মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর বিচারক মঞ্জুরুল হোসেন আজ রোববার এই রায় দেন। রায় ঘোষণার পর পলাতক পাপিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

পাপিয়ার আইনজীবী সাখাওয়াত উল্লাহ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, একই মামলায় খালাস পেয়েছেন পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী এবং পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তাইবা নূর ও জুবায়ের আলম।

আরও পড়ুনজামিনে মুক্তি পেলেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়া২৪ জুন ২০২৪

এর আগে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার পাঁচ তারকা একটি হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন পাপিয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে আঁচ পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এরপর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পাপিয়ার বুকিং দেওয়া বিলাসবহুল স্যুট ও ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২০টি গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার নগদ টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা ও এটিএম কার্ড জব্দ করেছিল র‍্যাব।

আরও পড়ুনপাপিয়া আবিষ্কার-কাহিনি২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

র‍্যাব জানায়, পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর মালিকানায় রাজধানীর ইন্দিরা রোডে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে দুটি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা দামের দুটি প্লট, তেজগাঁওয়ে এফডিসি ফটকের কাছে গাড়ির শোরুমে ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ, নরসিংদী জেলায় কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন নামে প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করে র‍্যাব। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে পাপিয়া ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে। গত বছরের জুনে জামিনে ছাড়া পান পাপিয়া।

আরও পড়ুনকারাগারেও অপরাধে সেই পাপিয়া২০ জুলাই ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চার রোহিঙ্গা খুনের মামলায় আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কক্সবাজারের একটি আদালত।

আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আসাফ উদ্দিন আসিফ উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে সংগঠিত চার রোহিঙ্গা খুনের মামলার শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. গোলাম জিলানী প্রথম আলোকে তিন দিনের রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলিতে চারজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছিল। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আরাসা প্রধান আতাউল্লাহ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে আরাসাপ্রধানকে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। বেলা দুইটার দিকে আদালত থেকে আবার কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আজ বিকেল থেকে আতাউল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে অবশিষ্ট মামলায় পুনরায় রিমান্ড চাওয়া হবে। আতাউল্লাহর বিরুদ্ধে উখিয়া থানাতে তিনটি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি থানাতে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।

পুলিশ ও আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে চারজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছিল। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির তদন্তে রয়েছে।

পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ১৮ মার্চ রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে তারা গোপন বৈঠক করছিলেন।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আতাউল্লাহসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথম দফায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর বান্দরবানসহ বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলায় আতাউল্লাহকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কক্সবাজারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তাকে কক্সবাজার আনা হয়।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৮ সালের দিকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণে নেয় আরসা। তখন আরসাকে ঠেকাতে মাঠে নামে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন ( আরআরএসও)। তখন রোহিঙ্গাদের নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহর সঙ্গে বিরোধে জড়ায় আরসা। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। এই মামলায় আতাউল্লাহকে আসামি করা হয়। এক মাস পর উখিয়ার আরেকটি আশ্রয়শিবিরে ছয়জন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে আরসা। সে মামলার আসামি আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। এই মামলাতেও আসামি আরসার প্রধান।

সীমান্তের একাধিক সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়ায় আতাউল্লাহর বাড়ি। ১৯৬০ সালের দিকে তাঁর বাবা পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানেই জন্ম আতাউল্লাহর। তিনি পড়াশোনা করেন সৌদি আরবের মক্কায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরসাপ্রধান আতাউল্লাহর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  • চার রোহিঙ্গা খুনের মামলায় আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর