বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অর্থনীতি যে পরিমাণ সৃষ্টিশীল সে তুলনায় অনেক সময় পেরে উঠতে পারছে না বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাজার খেলোয়াড়েরা অনেক বেশি চালাক, অন্তত নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আরও বেশি চালাক ব্যক্তিদের দায়িত্ব না দিলে বাজারের অনিয়ম ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।

আজ শনিবার ঢাকার নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কার্যালয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ‍্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় পুঁজিবাজার: দর্শন ও অনুশীলন' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধকার হিসেবে এসব কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

নির্ধারিত আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো.

মোহসিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ, আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পর্ষদের সদস‍্য মো. মোবারক হোসাইন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন।

দেশের পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা বুঝতে ইতিহাসের দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এ বাজারে যত কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা হয়েছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে। ২০১০-১১ সময়ে এ বাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বিদেশে। অথচ এর কোনো উপযুক্ত বিচার হয়নি। বিচার না হওয়ার কারণ হচ্ছে, তখন যেভাবে মামলা করার দরকার ছিল সেভাবে তা হয়নি। তখন মামলার প্রক্রিয়াই করা হয়েছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না দেওয়াটাকেই সমস্যার মূল বলে মনে করেন তিনি।

দেবপ্রিয় বলেন, শাস্তি না হলে দুর্নীতি রোধ করা যায় না। ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় শেয়ারবাজারে অনিয়ম হয়েছে। তখন হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়। তখনো কোনো বিচার হয়নি। বিচার না হওয়ার কারণে ২০১০-১১ সময়ের পরও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাঁরা অনিয়ম করেছেন তাঁদের কেউ কেউ এখন জেলে। যদিও তা অন্য কারণে। পুঁজিবাজারে অনিয়মের কারণে কেউ শাস্তি পাননি। এটা ছিল পাপের সূত্রপাত। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সঞ্চয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পুঁজিবাজার- এটাই বিশ্বে চলে আসছে; কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সে ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ, পুঁজিবাজারে যাঁদের যে ভূমিকা তা তাঁরা পালন করেননি। দেবপ্রিয়র প্রশ্ন, ‘তাঁরা কি সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছেন? আমার দৃষ্টিতে পারছেন না।’

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে চাঁদা (আইপিও) সংগ্রহ বন্ধ। সূচকে হয়েছে বড় ধরনের পতন। ফলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দুর্বল হয়েছে পুঁজিবাজার এবং ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, পুঁজিবাজার দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের প্রতিষ্ঠান। দিন এনে দিন খাওয়া—এটা এ প্রতিষ্ঠানের চরিত্র না। সামনে বাজেট। টোটকা ওষুধ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এখন সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বড় উদ্যোগ নেওয়া এবং সর্বজনস্বীকৃত একটি প্যাকেজ দরকার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবা হওয়ার কোনো বয়স আছে? সত্তরে কেলসির চমক
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের মামলা
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা