ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী শাহনূর আলীকে ১০ বছর আগে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেন লিয়নের বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

আদালতে ব্যবসায়ীর পরিবারের পক্ষে করা আবেদনের শুনানি করেন ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১০ বছর আগে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রুলটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালত রায় দিয়েছেন। ফলে শাহনূর আলম হত্যার অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণে কোনো বাধা নেই।

মামলার বিবরণে জানা যায়, র‌্যাব-১৪-এর ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৪ সালের ১ জুন একটি নালিশি আবেদন করেন শাহনূরের ভাই মেহেদি হাসান। 

অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল শাহনূরকে র‌্যাব-১৪-এর সদস্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরে ৬ মে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আদালত শাহনূরের মৃত্যুর অভিযোগের আবেদন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করে অভিযুক্ত এক র‌্যাব।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বাতিল করে নবীনগর থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন শাহনূরের ভাই। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি মিডিয়া মোগল জিমি লাই দোষী সাব্যস্ত

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি মিডিয়া মোগল ও চীনের সমালোচক জিমি লাইকে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন হংকংয়ের হাইকোর্ট। খবর বিবিসির।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা সব অভিযোগে হাইকোর্ট জিমি লাইকে দোষী ঘোষণা করেন। তবে তার সাজা কী হবে, তা পরে জানানো হবে। 

আরো পড়ুন:

চীনের বিরুদ্ধে জাপানের বিমানকে এফসি রাডারের নিশানা করার অভিযোগ

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নিয়ে চীন-রাশিয়ার যৌথ মহড়া

জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বিদেশি শক্তির সঙ্গে আঁতাতের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। 

রায় ঘোষণার সময় বিচারকরা বলেন, “আমাদের মনে কোনো সন্দেহ নেই যে লাই (চীনা কমিউনিস্ট পার্টির) সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অভিপ্রায় থেকে কখনোই সরে আসেননি।”

বিচারকদের মতে, হংকংয়ের জনগণকে সহায়তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা ‘এমন পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয়, যেখানে কোনো মার্কিন নাগরিক ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যকে সহায়তার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উৎখাতে রাশিয়ার সাহায্য চাইছে।’

তারা আরো বলেন, প্রমাণে দেখা যায় লাইয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল- ‘চীন ও হংকংয়ের জনগণের স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়া’।

৭৮ বছর বয়সী জিমি লাইয়ের বিরুদ্ধে দুটি বিদেশি যোগসাজশের অভিযোগ এবং একটি রাষ্ট্রবিরোধী প্রকাশনার অভিযোগ অভিযোগ আনা হয়। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন তিনি।

গণতন্ত্রপন্থি কর্মী ও চীনের সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আগে, লাই একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে চীনে জন্মগ্রহণ করেন। কমিউনিস্টরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ১২ বছর বয়সে লাই চীন থেকে একটি মাছ ধরার নৌকায় করে পালিয়ে হংকংয়ে চলে আসেন। তিনি হংকংয়ে বিভিন্ন কাজ করে ইংরেজি শেখার পর, ১৯৭৭ সালে পোশাক ব্র্যান্ড জিওর্দানো প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসাটি একটি ফ্যাশন সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, যা তাকে কোটিপতি করে তোলে।

তিয়ানানমেন স্কোয়ারের দমন-পীড়নের ঘটনার পর জিমি লাই মিডিয়া জগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং নেক্সট মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধীনে বিখ্যাত সংবাদপত্র অ্যাপল ডেইলি প্রকাশিত হতো, যা চীনের কঠোর নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। 

জিমি লাই ২০১৯ সালে হংকংজুড়ে ছড়িয়ে পড়া গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। মাসব্যাপী সেই বিক্ষোভের পর বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএল) প্রণয়ন করে, দাবি করে যে এটি শহরের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই আইন ভিন্নমতকে দমন করেছে এবং লাইয়ের মতো বহু আন্দোলনকারীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

২০২০ সালের শেষ দিকে এই আইনে জিমি লাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে ১,৮০০ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন, যার বড় অংশই একাকী বন্দিত্বে। কর্তৃপক্ষ তার সম্পদ জব্দ করার পর ২০২১ সালে অ্যাপল ডেইলি পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। 

আজ সোমবার আদালতে জিমি লাইয়ের দোষী সাব্যস্ত রায়ের পর জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় হংকং সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে চীন।

চীনের হংকং ও ম্যাকাও বিষয়ক অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, “দীর্ঘদিন ধরে, লাই প্রতিটি মোড়ে চীনের বিরোধিতা করেছেন, বিদেশী এবং বহিরাগত শক্তির সাথে যোগসাজশ করেছেন এবং হংকং এবং দেশের বিরুদ্ধে সকল ধরনের অন্যায় করেছেন।”

বিবৃতিতি আরো বলা হয়, “২০২০ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে, হংকং সমাজ সঠিক পথে ফিরে এসেছে এবং জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা আরো ভালোভাবে সুরক্ষিত হয়েছে।”

এদিকে, তাইওয়ান এই রায়ের নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ‘বাকস্বাধীনতাকে দমন করার জন্য কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে কাজে লাগানোর ও গণতন্ত্রপন্থি ব্যক্তিত্বদের রাজনৈতিকভাবে নির্যাতন করার’ অভিযোগ এনেছে। 

আজ সোমবার তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, “লাইয়ের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনায় তাইওয়ান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়ই গভীরভাবে ব্যথিত ও হতাশ হয়েছে।” 

চীনের সঙ্গে স্ব-শাসিত দ্বীপের সম্পর্ক তদারককারী কাউন্সিল বেইজিং এবং হংকংকে লাইকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি হংকংবাসীদের জন্য ‘মৌলিক আইন দ্বারা নিশ্চিত স্বাধীনতা ও অধিকার পুনরুদ্ধার’ করার আহ্বান জানিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ