নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নামে শ্রম আইনে করা পাঁচ মামলার কার্যক্রম বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ আদেশ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

মামলার ঘটনা ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, হাইকোর্টের রায় ও আদেশে কোনো আইনি দুর্বলতা এবং আইনিভাবে হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে অনুসারে মেরিট (যোগ্যতা) বর্জিত হিসেবে লিভ টু আপিলগুলো খারিজ করা হলো।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলগুলো খারিজ করে আপিল বিভাগ গত ৮ ডিসেম্বর আদেশ দেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো.

আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ ওই আদেশ দেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশ গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর ভাষ্যমতে, অধ্যাপক ইউনূসের নামে যখন শ্রম আদালতে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়, তখন তিনি গ্রামীণ টেলিকমিউনিকেশনসের চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়ন ঘিরে কর্মীর চাকরিচ্যুতির অভিযোগ তুলে ২০১৯ সালে মামলাগুলো করা হয়। মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেন অধ্যাপক ইউনূস।

মামলার কার্যক্রম বাতিলের পক্ষে আবেদনকারীপক্ষের যুক্তি ছিল, প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়নের আবেদনপত্র ইতিমধ্যে শ্রম অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সুতরাং এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই যে প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার কারণে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়। তাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ছিল, চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে শ্রম অধিদপ্তরকে মামলা করতে হয়। তাঁরা শ্রম অধিদপ্তরের কাছে নালিশ করেছিলেন বটে। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তর এ ধরনের কোনো মামলা করেনি।

মামলা বাতিল চেয়ে করা পৃথক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে রুলসহ আদেশ দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন। ফলে মামলাগুলোর কার্যক্রম বাতিল ঘোষিত হয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক পাঁচটি লিভ টু আপিল করে। শুনানি নিয়ে লিভ টু আপিলগুলো খারিজ করে গত ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক এবং অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানিতে ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে অধ্যাপক ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমিউনিকেশনের তৎকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো থাকল না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে মারধর, অপহরণচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আজ রোববার বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে এ মামলায় তুরিনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।

শুনানিতে আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ আজ অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তুরিন আফরোজকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের উদ্দেশে হাজতখানা থেকে বের করা হয়। এ সময় তাঁর দুই পাশে দুই হাত ধরে রাখেন পুলিশের নারী সদস্যরা। সামনে ও পেছনে ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য। নবম তলার ৩২ নম্বর আদালতে তোলার সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। আদালতের কাঠগড়ায় তোলার সময় তাঁর মাথার হেলমেট খুলে রাখা হয়। বিচারের জন্য অপেক্ষাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

পরে জানানো হয়, ৩৩ নম্বর আদালতে শুনানি হবে। আবারও হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে ৩৩ নম্বর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী হাসিখুশির কারণ জানতে চেয়ে দূর থেকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে আদালতে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।

পরে বিচারকের অনুমতি নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ ২০২২ সালের। অভিযোগ আনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন বছর পর কীভাবে তিনি প্রভাব খাটাবেন? তখন তো তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতাই নেই।

আইনজীবী বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ, জামিন পেলে পলাতক হবেন না। যেকোনো শর্তে তাঁর জামিন আবেদন করছি।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, তুরিন আফরোজ বাদীর কাছ থেকে ৭৮ লাখ টাকায় দুটি বাস কিনেছেন। কিন্তু সব টাকা পরিশোধ না করে বাস নিয়ে যান। বাকি টাকা চাইতে গেলে তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রভাব খাটিয়ে বাদীকে হুমকি দেন এবং বাদীর বাসায় গিয়ে ভাঙচুরের পর তাঁর মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা করেন।

শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই দুটি বাস কেনার জন্য বাদীর সঙ্গে ৭৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন আসামি তুরিন আফরোজ। এরপর আসামি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকা ২৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে বাস দুটি নিয়ে যান। পরে আসামি কোনো কিস্তির টাকা পরিশোধ না করে বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং মারধর করে পেশার প্রভাব দেখান।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাদী আসামির কাছে আবার টাকা চাইলে আসামির নির্দেশে ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতানামা সন্ত্রাসী বাদীর বাসায় গিয়ে বাদীকে অস্ত্রের মুখে মারধর করেন এবং বাদীর সাত বছরের কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ওই সময় বাদী ৯৯৯–এ কল দিলে পুলিশের উপস্থিতিতে বাদীর কন্যাসন্তানকে বাসার বাইরে রেখে যান।

ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল নাবিশা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আলম নাহিদ বাদী হয়ে অপহরণচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন।

গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এর পর থেকে তিনি কারাগারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন তুরিন আফরোজ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৩তম বিসিএসের ৮৫০১ নন–ক্যাডার পদ সংরক্ষণের নির্দেশ হাইকোর্টের
  • নিরাপত্তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে
  • গুমের মামলায় শুধু সেনা কর্মকর্তাদের আসামি করা নিয়ে প্রশ্ন তাঁদের আইনজীবীর
  • হাদিকে জড়িয়ে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেরর অভিযোগে মামলার আবেদন
  • ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • টিএফআই সেলে গুমের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ ২১ ডিসেম্বর
  • ইরানে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গ্রেপ্তার