‘আমি কারাগারে বৈষম্যের শিকার’, আদালতে পলকের অভিযোগ
Published: 15th, January 2025 GMT
সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক কারাগারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে আদালতের কাছে অভিযোগ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে মো. শামীম নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এ মামলায় সালমান এফ রহমান এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক মো.
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
জুনাইদ আহমেদ পলকের আইনজীবী বলেন, “আড়াই মাস ধরে পলককে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বৈষম্যের শিকার। তাকে অন্তত পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেওয়ার অনুরোধ করছি।”
এ সময় জুনাইদ আহমেদ পলক আদালতকে বলেন, “আমি কারাগারে বৈষম্যের শিকার।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ আসামি পলক। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে এখন ফোনে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। ফোনে কথা বলতে দিলে তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে পারেন। তাই, তাকে ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।”
শুনানি শেষে আদালত জুনাইদ আহমেদ পলকের কারাগারে ফোনে কথা বলার আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আদালত থেকে নামার সময় জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে কারাগারে কথা বলতে দেওয়া হয় না। ১০ মিনিটও কথা বলতে দেয় না। আমি কারাগারে বৈষম্যের শিকার। মানুষের যে মৌলিক অধিকার আছে, সেটা আমার ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।”
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ নয় জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
অন্যরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক এমপি হাজী সেলিম ও তার ছেলে সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক এডিসি জুয়েল রানা এবং গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর রাজধানীর পৃথক পৃথক থানার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কর্মকর্তারা।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী উল্লিখিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলাগুলোর মধ্যে রাজধানীর আদাবর থানার হত্যা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি হাজী সেলিম ও ফারুক খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। নিউমার্কেট থানার হত্যাচেষ্টার মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলক ও ডিএমপির সাবেক এডিসি জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কোতোয়ালি থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিমকে, গুলশান থানার হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে এবং হাতিরঝিল থানার হত্যা মামলায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রউফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ঢাকা/মামুন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ক এমপ র আইনজ ব ন কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী: তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ‘যথাযথভাবে পুনর্বহাল হয়নি’, লিভ টু আপিল মঞ্জুরের আরজি
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যথাযথভাবে পুনর্বহাল হয়নি।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তির করা লিভ টু আপিলের শুনানিতে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার প্রথম দিনের মতো শুনানি নেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।
চার বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও রিদুয়ানুল করিম। শুনানিতে শরীফ ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্টে পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট তার অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করেছেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা–সংক্রান্ত মূল বিধান ফিরে এসেছে। তবে আইনের আরও কিছু বিধান রয়েছে, যে কারণে যথাযথভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়নি।
কোন বিষয়গুলো পুনর্বহাল হয়েছে এবং কোনগুলো হয়নি—এসব দিক শুনানিতে তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ সংশোধনী আনা হয়। এ ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে পৃথক রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি আবেদন করেন।
সেই আবেদনে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয় রায়ে। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল করেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি লিভ টু আপিল করেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার একটি লিভ টু আপিল করেন। লিভ টু আপিলগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠার পর আজ শুনানি শুরু হলো।
আরও পড়ুনপঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল০৩ নভেম্বর ২০২৫