অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে হাল ছেড়ে না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। আজ রোববার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি যে যেকোনো অবস্থাতেই পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, তিনি যেন হাল ছেড়ে না দেন।’

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন যে আমরা যদি সকলে তাঁকে সহযোগিতা করি, তাহলে তিনি চলমান এই সংস্কারপ্রক্রিয়া একটি পর্যায়ে নিয়ে দেশ এবং জাতিকে একটি গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েই তিনি তাঁর দায়িত্ব ক্ষ্যান্ত করবেন। একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন জাতিকে তিনি উপহার দিতে চান।’

সরকারের মেয়াদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে মামুনুল হক বলেন, নির্বাচনের জন্য তিনি তাঁর সর্বোচ্চ যে সময়সীমা বলিষ্ঠভাবে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, কমিটমেন্ট করেছেন যে ২০২৬ সালের জুনের পরে এক ঘণ্টাও তিনি আর ক্ষমতায় অবস্থান করবেন না, ক্ষমতায় থাকবেন না।

প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থা রাখার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছি যে এই সকল বিষয়ে, বিশেষ করে করিডর ইস্যুতে, বন্দর ইস্যুতে, আন্তর্জাতিক যেই ইস্যুগুলো রয়েছে, সেখানে যেন সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে।’

হেফাজতে ইসলামের মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিজে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে তিনি এই বিষয়ে সরাসরি তদারক করবেন এবং আশ্বস্ত করেছেন যে এবার আর এই টাইমের বাইরে যাবে না। এর মধ্যেই ইনশা আল্লাহ এ মামলাগুলোর বিষয়ে আমরা একটি বিহিত পাব।’

নারী সংস্কার কমিশন বিষয়েও নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বলে জানান মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘সেই বিষয়েও তাঁরা আমাদেরকে ইতিবাচক কথাই বলেছেন এবং আমরা এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আশ্বস্ত যে বিতর্কিত কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো নীতি, কোনো আইন বাংলাদেশে তাঁরা কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ নেবেন না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন য

এছাড়াও পড়ুন:

জটিলতা সৃষ্টি করে মান-অভিমান, এটা গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, সরকার সেই কাজের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে তারপর মান–অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য কাজ না।

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথাগুলো বলেন। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

অন্তর্বর্তী সরকার অস্থায়ী উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের স্থায়ী কোনো ‘ম্যান্ডেট’ নেই। এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না। তাই তার পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব না। তবে সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু কিছু পরিবর্তনের গতিমুখ তৈরি করতে পারে।

মানুষ পরিশ্রম করছে, সম্পদ তৈরি হচ্ছে, ফলে টাকাপয়সার অভাব নেই উল্লেখ করে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, সম্পদের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পর। সরকারের এটা প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার। সেই অঙ্গীকারের দিকে না গিয়ে বিদেশি কোম্পানি, বিদেশি বিনিয়োগ, স্টারলিংক, এলএনজি আমদানি—এসব দিকে মনোযোগ দেওয়া তো এই সরকারের দায়িত্ব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা, কৃষি–শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা এবং জনগণের জন্য পরিবেশবান্ধব যে পথ, সেই পথটাই যাতে শক্তিশালী হয়, সেটার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। সরকার সেই কাজটা করবে। সেই কাজের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে, তারপর মান–অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য পথ না।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা না করে, ধরেন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা এমনভাবে ঘোষণা করলেন এটা দিতেই হবে, যেকোনো মূল্যে দিতে হবে। হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি) এর নতুন নাম দিয়েছে ত্রাণ চ্যানেল। দুটির ঘটনা তো একই। এগুলো করতে হবে। কিংবা স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে জাতীয় সক্ষমতার বিকল্প হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব দুর্বলতা আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব আছে—সেগুলো দূর করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় তৎপরতা বাড়াতে পারত। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার জন্য পাঠাতে পারত। চট্টগ্রাম বন্দরে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো হলে সেটার স্থায়ী ও স্থিতিশীল প্রভাব ভবিষ্যতের জন্য থাকত।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টা হতাশ–ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা১৫ ঘণ্টা আগে

বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বিডার চেয়ারম্যান হঠাৎ করে এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি করে এলেন। পেট্রোবাংলা জানে না। এটা তো হওয়ার কথা না। দেশের দরকার ছিল গ্যাস উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। সেটার জন্য গত ৯ মাসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সামনের বাজেটে এই জিনিসগুলো থাকতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগত অবস্থানের একটা পরিবর্তন করতে হবে। সেটা হলে সস্তায় গ্যাস, বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আমদানির জন্য এত ব্যয়, ভর্তুকি দিতে হবে না।

সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামে রেলওয়ের যেসব ওয়ার্কশপ ছিল, সেগুলোর জনবল কমানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ওয়ার্কশপের সক্ষমতা কমিয়ে রেলের ইঞ্জিন, বগি, ওয়াগন—সবকিছু আমদানি করা হয়েছে। অথচ ওয়ার্কশপ শক্তিশালী করা হলে বাংলাদেশে বগি, ইঞ্জিন—সবই নির্মাণ করা সম্ভব হতো।

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় (বাঁ থেকে) ড. হারুন উর রশীদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও মোশাহিদা সুলতানা। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে দাঁতভাঙা জবাব’
  • আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ‘অগ্রহণযোগ্য’, কেন খেপলেন প্রীতি জিনতা
  • গণমাধ্যমকর্মীকে নিজস্ব মতামত প্রচার বর্জন করতে হবে: প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান
  • জটিলতা সৃষ্টি করে মান-অভিমান, এটা গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ