রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইট খোয়া, স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা
Published: 20th, April 2025 GMT
নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দী-শৈলেরকান্দা সড়ক পাকাকরণে এ অনিয়ম চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে নরুন্দী-শৈলেরকান্দা সড়কের ১ হাজার ৩০০ মিটার পাকা করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগেও এই সড়কের একাংশের কাজ হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে। ফলে দুই মাস না যেতেই সড়কটি ভেঙে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সে সময় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলজিইডির কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার মেলেনি।
জামালপুর এলজিইডি দপ্তরের তথ্যমতে, সদর উপজেলার নরুন্দী-শৈলেরকান্দা সড়কের মহিশুড়া শহীদের বাড়ি থেকে শৈলেরকান্দা বেপারির খামার পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মিটার পাকা করার কাজ শুরু হয় গত জানুয়ারি মাসে। ৩৫ লাখ টাকার কাজটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে এস ট্রেডিংকে। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার নিজে কাজ না করে তা বিক্রি করে দেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছে। সরেজমিন দেখা যায়, এ কাজে অত্যন্ত নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাস্তার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইট ও খোয়ার মান যাচাই না করেই রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অল্প দিনের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তার কাজ তদারকিতে জামালপুর সদর উপজেলার এলজিইডির কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে।
নরুন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন-অর-রশীদের ভাষ্য, গত বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার পাকা করার দুই মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। এতে এই সড়কে যাতায়াতকারী মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। বর্তমানে যে কাজ হচ্ছে, তা আরও খারাপ। ফলে এই সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
কাজ তদারকি কর্মকর্তা এলজিইডি সদর উপজেলার নকশাকার উপসহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস উদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে কাজ করায় তাঁর তদারকিতে কোনো কাজই মানসম্মত হয় না। বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে একজন সৎ ও দক্ষ প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
এলজিইডির জামালপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী আক্রাম হোসেন তালুকদারের ভাষ্য, রাস্তায় আগে ব্যবহৃত ইট-খোয়া ব্যবহারের নিয়ম আছে। সেগুলো দিয়ে কাজ চলছে। এখনও নতুন ইট-খোয়ার কাজ শুরু হয়নি। তবে যেভাবে কাজ করলে রাস্তাটি টেকসই হবে, সেভাবেই করা হবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ সমকালকে বলেন, তিনি এই জেলায় নতুন এসেছেন। তাই এখনও সবকিছুর খোঁজখবর ঠিকমতো নিতে পারেননি। তাঁর ভাষ্য, তিনি এসেছেন কাজ করতে, কোনো দুর্নীতিবাজকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে নয়। যে ক’দিন থাকবেন, শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন। এই রাস্তার খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মূল ঠিকাদার ও সাবঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোনকল রিসিভ করেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক সদর উপজ ল র কর মকর ত ব যবহ র ক জ কর সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের সেই ভয়াবহ রাতে যা ঘটেছিল
চা শ্রমিকদের মাতৃভূমিতে ফেরার আন্দোলন ইতিহাসে ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। আজ ২০ মে, ১৯২১ সালের এই তারিখে চা শ্রমিকদের চাঁদপুর স্টেশন থেকে নিজ নিজ ভূমির দিকে যাত্রা করার কথা ছিল। অবশ্য শ্রমিক আসা শুরু হয়েছিল মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই।
শুরুর দিকে চাঁদপুর রেলস্টেশনে জড়ো হওয়া শ্রমিকেরা স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের সহায়তায় গোয়ালন্দগামী জাহাজে উঠে পড়েন। ওই সময় চাঁদপুরের মহকুমা প্রশাসক ছিলেন সুশীল কুমার সিংহ। তিনি শ্রমিকদের সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু কিছুদিন পরেই তৎকালীন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ম্যাকফরসন চাঁদপুর রেলস্টেশনে এসে হাজির হন। পরে ঘটনা নির্বিচারে হত্যার দিকে গড়ায়। তার নির্দেশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোর্খা সৈন্য স্টেশন ঘিরে ফেলে। ট্রেনের টিকেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়, জাহাজের পাটাতন তুলে দিয়ে যাত্রীদের মেঘনায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
মোঃ আবুল হাসান অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সদস্য, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি উপদেষ্টা, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘চা শ্রমিকরা কলিমগঞ্জ রেলস্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন নারী ছোট শিশুদেরকে নিয়ে ট্রেনে রওনা দিতে পেরেছিলেন। পুরুষেরা হাঁটা শুরু করেছিলেন। কিছু মানুষ জাহাজে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন এবং কিছু মানুষ জাহাজে উঠতেও পেরেছিলেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে তৎকালীন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের যে প্রতিনিধি ম্যাকফরসন সে চাঁদপুরে উপস্থিত হয়ে যাত্রীদের জাহাজে উঠতে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর জাহাজের পাটাতন সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শ্রমিক নদীতে ভেসে যান। এই ঘটনা উনিশ, বিশ তারিখ জুড়ে হয়েছে। এবং রাতের বেলা ‘গোর্খা সৈন্য’ অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের ওপর আক্রমণটা করে অনেককে হত্যা করেছে। ’’
আরো পড়ুন:
ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
হিলিতে আরনু জুটমিল বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকেরা দিশেহারা
গোর্খা সৈন্য সম্পর্কে মোঃ আবুল হাসান জানান, এই চা শ্রমিকদেরকে যারা সংগ্রহ করেছেন তারা মূলত এক ধরণের দালাল। যেসব অঞ্চল থেকে চা শ্রমিকদেরকে আনা হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াতে একটা ব্যবসা গড়ে উঠেছিল। অনেকটা দাস কেনা-বেচার ব্যবসায়ের মতো। চা বাগানে শ্রমিকদেরকে আনার পরে এদের মধ্যে থেকে কিছু মানুষকে মালিকপক্ষ বিশেষ বাহিনী হিসেবে বা গোর্খা পুলিশ হিসেবে ব্যবহার করতো।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একটি বড় অংশ ছিল অসহযোগ আন্দোলন। মুল্লুক চলো আন্দোলনও ছিল এক ধরণের অসহযোগ আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলনে চা শ্রমিকদের সম্পকৃক্ততা নানান ফর্মে, নানান মাত্রায় ছিল। মুল্লুক চলো আন্দোলন ঘিরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটার পরে সে সময় কংগ্রেসের প্রাদেশিক পর্যায়ের নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বস্ত্রীক চাঁদপুরে এসে বাকি ভূক্তভোগী শ্রমিকদের দেখে যান, খোঁজখবর নেন।
‘‘ওই আন্দালনের জের ধরে সাড়ে চার হাজার রেল শ্রমিকদের টার্মিনেট করা হয়েছিল। তো এই সব ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের নানাভাবে ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দিয়েছিলেন দীনবন্ধু, চার্লস অ্যান্ড রুলস। ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে টার্মিনেট করার মতো পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও ছিল। আমাদেরকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে নানান সময়ে। জবরদস্তির ব্যাপারটা এখনও নানানভাবে আছে। বিমোট এরিয়াতে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানগুলোতে নানা রকম জবরদস্তির নজির পাওয়া যায়।’’—যোগ করেন মোঃ আবুল হাসান
তিনি আরও বলেন, ‘‘কাজ করতে গিয়ে দেখেছি পনেরো বছর আগেও এই জবরদস্তি ব্যাপারটা প্রবল ছিল। এমনকি এখনও জবরদস্তি আছে। একজন চা শ্রমিক যদি চা বাগানে যে ধরণের মজুরি বা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় সে যদি এটা মেনে নিতে না চায় তাহলে আইনগতভাবে বাগানে থাকার সকল অধিকার হারাবে। ২০০৫,’০৭ এই সময়ে যেতাম তখন যাদেরকে সেন্টার করে আমরা যেতাম তাদেরকে নোটিশ করা হতো। বা গ্রাম চৌকিদার ডেকে নিয়ে শোকোজ করা, ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে টার্মিনেট করা; এই ধরণের পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও ছিল।’’
বিশ্বের রাজনীতির সুফলগুলো এই চা শ্রমিকদের ঘরে না পৌঁছালেও কুফলগুলো কালে কালে, সময়ে সময়ে ঠিকই পৌঁছেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব থেকেও মুক্ত ছিলেন না তারা।
মোঃ আবুল হাসান বলেন, ‘‘মোটা দাগে বলতে গেলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে চা শিল্প যদিও লাভ করছিল কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের দোহাই দিয়ে যে ধরনের চুক্তিতে কিংবা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসে চা শ্রমিকদের আনা হয়েছিল সেসব সুযোগ সুবিধাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে, মার্তৃভূমিতে ফিরতে পারেননি চা বাগানের শ্রমিকেরা। এখনও চলমান আইনের বিরুদ্ধে কথা বলার আইনী সুযোগ নেই কোনো শ্রমিকের। এরপরেও যেটুকু পরিবর্তন এসেছে তার পেছনে রয়েছে ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের অনেক বড় প্রভাব।
ঢাকা/লিপি