র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
Published: 6th, February 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী শাহনূর আলীকে ১০ বছর আগে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগকে র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেন লিয়নের বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালতে ব্যবসায়ীর পরিবারের পক্ষে করা আবেদনের শুনানি করেন ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১০ বছর আগে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রুলটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালত রায় দিয়েছেন। ফলে শাহনূর আলম হত্যার অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণে কোনো বাধা নেই।
মামলার বিবরণে জানা যায়, র্যাব-১৪-এর ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৪ সালের ১ জুন একটি নালিশি আবেদন করেন শাহনূরের ভাই মেহেদি হাসান।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল শাহনূরকে র্যাব-১৪-এর সদস্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরে ৬ মে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আদালত শাহনূরের মৃত্যুর অভিযোগের আবেদন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করে অভিযুক্ত এক র্যাব।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বাতিল করে নবীনগর থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন শাহনূরের ভাই। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য়
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলায় এনসিপির প্রার্থী কারা, লড়বেন কাদের সঙ্গে
চট্টগ্রাম জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রথম ধাপে ৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এখনো ৭টি আসনে প্রার্থী দেয়নি দলটি। আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত প্রার্থীদের পরিচয়, রাজনৈতিক অতীত ও স্থানীয় সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এনসিপি মূলত স্থানীয় ব্যক্তিত্ব, সাবেক সংগঠক কিংবা অন্য দল থেকে আসা নেতাদেরও প্রাধান্য দিয়েছে। মনোনয়ন পাওয়া দুজন বর্তমানে কোনো কমিটিতে নেই। দলীয় রাজনীতিতে এখনো জায়গায় না পেলেও ব্যক্তিগত বা অতীত রাজনৈতিক পরিচিতি তাঁদের মূল শক্তি—এমনটাই মনে করেন এনসিপির নেতারা।
চট্টগ্রামে এখনো ফাঁকা রয়েছে সাতটি আসন। ফলে নির্বাচনে এনসিপির পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক কৌশল কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব আসনে কারা মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়েও আগ্রহ আছে ভোটারদের মধ্যে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, চট্টগ্রামের নির্বাচনী রাজনীতিতে এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপিকে ঘিরেই। অন্যদিকে এনসিপি নতুন শক্তি। তাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের সঙ্গে।
কোন আসনে কে
চট্টগ্রাম-৬ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মহিউদ্দিন জিলানী। তিনি এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের (বর্তমানে জাতীয় শ্রমিকশক্তি) চট্টগ্রাম নগরের সাবেক আহ্বায়ক। বর্তমানে এনসিপির কোনো কমিটিতে নেই। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে প্রার্থী হয়েছেন মো. জোবাইরুল হাসান। তিনি এনসিপির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে গুলির করার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন এরশাদ উল্লাহসহ আরও পাঁচজন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে এনসিপির প্রার্থী হয়েছেন মো. রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী। তিনি বর্তমানে এনসিপির কোনো কমিটিতে নেই। তবে ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের চার–দলীয় জোটের সমর্থন নিয়ে নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার (বর্তমানে কাউন্সিলর) নির্বাচন করেছিলেন। মূলত জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। আবার কাউন্সিলর পদে ২০১০ সালেও একই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে কোনো বারই জিততে পারেননি। চট্টগ্রাম-৯ আসনে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে এনসিপির প্রার্থী সাগুফতা বুশরা মিশমা। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন এনসিপির নগরে যুগ্ম সমন্বয়কারী এরফানুল হক। তবে এ আসনে নির্বাচনের ‘টিকিট’ পেয়েছেন মোহাম্মদ আজাদ দোভাষ। তিনি দলটির কোনো পর্যায়ের কমিটিতে নেই। এক সময় তিনি জাতীয় পার্টির (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নেতৃত্বাধীন) রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এর আগে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
এই আসনে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইস্রাফিল খসরু এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন এমন আলোচনায় আছে।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে এনসিপির প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য জুবাইরুল আলম। এই নেতার বিরুদ্ধে গত ২৯ নভেম্বর অনিয়ম, চাঁদাবাজি, মামলা-বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক মুখপাত্র মাহবুবা ইলা খাদিজা। চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের কাছে এ অভিযোগ দেওয়া হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জুবাইরুল আলম। এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে এনসিপির হয়ে লড়বেন দলটির দক্ষিণ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ হাসান আলী। এই আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তবে এলিডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদ প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে এনসিপির প্রার্থী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাবুদ সৈয়দ। তিনিও এনসিপির কোনো কমিটিতে নেই। তবে ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। এর আগে ১৯৮৩ সালে বাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী দলের দক্ষিণ জেলা কমিটির সদস্য সাবেক আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে এনসিপির প্রার্থী মীর আরশাদুল হক। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী।
তিন পার্বত্য জেলায় যাঁরা
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানকার তিন আসনে ইতিমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
এবার খাগড়াছড়িতে এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন মনজিলা সুলতানা। তিনি এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক। এই জেলায় বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। রাঙামাটিতে এনসিপির প্রার্থী প্রিয় চাকমা। তিনি রাঙামাটি জেলা কমিটির সদস্য। এই জেলায় বিএনপির প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান।
বান্দরবানে এনসিপির প্রার্থী হয়েছেন মংসা প্রু চৌধুরী। তিনি জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাচিংপ্রু জেরী।
আরও পড়ুন১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা এনসিপির: কে কোথায় মনোনয়ন পেলেন৮ ঘণ্টা আগে