একসময়কার ঝলমলে ঐতিহ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল সময়ের সঙ্গে। কাঁচামালের অভাব, আধুনিকতার সংকট আর বিদেশি দাপটে পেছনে পড়ে গিয়েছিল গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জ গহনার শিল্প। শতাব্দীপ্রাচীন এই শিল্প আবার আলোয় আসছে–এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি নিয়ে। শুধু একটি সনদ নয়, এই স্বীকৃতি যেন নতুন আশার আলো। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্রোঞ্জ শিল্প পুনর্জাগরণের আশা সংশ্লিষ্টদের।
ঝকঝকে স্বর্ণাভ দীপ্তি নেই, তবু এক অদ্ভুত মুগ্ধতা আছে জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জ গহনায়। এই হস্তশিল্প একসময় ছিল নারীদের অলংকার বিকল্পের প্রধান ভরসা। এ গহনা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত বছর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পায় গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই গয়না। জেলায় রসগোল্লার পর এটিই দ্বিতীয় পণ্য, যা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
মুকসুদপুরে ব্রোঞ্জের গহনা তৈরির পল্লি প্রায় ১০০ বছর আগে গড়ে ওঠে। পরে এটি উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লিকে ঘিরে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট করে দেয় সরকার। জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনার চাহিদা সারাদেশে ব্যাপ্তি লাভ করে। সমাদৃত হয়ে ওঠে বিভিন্ন বয়সী নারীর কাছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এটি বিদেশের বাজার দখল করে নেয়। কিন্তু এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি।
ব্রোঞ্জের গহনা তৈরির যে নিপুণতা ও শিল্পবোধ জলিরপাড়ের কারিগরদের হাতে গড়ে উঠেছিল, তা এখনও টিকে আছে ৪৫টি দোকান আর শতাধিক পরিবারের অনটনের মাঝেও। একসময় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারে আলো ছড়ালেও, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ভারত ও চীনের ঝলমলে ব্রোঞ্জ পণ্যের কাছে পিছিয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। তবু হাল ছাড়েননি কারিগররা।
জিআই সনদপ্রাপ্তির মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ, বিপণন ও আধুনিকায়নের নানা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ব্রোঞ্জ শিল্পকে আধুনিক ও রপ্তানিযোগ্য করতে বিসিক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে।
জলিরপাড় গ্রামের ব্রোঞ্জের গহনা প্রস্তুতকারক আকাশ কীর্ত্তনীয়া বলেন, ‘আমাদের ব্রোঞ্জের গহনা কেমিক্যাল দিয়ে পালিশ করলে তামার কালার আসে। স্বর্ণের মতো চকচকে ইমিটেশন কালার হয় না। ভারত ও চীনের ব্রোঞ্জের গহনার কালার স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করে। তাই ভারত ও চীনের ব্রোঞ্জের গহনা সব শ্রেণির নারীর কাছে সমাদৃত। আমাদের গহনা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। শিল্পের কাঁচামাল, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, কালার ও অত্যাধুনিক মেশিনসহ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এ শিল্পের পুনর্জাগরণ ঘটাতে পারব। এখানে অন্তত ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী সুবাস বৈদ্য বলেন, এ মার্কেটে ৪৫টি দোকান আছে। এসব দোকানে ব্রোঞ্জের গহনা বিক্রি হয়। সারাদেশ থেকে পাইকাররা এখানে এসে ব্রোঞ্জের গহনা কিনে নিয়ে যান। সারাদেশে অন্তত ১০ হাজার মানুষ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সরকার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জ মার্কেটের উন্নয়ন করেছে। এখন ব্রোঞ্জ শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পে উৎপাদিত গহনা আবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার দখল করতে পারবে।
৩০ এপ্রিল ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবসের অনুষ্ঠানে ব্রোঞ্জ গহনার জিআই সনদ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সম্ভাবনার এক নতুন অধ্যায়। সরকারি পরিকল্পনা ও কারিগরদের ঐকান্তিকতায় জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জ গহনা আবারও দেশের গর্ব হয়ে উঠতে পারে– এ আশায় বুক বাঁধছেন সবাই। শিল্পের ঝলক ফিরে পেতে এখন শুধু প্রয়োজন সংগঠিত উদ্যোগ আর আন্তরিক সহযোগিতা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব র ঞ জ র গহন ব র ঞ জ গহন সরক র গহন র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”