বিছানায় শুতে গেলে দম বন্ধ হয়ে যায়, বুক চেপে আসে ও হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়! এমনটা কারও কারও হয়। সারা দিন তেমন কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু রাতে বিছানায় মাথা দিলেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা। কেন এমন হয়?
রাতে শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণ ১. হৃদ্যন্ত্রের জটিলতা (হার্ট ফেইলিউর): হৃদ্যন্ত্রের জটিলতা রাতে শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। হৃদ্যন্ত্র পর্যাপ্ত কর্মক্ষম না হলে শরীরে যথাযথ পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত করতে পারে না; এ কারণে রাতে শোয়ার পর ফুসফুসে কিছু তরল জমা হতে পারে। এটিও শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ। হার্ট ফেইলিউরের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট ও কাশির সঙ্গে পা ফোলাও থাকতে পারে।
২.
৩. স্লিপ অ্যাপনিয়া: বর্তমান বিশ্বে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। শারীরিক স্থূলতার সঙ্গে এই রোগ সম্পর্কিত। ঘুমের সময় বারবার শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যাতে করে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। তাই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়, ঘুমও বারবার ভেঙে যায়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার উপসর্গ হলো উচ্চ স্বরে নাক ডাকার প্রবণতা, সারা দিন ঘুম ঘুম ভাব, সকালে মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা।আরও পড়ুনসিঁড়ি বেয়ে উঠতে আপনারও শ্বাসকষ্ট হয়? কারণ ও প্রতিকার জানুন০৩ এপ্রিল ২০২৫
৪. অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): অ্যাসিডিটি হতে পারে রাতে শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে খাদ্যনালি থেকে অ্যাসিড উঠে আসে, যা আমাদের শ্বাসনালিকে প্রভাবিত করে। এতে রাতে শোবার পরপরই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি রোগীর আরও উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন পেটে জ্বালাপোড়া, পেটে ফাঁপা ভাব, অতিরিক্ত ঢেকুর।
৫. স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজনের কারণে ফুসফুসের ওপর চাপ পড়ে। শুয়ে থাকার সময় এই চাপ আরও বেড়ে গিয়ে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয়।
৬. আবহাওয়া ও অ্যালার্জি: ঘরে থাকা ধুলা, পশুর লোম, ফুলের রেণু, ঠান্ডা আবহাওয়া বা কোনো অ্যালার্জেন রাতে ফুসফুসের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে শ্বাসকষ্ট তৈরি করতে পারে।
৭. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ডিপ্রেশন, আ্যাংজাইটির কারণেও রাতে শ্বাসকষ্টের মতো অনুভূতি হতে পারে।
ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন: চিত হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে শোয়া বা মাথার দিকটা একটু উঁচু করে শোয়া শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে বা বিছানার মাথার দিকটা কিছুটা উঁচু করে এই অবস্থান তৈরি করা যায়। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা এভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ঘরের পরিবেশ: শোয়ার ঘর ধুলাবালু মুক্ত রাখুন। নিয়মিত বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিষ্কার করুন। কার্পেট বা ভারী পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ, এগুলোতে ধুলা জমে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে হাঁপানির সমস্যা আছে যাঁদের, তাঁদের পদক্ষেপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা: যদি কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তবে সেই অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
ধূমপান পরিহার: ধূমপান শ্বাসনালির জন্য ক্ষতিকর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: রাতের খাবার হালকা হওয়া উচিত এবং ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত তেল–মসলাযুক্ত খাবার বা অ্যাসিডিক খাবার রাতে এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে ঘুমের ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। সুষম আহার ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
মানসিক চাপ কমানো: যোগ, মেডিটেশন বা পছন্দের শখের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে বা ভালো বই পড়লে মন শান্ত হয়।
রোগ নিয়ন্ত্রণ: যদি অ্যাজমা, হার্ট ফেইলিউর বা অন্য কোনো রোগের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও নিয়মিত ফলোআপে থাকা প্রয়োজন।
রাতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। এটি গুরুতর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই এই সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ওপরে দেওয়া জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করে সুস্থ থাকুন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ব সকষ ট র সমস য শ ব সকষ ট র স ই শ ব সকষ ট র র পর
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার চলছে ধনীদের ব্যয়ে, অন্যদের খরচ বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে
যুক্তরাষ্ট্রের ভোগব্যয় বৃদ্ধিতে অসম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ধনীদের ব্যয় যে হারে বাড়ছে, অন্যদের ব্যয় সে হারে বাড়ছে না। ফলে সমাজে যেমন ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি অর্থনীতিতেও ভারসাম্য সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মহামারির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে ভোগব্যয় বেড়েছে, তার প্রায় পুরোটাই করেছে ধনিক শ্রেণি। অন্যদিকে নিচের ৮০ শতাংশ আমেরিকান কেবল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবন যাপন করছে। খবর ফরচুন ম্যাগাজিন।
মুডিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সতর্ক করেছেন, দেশটির অর্থনীতি এখন ক্রমেই ‘ধনীদের আয় ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে।’ ধনীদের সম্পদ দ্রুত বাড়লেও চাকরির বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রবৃদ্ধি দুর্বল। সেই সঙ্গে পণ্যের দামও বেশি থাকায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না।
জান্ডি লিখেছেন, অনেক আমেরিকান মনে করেন, অর্থনীতি তাঁদের জন্য কাজ করছে না—এটাই সত্যি। তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মহামারির পর থেকে দেশের নিচের সারির ৮০ শতাংশ মানুষ কেবল মূল্যস্ফীতির সমান হারে খরচ বৃদ্ধি করেছে, অর্থাৎ তাদের ব্যয়ের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি নেই। অথচ আয়ের শীর্ষ ২০ শতাংশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ব্যয়বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
ফেডারেল রিজার্ভের ভোক্তা জরিপ ও আর্থিক হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে মুডিস দেখিয়েছে, ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে ধনী ও মধ্যবিত্ত–নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আয়ের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছে।
তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কেন সাধারণ আমেরিকানরা মনে করেন, এই অর্থনীতি তাঁদের জন্য নয়। যাঁদের বার্ষিক আয় প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলারের নিচে, তাঁরা শুধু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খরচ বাড়াতে পেরেছেন। কিন্তু ওপরের ২০ শতাংশ, বিশেষ করে শীর্ষ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ, অনেক লাভবান হয়েছেন।
১৯৯৯ সালের শেষ প্রান্তিককে ভিত্তি ধরে মুডিস ব্যয়ের সূচক তৈরি করেছে। ওই সময়ের ভিত্তিমানকে ১০০ ধরা হলে এখন শীর্ষ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ আমেরিকানের ব্যয় সূচক প্রায় ১৭০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ব্যয় সূচক প্রায় ১২০ পয়েন্ট—অর্থাৎ মূলত মূল্যস্ফীতির সমান। অর্থাৎ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখন এক ক্ষুদ্র, ধনী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
জান্ডির ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন অনেকটাই ধনীদের খরচের ওপর টিকে আছে। যতক্ষণ তারা ব্যয় করছে, মন্দার আশঙ্কা কম। কিন্তু তারা যদি হঠাৎ সতর্ক হয়ে যায়, তাহলে বড় বিপদ হতে পারে।
ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেফেডারেল রিজার্ভের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা আরও দ্রুতহারে সম্পদশালী হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪ ট্রিলিয়ন বা চার লাখ কোটি ডলার; আগের বছরের ৩ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৮৪ হাজার কোটি ডলার থেকে যা সামান্য বেড়েছে। মধ্যবিত্ত (৫০ থেকে ৯০ শতাংশ) শ্রেণির সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন বা ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার কোটি ডলার—গত বছর যা ছিল ৪৭ লাখ ০২ হাজার কোটি ডলার।
শীর্ষ ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। শীর্ষ ১০ শতাংশ শ্রেণির সম্পদ ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ থেকে ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ ২৭ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শ্রেণির হাতে আছে ২২ লাখ ১৯ হাজার কোটি ডলার—দেশটির নিচের সারির অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সম্পদের পাঁচ গুণেরও বেশি। শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শ্রেণির সম্পদ আরও বাড়ছে।
ফোর্বসের হিসাব বলছে, এখন বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি—এক বছর আগের তুলনায় আরও ২০০ জন বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ধনী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের হাতে এখন দেশটির মোট পারিবারিক সম্পদের ১৪ শতাংশ, কয়েক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তাদের বিলাস্য–ব্যসনও বাড়ছে, যদিও দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদে বলা হয়েছে, তার ধরন বদলে গেছে।
খুচরা বিক্রি এখনো শক্ত অবস্থানেযুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের গতি মন্থর। মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও ভোক্তারা এখনো খরচ কমায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের তথ্যানুসারে, আগস্ট মাসে খুচরা বিক্রি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে—এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। সেপ্টেম্বর মাসেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, চাকরির বাজার কিছুটা দুর্বল হলেও স্কুল খোলার মৌসুমে খরচ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যখন আর উপায়ান্তর থাকবে না, তখনই মার্কিনরা খরচের লাগাম টানবে, তার আগে নয়।
বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা হলো, সাম্প্রতিক তিন মাসে ব্যয়ের বড় অংশ এসেছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে, প্রকৃত ক্রয় থেকে নয়। তাঁরা আরও বলেন, সাম্প্রতিক চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় আগেভাগে কেনাকাটার প্রবণতাও কাজ করেছে—অক্টোবরে তা কমে যেতে পারে।