চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও খুনের রাজনীতির যেই ভয়ংকর চিত্র রবিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে তুলিয়া ধরা হইয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ আগস্ট হইতে ২১ মার্চ পর্যন্ত ৭ মাসে ৭ জন খুন হইয়াছেন। সমকাল অনলাইনের সংবাদ অনুযায়ী, শনিবারও তথায় একজন খুন হইয়াছেন। উক্ত এলাকায় একদিকে জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক খুনের শিকার হইতেছেন, অন্যদিকে বিএনপির দ্বিধাবিভক্ত রাজনীতির কারণে পুনরায় দাম্ভিক অবস্থান ঘোষণা করিতেছে রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা। গোষ্ঠীদ্বন্ধ, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করিয়া ঘটিতেছে ধারাবাহিক হত্যার ঘটনা। এহেন পরিস্থিতি যদ্রূপ রাজনীতি, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য আত্মঘাতী হইতে বাধ্য।
আমরা জানি, কয়েক দশক ধরিয়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই অঞ্চল ‘সন্ত্রাসের জনপদ’রূপে পরিচিতি পাইয়াছে। মূলত এলাকায় প্রাধান্য বিস্তারের অপপ্রয়াস ঘিরিয়া দেশের তৎকালীন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সাংঘর্ষিক রাজনীতি এবং দল দুইটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এহেন কুখ্যাতির কারণ। প্রত্যাশা ছিল, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এলাকায় শান্তি আসিবে। বিশেষত বিগত ১০ বৎসরের এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নেতার পরিণতি দেখিয়া বিএনপি নেতারা জনবাসনা উপলব্ধি করিতে পারিবেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে সেই আশার গুড়ে বালি পড়িয়াছে। রাজনীতির বিভেদ ৫ আগস্টের পরও রাউজানকে রক্তাক্ত করিয়া চলিতেছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনমতে, ৫ আগস্টের পর বিএনপির দুই গ্রুপে শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়াছে। এই সকল ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্তত তিন শতাধিক মানুষ আহত হইয়াছেন। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার নিরীহ বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাইতেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবন-জীবিকাও স্বাভাবিক থাকিবার কথা নহে।
প্রতিবেদনে শুধু রাউজানের কথা বলা হইলেও দেশের অনেক স্থানে অভিন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করিবার আশঙ্কা উড়াইয়া দেওয়া যায় না। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সদস্য এবং উহার সমর্থকদের মধ্যে যাহারা বিবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল, তাহাদের আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি প্রদান জনআকাঙ্ক্ষা, সত্য। কিন্তু ইহার অর্থ কোনো প্রকারেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণে আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লওয়া নহে। আমরা জানি, বিগত কয়েক মাসে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়া ঢাকাসহ সমগ্র দেশে অনেককে হেনস্তা, এমনকি হত্যাও করা হইয়াছে। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও দখল করা হইয়াছে। আমরা মনে করি, আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনকারী এহেন হিংসা ও হানাহানি গণঅভ্যুত্থানে দলে দলে যে সাধারণ মানুষ যুক্ত হইয়াছিলেন, তাহাদেরই শুধু হতাশ করিতেছে না; রাষ্ট্র ও সমাজের সংহতিকেও দুর্বল করিয়া দিতেছে। উপরন্তু, আন্তর্জাতিক পরিসরেও দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ার শঙ্কা উড়াইয়া দেওয়া যায় না।
স্বীকার্য, গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ অদ্যাবধি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আসে নাই। উহাদের সহযোগিতার জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মাঠে থাকিলেও, বিশাল পুলিশ বাহিনীর ঘাটতি পূরণ তাহাদের পক্ষে এক প্রকার অসম্ভব। এই অবস্থায় স্বীয় নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখিবার দায় রাজনৈতিক দলগুলির উপরেই বর্তায়। আমরা জানি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ইতোমধ্যে বহু দলীয় নেতাকর্মীকে বিবিধ অপকর্মে সংশ্লিষ্ট হইবার দায়ে সংগঠন হইতে বহিষ্কারসহ নানা প্রকার শাস্তি দিয়াছে। কিন্তু এবম্বিধ পদক্ষেপ যে পরিস্থিতির উপর তেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলিতে পারিতেছে না, রাউজান তাহার প্রমাণ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ন ত কর ম ব এনপ র এল ক য় র জন ত হইয় ছ আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের ফিরিয়ে আনা সরকারের প্রধান লক্ষ্য: প্রে
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে হত্যাযজ্ঞের খুনিদের ফিরিয়ে আনা সরকারের মূল লক্ষ্য এবং অঙ্গীকার।”
তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান চলাকালে জুলাই-আগস্ট মাসে হত্যাকাণ্ডের খুনিদের ফিরিয়ে আনা। এটি আমাদের শপথ এবং অঙ্গীকার।”
আরো পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জ-৩: বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
এবারো বিএনপির মনোনয়ন পাননি রুমিন ফারহানা
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধনকালে তিনি এসব বলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, “গণঅভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিবাদী সরকার বহু শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ করেছে যে ফ্যাসিবাদী সরকার গণহত্যা চালিয়েছে।”
শফিকুল আলম বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আমরা চাই তারা দেশে প্রত্যর্পিত হোক।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের আপিল করার অধিকার রয়েছে।”
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দ্রুত তাদের রায় কার্যকর হয়।”
তিনি আরো বলেন, “যাদের হাতে রক্তের দাগ আছে, তাদের সবাইকে আমরা বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনব। এটি শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব, আমাদের অঙ্গীকার। আমরা ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রজন্ম এই দায়িত্ব নেবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি উল্লেখ করেন, “যারা তাদের সন্তানদের হত্যা করেছে বা পঙ্গু করেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। এ ব্যাপারে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।”
শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচনের আগে আমাদের হাতে প্রায় ৭০ দিনের মতো সময় আছে। আমরা জানি না এই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারব কি না, তবে আমরা চেষ্টা করব।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জাতীয় নেতা ও জনতার নেতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেতা নন। তিনি আমাদের জাতীয় নেতা। তিনি জনতার নেতা।”
শফিকুল বলেন, “আমরা তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করি। বাংলাদেশের জন্য তার উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।”
সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
শফিকুল আলম জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন করেছে।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. আব্দুল কাদের, মাগুরা পৌর প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা বিএম সাজিন ইশরাত এবং ক্রীড়া সংগঠক বারিক ননজাম বার্কি।খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি