পর্যটকদের কাছে যেসব কারণে প্রিয় সাবরাং সমুদ্রসৈকত
Published: 25th, May 2025 GMT
এক পাশে পাহাড়সারি, অন্য পাশে সাগর, মাঝখানে বয়ে গেছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই সড়কের টেকনাফ প্রান্তে সাবরাং সমুদ্রসৈকতে গড়ে উঠছে বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সাবরাং সমুদ্রসৈকত। সৈকতের নির্জন পরিবেশ, রঙিন নৌকা ও সাগরলতা মুগ্ধ করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।
গত শুক্রবার বিকেলে সাবরাং সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সৈকতে হাঁটাহাঁটি করছেন অনেক পর্যটক। কেউ আবার মেরিন ড্রাইভ সড়কে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল রূপ আর গর্জন উপভোগ করছেন। মুঠোফোনে ধারণও করছেন সেই চিত্র। অনেক পর্যটককে আবার দেখা যায় সৈকতে রাখা রঙিন নৌকার সঙ্গে ছবি তুলছেন।
শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টেকনাফ সৈকতে অবস্থান করে দেখা গেছে, পর্যটকের প্রধান আকর্ষণ রঙিন নৌকা। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ঘড়ি ভাস্কর্য থেকে উত্তর দিকে টেকনাফ থানার পুলিশের তল্লাশিচৌকি পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের তিন কিলোমিটারজুড়ে কয়েক শ রঙিন নৌকা রাখা হয়েছে।
বিকেল চারটায় মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে রাখা নৌকার সারির সঙ্গে ছবি তুলছিল ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা একটি পরিবার। পরিবারের এক সদস্য নাজনীন সিদ্দিক (৩৪) বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা ঘোরার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু এ রকম আকর্ষণীয় নৌকা কোথাও চোখে পড়েনি। প্রতিটি নৌকা রঙিন। নৌকার মধ্যে আলোকসজ্জাও করা আছে।
রঙিন নৌকার ওপর উঠে ছবি তুলছিলেন তিন তরুণ। জানালেন, তাঁরা এসেছেন রাজশাহী থেকে। তরুণদের একজন কৌশিক (২৫) বলেন, চাঁদের আদলে নির্মিত কাঠের তৈরি নৌকাগুলো অনেক শক্ত। তবে উত্তার সাগরের পানিতে এসব রঙিন নৌকা ভাসতে দেখেননি তাঁরা। সাগরে রঙিন নৌকার মাছ ধরার দৃশ্যটা দেখতে পেলে আনন্দ পরিপূর্ণ হতো।
গত ১৪ এপ্রিল শুরু হয়েছে সাগরে মাছ আহরণে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তাই সৈকতে মাছ ধরার নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। এসব নৌকার সঙ্গে ছবি তুলতে পেরে বেশ খুশি পর্যটকেরা। চট্টগ্রামের রাউজান থেকে আসা সাজ্জাদ হোসাইন স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে–মেয়ে নিয়ে রঙিন নৌকার ছবি তুলছিলেন। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীতে সাম্পানে চড়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। সাম্পান এখন বিলুপ্তপ্রায়। টেকনাফের নৌকাগুলো সাম্পানের আদলে তৈরি হলেও রঙিন হওয়ায় বেশ আকর্ষণীয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় সব কটি রঙিন নৌকার সামনের অংশে মালিকের নাম লেখা। একটি নৌকার মালিক আবদুল রহিম (৪৫) বলেন, এক যুগ আগে শখের বশে মহেশখালিয়াপাড়ার এক লোক নৌকার গায়ে রং লাগান। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই নৌকায় রং লাগানো শুরু করেন। এখন টেকনাফের প্রায় শতভাগ নৌকা রঙিন। নৌকার মালিকেরাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নৌকা রঙিন করেন।
টেকনাফ ডিঙিনৌকা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমদ বলেন, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ সদর ও বাহারছড়া এলাকায় এক হাজারের বেশি ডিঙিনৌকা আছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নৌকা রঙিন। রং করার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হলেও পর্যটকেরা এতে আনন্দ পান দেখে নৌকামালিকেরা খুশি।
বিকেল চারটার দিকে বৃষ্টি কিছুটা বাড়ে। এ সময় পর্যটকদের অনেককে দেখা যায় মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশের দোতলা আরহাম কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিতে। ভবনের দোতলায় বিচ ভিউ রেস্তোরাঁ। নিচে খাবার হোটেল—হারুন ভাতঘর-২ এবং ঝিনুক ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে লাগোয়া খাবারের উন্মুক্ত কয়েকটি দোকান। খোলা আকাশের নিচে বসানো রয়েছে কয়েক শ চেয়ার। পর্যটকেরা এসব চেয়ারে বসে সাগরের দৃশ্য উপভোগ করেন।
হারুন ভাতঘরে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল নিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমদ। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের শেষ প্রান্তটা বেশ আকর্ষণীয়। এমন নিরিবিলি পরিবেশ কক্সবাজারে আর নেই।’
হারুণ ভাতঘরের ব্যবস্থাপক আকিবুল ইসলাম বলেন, টেকনাফ সৈকত যাঁরা ভ্রমণে আসেন, বেশির ভাগই তাঁদের হোটেলে খেতে আসেন। ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করা টাটকা খাবার পর্যটকের খুবই পছন্দ। দামও তুলনামূলক কম নেন তাঁরা।
সৈকত ভ্রমণ শেষে টেকনাফ শহরে গিয়ে ‘মাথিন কূপ’, নাফ নদীর তীরের ‘নেটং পাহাড়’ দেখতে ছুটতে দেখা যান পর্যটকদের অনেকে। নেটং পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এবং নাফ নদীর বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ ‘জালিয়ার দিয়া’ দেখা যায়। জালিয়ার দিয়ার পাশে টেকনাফ স্থলবন্দর। তার কিছুটা উত্তরে বন বিভাগের ‘নেচার পার্ক’ এবং কয়েক শ বছরের পুরোনো ‘কুদুমগুহা’।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, টেকনাফ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বেশির ভাগই সকালে এসে সন্ধ্যার আগে কক্সবাজারে ফিরে যান। টেকনাফে রাতযাপনের জন্য সাতটি হোটেল ও পাঁচটি বাংলো আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় তৎপর থাকে।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটছে। গতকাল শনিবার বেলা একটা পর্যন্ত এর আগের তিন দিনে অন্তত আড়াই লাখ পর্যটক সৈকত ভ্রমণ করেছেন। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ সৈকতে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রঙ ন ন ক র ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে সৌদি পর্যটন সংস্থার অংশীদারত্ব ঘোষণা
বাংলাদেশের অন্যতম অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ এখন থেকে সৌদি আরবের সরকারি পর্যটন সংস্থা বা ‘সৌদি ট্যুরিজম অথরিটি’র গর্বিত অংশীদার। এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য সৌদি আরব ভ্রমণ হবে আরও সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিকল্পিত।
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ সৌদি আরব ভ্রমণ করেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য যান। অন্যদের ভ্রমণ হয় বিভিন্ন কাজ, ব্যবসা কিংবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য। এই বিপুলসংখ্যক ভ্রমণকারীর অভিজ্ঞতা আরও উন্নত ও ঝামেলামুক্ত করতেই মূলত ফ্লাইট এক্সপার্ট সরাসরি কাজ করবে সৌদি ট্যুরিজম অথরিটির সঙ্গে।
এই পার্টনারশিপের উদ্দেশ্য একটিই—বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য সৌদি ভ্রমণের প্রতিটি ধাপ, যেমন ভিসা প্রসেসিং, ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং, স্থানীয় বিভিন্ন পরিষেবা ইত্যাদি আরও সহজ, দ্রুত ও সুবিধাজনক করে তোলা। ভ্রমণের সময় যাত্রীরা যেসব সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন তথ্যের ঘাটতি, অতিরিক্ত খরচ, ভাষাগত জটিলতা ইত্যাদি এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
আর এখন থেকেই সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক পর্যটকেরা ফ্লাইট এক্সপার্টের ‘এক্সক্লুসিভ অফার’ ও ‘সুপার সেভার ডিলস’–এ ফ্লাইট ও হোটেল বুক করতে পারবেন, যা ভ্রমণকে করে তুলবে আরও সাশ্রয়ী ও ঝামেলামুক্ত।
এই পার্টনারশিপের অংশ হিসেবে ফ্লাইট এক্সপার্ট তাদের ওয়েবসাইটে দ্রুতই চালু করবে ‘সৌদি ট্যুরিজম’ নামের একটি বিশেষ সেকশন। যেখানে থাকবে সৌদি আরবের ধর্মীয় স্থান, সাংস্কৃতিক আয়োজন, কনসার্ট, ফেস্টিভ্যাল, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরসহ নানা অভিজ্ঞতার বিস্তারিত তথ্য ও আগাম বুকিংয়ের সুবিধা।
সৌদি ট্যুরিজম অথরিটি ও ফ্লাইট এক্সপার্ট যৌথভাবে কাজ করছে সৌদি ভ্রমণকে একটি সর্বজনীন অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরতে, যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি বা জাতিগত পরিচয় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। বর্তমানে সৌদি আরব আতিথেয়তা ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে বিশ্বের সব মানুষের জন্য তৈরি করেছে অফুরন্ত অভিজ্ঞতার সম্ভার।
ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম বলেন, ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের পর্যটকদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে সহজ, নির্ভরযোগ্য ও আনন্দদায়ক করে তোলা। সৌদি ট্যুরিজমের সঙ্গে এই পার্টনারশিপ আমাদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আজ সৌদি আরব শুধু একটি ধর্মীয় গন্তব্য নয়; বরং এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার কেন্দ্রস্থল।’
সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম আরও বলেন, ‘এই পার্টনারশিপ এমন একটি সময়ে হয়েছে, যখন সৌদি আরব আরও উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠছে। আমরা গর্বিত এই রূপান্তরের অংশ হতে পেরে এবং আশা করছি, বাংলাদেশের পর্যটকেরাও এই নতুন সৌদি–অভিজ্ঞতা উপভোগ করবেন।’
সৌদি আরবের ঐতিহাসিক নিদর্শন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক নগরব্যবস্থা থেকে শুরু করে রাজকীয় খাবার—সবকিছুই এখন উপভোগযোগ্য হবে ফ্লাইট এক্সপার্টের বিশেষ গাইডেন্স ও এক্সক্লুসিভ অফারে। পবিত্র মক্কা–মদিনায় ভ্রমণ হোক অথবা হোক আভা, রিয়াদ ও জেদ্দার মতো শহরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর—ফ্লাইট এক্সপার্ট দিচ্ছে ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট এবং নিরবচ্ছিন্ন ভ্রমণসেবা।
ফ্লাইট এক্সপার্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই পার্টনারশিপ শুধু একটি ট্রাভেল সার্ভিস নয়; বরং এটি হবে বাংলাদেশি পর্যটকদের সৌদি আরবের সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও সৌন্দর্যের সঙ্গে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত হওয়ার একটি অনন্য সুযোগ।