাকরি শুরু করেছি। মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা। এখনও সেই ১৫০০ টাকাই আছে। এই টাকায় সংসার চলে না। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। টাকার অভাবে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে পারি না। নাতিপুতিরা স্কুলে পড়ে, তাদের অনেক কষ্ট, খাতা-কলম কিনে দিতে পারি না।’’

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন সুফিয়া খাতুন। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের ঝাড়ুদার পদে কাজ করছেন। 

সুফিয়া খাতুন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামের মৃত সুলতান আলী শেখের স্ত্রী। ৭ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী তিনি। 

সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘‘২৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটা অসুস্থ। কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। যা ছিল সব বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। বর্তমানে অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতেও পারি না। ডাক্তার বলেছে ১০ লাখ টাকা লাগবে।’’

সরকারের কাছে ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে সুফিয়া খাতুন আরো বলেন, ‘‘১৫ বছর বেতন বাড়ছে না। বেতনটাও যদি বাড়ত ছেলে-নাতিপুতিদের নিয়ে খেয়েপরে বাঁচতে পারতাম। শুনি অনেকে ভাতা পায়, আমি তাও পাই না।’’

‘‘কত স্যারের কাছে কাগজপত্র নিয়ে গেলাম বেতনটা বাড়ানোর জন্য, কিন্তু স্যাররা তাকিয়েও দেখলো না, কিছু বলেও না। কত লোককে বললাম, আমার ছেলের কার্ড করে দাও। কেউ তাকিয়েও দেখে না,’’ বলেন এই অসহায় বৃদ্ধা।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন খুব কষ্ট করে জীবন কাটাচ্ছেন। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। 

প্রতিবেশী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘‘সুফিয়া খাতুনের ছেলে সোহেল অনেক অসুস্থ। কাজ করতে পারে না। টাকার অভাবে তাদের অর্ধাহারে দিন কাটে। সরকার বা বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে তারা উপকৃত হবে। সাহায্য ছাড়া চিকিৎসা করানোর সমর্থা তাদের নেই।’’

এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের কেয়ার টেকার সৈয়দা আশেকুন নাহার বলেন, ‘‘সুফিয়া খাতুন ১৫ বছর ধরে ঝাড়ুদার পদে চাকরি করছেন। বেতন পান ১৫০০ টাকা। এটা কীভাবে হয়? এই টাকায় আজকাল দুদিন চলাও সম্ভব নয়!’’
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, ‘‘সুফিয়া খাতুনের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। আগামী মাস থেকে তার বেতন বৃদ্ধি করা হবে।’’

ঢাকা/কাঞ্চন//

সম্পর্কিত নিবন্ধ