সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক কারাগারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে আদালতের কাছে অভিযোগ করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে মো. শামীম নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।

এ মামলায় সালমান এফ রহমান এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক মো.

ওমর ফারুক। শুনানিকালে তাদের এজলাসে তোলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। 

জুনাইদ আহমেদ পলকের আইনজীবী বলেন, “আড়াই মাস ধরে পলককে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বৈষম্যের শিকার। তাকে অন্তত পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেওয়ার অনুরোধ করছি।”

এ সময় জুনাইদ আহমেদ পলক আদালতকে বলেন, “আমি কারাগারে বৈষম্যের শিকার।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ আসামি পলক। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে এখন ফোনে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। ফোনে কথা বলতে দিলে তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে পারেন। তাই, তাকে ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।”

শুনানি শেষে আদালত জুনাইদ আহমেদ পলকের কারাগারে ফোনে কথা বলার আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আদালত থেকে নামার সময় জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে কারাগারে কথা বলতে দেওয়া হয় না। ১০ মিনিটও কথা বলতে দেয় না। আমি কারাগারে বৈষম্যের শিকার। মানুষের যে মৌলিক অধিকার আছে, সেটা আমার ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।”

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ নয় জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। 

অন্যরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক এমপি হাজী সেলিম ও তার ছেলে সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক এডিসি জুয়েল রানা এবং গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর রাজধানীর পৃথক পৃথক থানার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কর্মকর্তারা। 

রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী উল্লিখিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

মামলাগুলোর মধ্যে রাজধানীর আদাবর থানার হত্যা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি হাজী সেলিম ও ফারুক খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। নিউমার্কেট থানার হত্যাচেষ্টার মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলক ও ডিএমপির সাবেক এডিসি জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

কোতোয়ালি থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিমকে, গুলশান থানার হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে এবং হাতিরঝিল থানার হত্যা মামলায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রউফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ঢাকা/মামুন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ক এমপ র আইনজ ব ন কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি ১৬ জুলাই

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানির জন্য ১৬ জুলাই দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মঙ্গলবার শুনানির জন্য এই দিন রাখেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত ডিসেম্বরে রিট করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। এই লিভ টু আপিলে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি) মঞ্জুর করার প্রার্থনা রয়েছে। লিভ টু আপিলটি গত ১১ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। লিভ টু আপিলটি মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৯৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

লিভ টু আপিলের বিষয়টি সকালে আদালতে উত্থাপন করেন বলে জানান লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ১৬ জুলাই কার্যতালিকার শীর্ষ বিষয়টি থাকবে বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের’ বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।’

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের (১/২৪) পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়। মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশালে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
  • নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে রুল শুনানি মুলতবি
  • চানখাঁরপুলের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ১৪ জুলাই
  • ‘সাংবাদিক নির্যাতন-বাকস্বাধীনতা হরণের’ নিন্দা জানালেন ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক-অধিকারকর্মী
  • ‘সাংবাদিক নির্যাতন-বাকস্বাধীনতা হরণের’ নিন্দা জানাল ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক-অধিকারকর্মী
  • বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণ: আপিলের শর্তে জামিন পেলেন আইনজীবী
  • সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জামিন নামঞ্জুর
  • আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক সিইসি নূরুল হুদা। ফাইল ছবি: সমকাল
  • হাসিনার আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন ৭ জুলাই
  • রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি ১৬ জুলাই