শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায় কনজেনিটাল বা জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম। গলার সামনে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নামে একটি হরমোন তৈরি হয়, যা আমাদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোনো কারণবশত যদি থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে থাইরয়েড হরমোন তৈরি বাধাপ্রাপ্ত হয় বা ঘাটতি হয়, তবে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়। রোগটি বড়দের যেমন হতে পারে, তেমনি দেখা দিতে পারে জন্মের পরপরই। নবজাতকের হাইপোথাইরয়েডিজম জন্মগতভাবে বা কনজেনিটাল হতে পারে, আবার জন্মের পর যেকোনো সময় হতে পারে।

কারণ কী

যদি জন্মগতভাবে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড অনুপস্থিত থাকে, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থাকলেও তা ছোট বা অপরিপক্ব থাকলে বা স্বাভাবিক অবস্থানে না থাকলে থাইরয়েড হরমোন তৈরির প্রক্রিয়ায় এনজাইমঘটিত কোনো সমস্যা, থাইরয়েড হরমোন পরিবহনে সমস্যা, আয়োডিনের স্বল্পতা নবজাতকের হাইপোথাইরয়েডিজমের জন্য দায়ী হতে পারে। গর্ভকালে মায়ের কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করলেও নবজাতকের হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।

রোগটি বড়দের যেমন হতে পারে, তেমনি দেখা দিতে পারে জন্মের পরপরই।লক্ষণ কী

একজন নবজাতক জন্মের পর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মল ত্যাগ করে থাকে, হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত নবজাতকের ক্ষেত্রে এটি দেরি হতে পারে। মাথার তালুর ফাঁকা অংশটি অনেক বড় থাকতে পারে। মাথার মাপ তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। শিশু কম কাঁদে, কাঁদলেও কান্নার আওয়াজ কর্কশ শোনায়। অতিরিক্ত ঘুম, খাবারে অনীহা, খসখসে ত্বক, জন্মের পর দীর্ঘমেয়াদি জন্ডিস, জিব বড় বা মুখের বাইরে দেখা যায়। হাত, পা ফোলা ফোলা হতে পারে।

পরীক্ষা

জন্মের পরপর অনেক সময় লক্ষণ নির্দিষ্টভাবে বোঝা যায় না। তাই লক্ষণ বিচার এবং রোগী পর্যবেক্ষণ করে সব সময় এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই নবজাতকের ইউনিভার্সাল স্ক্রিনিংয়ের কথা আজকাল বলা হয়। মানে সব নবজাতকের জন্মের পর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা জরুরি। মা গর্ভকালে থাইরয়েডজনিত কোনো সমস্যায় আক্রান্ত বা থাইরয়েডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ওষুধ খেয়ে থাকলে অবশ্যই সচেতনতা প্রয়োজন।

চিকিৎসা কী

নবজাতকের শরীরে থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করলে শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে। এই রোগে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিয়মিত হরমোন পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা কমানো বা বাড়ানো হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত নবজাতকের সময়মতো চিকিৎসা না করলে পরে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হতে পারে। তাই প্রতিটি শিশুরই জন্মের পর থাইরয়েড পরীক্ষা করা উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন ম র পর ড হরম ন থ ইরয় ড পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’

লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।

রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।

সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ