বিএসএফ এর ঠেলে দেওয়া ২১ জন ফিরে গেল পরিবারে
Published: 24th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় বিএসএফ এর বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া ২১ জনকে আটকের তিনদিন পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার (২৪ মে) বিকেলে পঞ্চগড় সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তাদের পরিবারের কাছে তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন।
এ সময় পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়াল পাকিস্তান ও ভারত
বিশালের হবু স্ত্রী সাইকে কতটা জানেন?
বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৫৭ এর ১০ নম্বর সাব পিলার থেকে আনুমানিক আড়াই কিলোমিটার বাংলাদেশের ভিতর থেকে তাদের আটক করে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বর্ডার আউটপোস্টের (বিওপি) টহলদল। নীলফামারী ৫৬ ব্যাটলিয়নের আওতাধীন এই সীমান্ত দিয়ে ওইদিন ভোর সোয়া ৪টার দিকে ২১ জনকে পুশইন করে ভারতের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ।
আটক ২১ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, ছয়জন নারী ও ১৩ জন শিশু। ওইদিন বিকেলে আটকদের সদর থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি। পরে তাদের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিউনিটি সেন্টারে রাখা হয়। গত দুইদিন সেখানেই ছিলেন তারা। একইসঙ্গে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খবর দেওয়া হয় পরিবারকে।
দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করছিলেন তারা। গত ২১ মে তাদেরকে গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। পরে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে এবং কলকাতা থেকে বাসযোগে নিয়ে এসে টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প কর্তৃক তাদের গেইট দিয়ে বের করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
এদিকে, পরিবারের লোকজনের সন্ধান পেয়ে দুশ্চিন্তা কেটেছে আটকদের। কথা হয় আটক থাকা আলেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি ২০ বছর ধরে গুজরাটে ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমরা ভারতে বসবাস করে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এর মাঝে গত ২১ মে ভারতীয় পুলিশ আমাদের গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে বিমানে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসে করে এনে বিএসএফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এরপর বিজিবি আটক করে আমাদের। গত তিনদিন ধরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছিলাম সবাই। এর মাঝে আজ আমাদের পরিবারের সদস্যরা এসে খুলনায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে, আজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।”
স্ত্রী-সন্তানদের নিতে এসেছেন নড়াইলের ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, “আমি পরিবার নিয়ে ভারতে থেকে কিটনাশক কোম্পানিতে কাজ করতাম। এর মাঝে আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় ভারতীয় পুলিশ। পরে আমাকে আলাদা স্থানে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। আমি সীমান্ত দিয়ে সে সময় অবৈধপথে দেশে ফিরি। এতদিনেও স্ত্রী সন্তানের কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাদের ছবি দেখি। পরে পঞ্চগড়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ পরিবারকে নিতে এসেছি।”
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ২১ জন আটক হওয়ার পর ইউএনও আমাকে কল দিয়ে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখার বিষয়ে বলেন। আমি তাদের থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করি। আজ তিনদিনের মাথায় তাদের অভিভাবক আসায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশুসহ সবাই তাদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছে।”
পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, “আইনিভাবে আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি, তারা বাংলাদেশের। এ বিষয়ে ঘটনার দিন থানায় জিডি করা আছে। আজ তাদের পরিবারের সদস্যরা এলে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, “ডিসি স্যারের নির্দেশে আটক ২১ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যেই তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা এলে আজ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/নাঈম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ ইউএনও দ র পর ব র র পর ব র র ক ছ কর মকর ত ত দ র পর ব এসএফ আম দ র কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক
জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে।
একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।
সুচরিতা/শাহেদ