পঞ্চগড়ের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় বিএসএফ এর বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া ২১ জনকে আটকের তিনদিন পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে পঞ্চগড় সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তাদের পরিবারের কাছে তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন।

এ সময় পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়াল পাকিস্তান ও ভারত

বিশালের হবু স্ত্রী সাইকে কতটা জানেন?

বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৫৭ এর ১০ নম্বর সাব পিলার থেকে আনুমানিক আড়াই কিলোমিটার বাংলাদেশের ভিতর থেকে তাদের আটক করে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বর্ডার আউটপোস্টের (বিওপি) টহলদল। নীলফামারী ৫৬ ব্যাটলিয়নের আওতাধীন এই সীমান্ত দিয়ে ওইদিন ভোর সোয়া ৪টার দিকে ২১ জনকে পুশইন করে ভারতের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ।

আটক ২১ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, ছয়জন নারী ও ১৩ জন শিশু। ওইদিন বিকেলে আটকদের সদর থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি। পরে তাদের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিউনিটি সেন্টারে রাখা হয়। গত দুইদিন সেখানেই ছিলেন তারা। একইসঙ্গে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খবর দেওয়া হয় পরিবারকে।

দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করছিলেন তারা। গত ২১ মে তাদেরকে গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। পরে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে এবং কলকাতা থেকে বাসযোগে নিয়ে এসে টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প কর্তৃক তাদের গেইট দিয়ে বের করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।

এদিকে, পরিবারের লোকজনের সন্ধান পেয়ে দুশ্চিন্তা কেটেছে আটকদের। কথা হয় আটক থাকা আলেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি ২০ বছর ধরে গুজরাটে ছিলেন।

তিনি বলেন, “আমরা ভারতে বসবাস করে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এর মাঝে গত ২১ মে ভারতীয় পুলিশ আমাদের গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে বিমানে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসে করে এনে বিএসএফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এরপর বিজিবি আটক করে আমাদের। গত তিনদিন ধরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছিলাম সবাই। এর মাঝে আজ আমাদের পরিবারের সদস্যরা এসে খুলনায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে, আজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।”

স্ত্রী-সন্তানদের নিতে এসেছেন নড়াইলের ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, “আমি পরিবার নিয়ে ভারতে থেকে কিটনাশক কোম্পানিতে কাজ করতাম। এর মাঝে আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় ভারতীয় পুলিশ। পরে আমাকে আলাদা স্থানে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। আমি সীমান্ত দিয়ে সে সময় অবৈধপথে দেশে ফিরি। এতদিনেও স্ত্রী সন্তানের কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাদের ছবি দেখি। পরে পঞ্চগড়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ পরিবারকে নিতে এসেছি।”

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ২১ জন আটক হওয়ার পর ইউএনও আমাকে কল দিয়ে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখার বিষয়ে বলেন। আমি তাদের থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করি। আজ তিনদিনের মাথায় তাদের অভিভাবক আসায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশুসহ সবাই তাদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছে।”

পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, “আইনিভাবে আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি, তারা বাংলাদেশের। এ বিষয়ে ঘটনার দিন থানায় জিডি করা আছে। আজ তাদের পরিবারের সদস্যরা এলে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে তুলে দেওয়া হয়েছে।”

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, “ডিসি স্যারের নির্দেশে আটক ২১ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যেই তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা এলে আজ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/নাঈম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ ইউএনও দ র পর ব র র পর ব র র ক ছ কর মকর ত ত দ র পর ব এসএফ আম দ র কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

পাবনায় তীব্র নদী ভাঙনে বিলীনের ‍মুখে ফেরি ঘাট

উজানের পানির প্রবাহ বাড়ছে পদ্মা নদীতে। পানির বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড় ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। অবহেলা আর অযত্নে থাকা পাবনার নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটে এই তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ফেরিঘাটটি। যেকোনো মুহূর্তে ঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এছাড়াও তীব্র ভাঙনের ফলে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, হুমকিতে পড়েছে তাদের বসতবাড়ি।

সরেজমিন দেখা যায়, নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটের পূর্ব পাশের ফেরি পল্টনের নিচ থেকেই বড় বড় পার ভেঙে নদীতে পড়ছে। ফেরিঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এই ভাঙন চলছে। ফেরির মেইন পল্টুনের মাত্র কয়েক হাত দূর থেকে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর তীর ঘেঁষে কয়েক গজ দূরেই নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। যেভাবে ভাঙছে তাতে অল্পদিনের মধ্যেই সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও হারাতে পারেন তারা।

নদীপারের বাসিন্দারা বলেন, নদীর পশ্চিম পাশে বড় বড় ব্লক দিয়ে নদীর তীর রক্ষা করা হয়েছে। অথচ পূর্বপাশে কোনো ধরনের ব্লক নেই। কয়েক বছর ধরেই ভাঙছে, কিন্তু এবারের ভাঙনটা তীব্র হচ্ছে। আর কয়েকদিন গেলে তো আমাদের ঘর-বাড়ি নদীতে চলে যাবে। তারপরও কেউ দেখার নেই। আমরা মাথা গোজার ঠাঁই টুকুও হারাতে যাচ্ছি। আমরা কিছুই চাই না শুধু নদীর তীর রক্ষা চাই। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসন না করা এবং নদী রক্ষায় অন্যান্য ব্যবস্থা না নেয়ার ফলেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ঘাটের দুই পাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক অবৈধ ও যত্রতত্র বালু উত্তোলন করা হয়। অপরিকল্পিত এই বালু উত্তোলনের কারণেও এই ভাঙন হচ্ছে।

ঘাটের এই অবস্থার জন্য ইউএনও ও ডিসিকে দায়ী করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নাজিরগঞ্জ ঘাটের পোর্ট অফিসার তোফাজ্জল হোসেন জানান, চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালে আমাদেরকে ঘাটের জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এখনও ইউএনও ও ডিসি আমাদের সেটা দেননি। এজন্য আমরা ঘাটের কোনো উন্নয়ন করতে পারছি না। এভাবে আর কিছুদিন গেলে (ভাঙন হলে) তো আমার ঘাটই ভেঙে যাবে। বাধ্য হয়ে আমি আমার কোটি টাকার পল্টন সরিয়ে নিতে বাধ্য হবো।

এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, স্থানীয়দের কিছু আপত্তির কারণে তাদেরকে (বিআইডব্লিউটিএ) জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আর নদী ভাঙনের বিষয়ে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। আমরা ইতোধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় তীব্র নদী ভাঙনে বিলীনের ‍মুখে ফেরি ঘাট
  • ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন, পানির নিচে ৩০ গ্রাম
  • ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু, রেলপথ অবরোধ
  • ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর স্থলে হচ্ছে কাঠের সেতু
  • দর্শনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির লাশ ছয় দিন পর হস্তান্তর
  • ৮ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল বিএসএফ
  • আটক ৮ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ
  • হবিগঞ্জে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষে নিহত ১
  • ‘সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ’
  • ৩ দিন পর অর্ধগলিত লাশ ফেরত দিল বিএসএফ