প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ: রাজশাহীর সাবেক এমপি কালামের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 22nd, January 2025 GMT
রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করেন কমিশনের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন। আবুল কালাম আজাদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপি ছিলেন। এর আগে তিনি তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন– রাজশাহীর পবা থানার সমসাদীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ঠিকাদার খালেদ মোহাম্মদ সেলিম, তাহেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের ও তাহেরপুর পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল হক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য তাহেরপুর পৌর এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ ও শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলেছে। কিন্তু আসামিরা কাজ যথাযথভাবে না করে, প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে দেখিয়ে ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা পাঁচ মামলায় গত ৩ অক্টোবর সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর পর থেকে আদালতের আদেশে তিনি কারাগারে আছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম করে শ্রমিক থেকে প্রকৌশলী হওয়ার সত্যতা পেল দুদক
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনকে নিয়ম ভঙ্গ করে উপসহকারী প্রকৌশলী, কর আদায়কারী, সড়ক তদারককারী, অনুমতিপত্র পরিদর্শক, হিসাব সহকারী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সত্যতা পেয়েছে দুদক। আজ সোমবার বিকেলে চসিক কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এর একটি দল।
এতে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের অবৈধভাবে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতিসংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
এর আগে গত ৪ জুলাই প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘শ্রমিক থেকে “এক লাফে” প্রকৌশলী, কর আদায়কারী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দুই বছরে, যখন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী; মূলত তখনই পদোন্নতি নিয়ে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।
মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেন এবং গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট তাঁকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁর শেষ দুই বছরে নিয়োগ পাওয়া ১৮৮ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে চসিক। সেই তালিকায় দেখা গেছে, শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েই এক লাফে উচ্চ গ্রেডের পদে পদায়ন করা হয়েছে অন্তত ৬৪ জনকে। চসিকের জনবলকাঠামো অনুযায়ী, শ্রমিক পদ ২০তম গ্রেডের। কিন্তু সেখান থেকে ১০ম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলী, ১৬তম গ্রেডের কর আদায়কারী বা অনুমতিপত্র পরিদর্শক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ ধরনের পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
চসিকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তখনকার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কিছু কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাদের সুপারিশেই এসব নিয়োগ হয়েছিল। ঘনিষ্ঠদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাঁদের পদায়ন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। নিয়োগ ও পদোন্নতির এই প্রক্রিয়ায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা।
শ্রমিক থেকে ‘প্রকৌশলী’মো. রোকনুজ্জামান শ্রমিক পদে যোগদান করেছিলেন ২০২৩ সালের ১৮ জুন। যোগদানের দিনেই তাঁকে সাগরিকা টেস্টিং ল্যাবের ল্যাব ইনচার্জ (উপসহকারী প্রকৌশলী) হিসেবে পদায়ন করা হয়। রোকনুজ্জামান পুরকৌশলে ডিপ্লোমা করেছেন। পরে একই বিষয়ে স্নাতক করেন।
রশিদ আহমেদ নামের আরেকজন নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। যোগদানের ১৯ দিনের মাথায় তাঁকে বিদ্যুৎ শাখায় উপসহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। তিনি ডিপ্লোমা করেছেন।
এইচএসসি পাস করা জাহেদুল আহসান গত বছরের ৩১ জানুয়ারি শ্রমিক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার ১৭ দিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে উপসহকারী প্রকৌশলী করা হয়। নিয়োগের ১৪ দিনের মাথায় শ্রমিক থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী হয়েছেন এস এম রাফিউল হক মনিরীও।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্মচারী বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে দুভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। একটি হচ্ছে সরাসরি ও অন্যটি পদোন্নতির মাধ্যমে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৮০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। পদোন্নতির পেতে প্রার্থীকে সড়ক তদারককারী বা বাতি পর্যবেক্ষক পদে ১২ বছর চাকরি করতে হবে। কিন্তু এই চারজনের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটিই মানা হয়নি বলে জানান সিটি করপোরেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদক যেসব নথিপত্র চেয়েছে, আমরা সেসব সরবরাহ করেছি। আরও কিছু নথিপত্র আগামীকাল দেব।’