যখন টম ক্রুজকে দেখে লোকে বলত, ‘এই বাচ্চা ছেলেটা আবার কে?’
Published: 25th, May 2025 GMT
তখন আমি খুব ছোট। বয়স কত আর হবে, বড়জোর তিন। কখনো কখনো এমন হতো—খোলা জানালা দিয়ে চুপিচুপি হামাগুড়ি দিয়ে ছাদে চলে যেতাম। শুধু তারা দেখব বলে। দেখা যেত, প্রতিবেশীরা কেউ না কেউ মা-বাবাকে ফোন করে বলত, ‘তোমাদের ছাদে একটা বাচ্চাকে দেখলাম মনে হলো!’
অনেক সময় গাছ বেয়ে উঠে যেতাম। সবই আমার কাছে রোমাঞ্চকর ছিল। জীবনকে, মানুষকে বুঝতে চাইতাম।
অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত যখন নিই, তখন আমার বয়স চার বছর। ইচ্ছা ছিল সারা পৃথিবী ঘুরব। দুনিয়ার আনাচকানাচের মানুষ আর সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হব। জেট বিমানে চড়ব, প্যারাস্যুট নিয়ে বিমান থেকে লাফ দেব। আমার ধারণা, চার বছর বয়সে এ ধরনের স্বপ্ন সবাই–ই দেখে। কিন্তু আমি এসব সত্যিই মন থেকে চেয়েছিলাম। তাই নিজের লক্ষ্যগুলো লিখে রাখতাম। এমনকি মানুষকে বলতাম।
শুনে সবাই বলত, ‘বাচ্চা ছেলে, এসব কি কখনো হয়!’ তাই একসময় মানুষকে বলা বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু মনে মনে ওই সব স্বপ্নই আমার নানা সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হতো।
শুরুর দিকে চলচ্চিত্রে একটা-দুটো সংলাপ পেতাম। একসময় দেখলাম, ‘তৃতীয়-মূল চরিত্রের’ (থার্ড লিড) প্রস্তাবও পাচ্ছি। সে সময় বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, আমি তো কখনো ফিল্ম স্কুলে যাইনি। অভিনয়ের ক্লাস করিনি। যা কিছু শিখেছি, সবই সিনেমা দেখে, সিনেমার পর্যালোচনা করে।
আরও পড়ুন‘চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে দেখলাম এক বিস্ময়কর দৃশ্য’৩০ এপ্রিল ২০২৩মনে আছে, সেটে গেলে মনে হতো এই সুযোগ তো জীবনে আর না-ও আসতে পারে। তাই একে একে ফিল্ম ক্রুদের প্রত্যেকের কাছে যেতাম, হাজারটা প্রশ্ন করে জ্বালিয়ে মারতাম। সিনেমাটোগ্রাফার ওয়েন রোয়েজম্যান, প্রযোজক স্ট্যানলি জেফ, পরিচালক হ্যারল্ড বেকার, কাউকে ছাড়িনি। এভাবে ঘুরঘুর করতে করতেই এক রোববার সকালে আবিষ্কার করলাম, (অভিনেতা) জর্জ সি স্কটের সঙ্গে বসে দাবা খেলছি।
এমন নয় যে স্রেফ তাঁদের আশপাশে থাকতে চেয়েছি। বরং সত্যিই আমার খুব শেখার আগ্রহ ছিল। ক্রমাগত প্রশ্ন করতাম। সিনেমা নিয়ে পড়তাম। অভিনেতা, সিনেমাটোগ্রাফার, পরিচালক, সবাইকে নিয়ে পড়তাম। আর যখন তাঁদের কারও সঙ্গে দেখা হতো, সিনেমা ধরে ধরে নানা কিছু জানতে চাইতাম।
চার বছর বয়সেই তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন, অভিনেতা হবেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন
বরগুনায় গত বছরের (২০২৪) জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১২। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলায় চলতি বছরের ৯ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৪৬৩ জন। গত বছর এ সময়ে যত রোগী ছিল, এবার উপকূলীয় এ জেলায় সেই তুলনায় রোগী বেড়েছে ১৬ গুণের বেশি। দেশের মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের ২৫ ভাগ এখন এই এক জেলায়। বরগুনার ডেঙ্গুর বিস্তার দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
জেলার এ পরিস্থিতিকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের’ সঙ্গে তুলনা করলেন বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দক্ষিণের এই জনপদে ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছর হয়। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকে আমরা আবহাওয়ার বার্তা পাই। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। প্রস্তুতির কারণে জানমালের ক্ষতি কমে। কিন্তু এবার এই ডেঙ্গুর ঘূর্ণিঝড় এল আগাম বার্তা ছাড়া। আমাদের একেবারে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে।’
বরগুনায় এবার ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার কি একেবারে আকস্মিক ঘটনা? তথ্য–উপাত্ত এমন কথা বলে না। গত বছর বরগুনায় ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪৩৪ জন। দেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলা ছিল বরগুনা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে সর্বোচ্চ সংক্রমণের এলাকা ছিল কক্সবাজার। এটিও উপকূলের একটি জেলা। উপকূলের জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু বাড়ছে। দেশের অন্য জনপদের তুলনায় উপকূলের জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি—এটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।
দক্ষিণের এই জনপদে ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছর হয়। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকে আমরা আবহাওয়ার বার্তা পাই। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। প্রস্তুতির কারণে জানমালের ক্ষতি কমে। কিন্তু এবার এই ডেঙ্গুর ঘূর্ণিঝড় এল আগাম বার্তা ছাড়া। আমাদের একেবারে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে।বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহউষ্ণায়ন, লবণাক্ততার বিস্তার, বৃষ্টিপাতের হেরফের, তাপমাত্রার পরিবর্তন—এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু উপকূলই নয়, পুরো বাংলাদেশের সর্বত্র ডেঙ্গুর বিস্তারের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক উঠে এসেছে নানা গবেষণায়। জলবায়ুর পরিবর্তনের পাশাপাশি অবশ্য অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
এসব কারণে এবার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। গত জুন মাসে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরগুনায় এডিস মশার জরিপ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, বরগুনা পৌর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এডিস মশার লার্ভা বা শূককীটের উপস্থিতি দ্বিগুণের বেশি। ওই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, ঘরে ঘরে এখন এডিস ছড়িয়ে পড়েছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে অভিভাবক