এবার মানুষের রক্ত থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী বিষনাশক
Published: 4th, May 2025 GMT
দুই দশক ধরে টিম ফ্রিড নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সাপের বিষে আক্রান্ত করেছেন। কখনও সরাসরি সাপের কামড় খেয়ে, আবার কখনও ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগ করেন তিনি। এতে ওই ব্যক্তির রক্তে একটি বিস্ময়কর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় টিম ফ্রিডের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি সাপের বিস্তৃত প্রজাতির গুরুতর বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর ফল দিয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিভেনম সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর। ফ্রিডের ১৮ বছরের এই দুঃসাহসিক যাত্রা ভবিষ্যতে সব ধরনের বিষাক্ত সাপের কামড়ের চিকিৎসায় একটি সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখতে পারে।
মাম্বা, কোবরা, তাইপান, ক্রেইটসহ বিশ্বের ভয়ংকর প্রাণঘাতী কিছু সাপের একাধিক প্রজাতির ২০০টিরও বেশি কামড় সহ্য করেছেন টিম ফ্রিড। এ ছাড়া এসব সাপের বিষের ৭০০টিরও বেশি ইনজেকশন শরীরে পুশ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সেন্টিভ্যাক্সের প্রধান নির্বাহী এবং গবেষণাপত্রের লেখক জ্যাকব গ্ল্যানভিল বলেন, ‘ফ্রিড ১৮ বছর ধরে নিজের শরীরে সাপের বিষ প্রয়োগ করে চলেছেন। বিষধর এসব সাপের বিষ একটি ঘোড়াকেও মেরে ফেলতে পারে। এটি এককথায় বিস্ময়কর! তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্রিড যা করেছেন, তা কেউ করার চেষ্টা করবেন না। সাপের বিষ অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
গবেষণা অনুযায়ী, ফ্রিডের রক্ত থেকে সংগৃহীত দুটি সুরক্ষা অ্যান্টিবডি ও একটি ক্ষুদ্র আণবিক বিষ প্রতিরোধক একত্র করে তৈরি করা হয়েছে নতুন এই অ্যান্টিভেনম ককটেল। এটি ১৯টি মারাত্মক প্রজাতির মধ্যে ১৩টির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুরক্ষা এবং বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আংশিক সুরক্ষা দিতে সক্ষম। ঘোড়া বা ভেড়াকে বিষ দিয়ে বর্তমানের প্রচলিত অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও আশঙ্কা থাকে।
প্রথমে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে বিষাক্ত সাপ নাড়াচাড়ার সময় নিজেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ফ্রিড। সাবেক এই ট্রাক মেকানিক জানান, প্রথমদিকে তিনি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন, যখন পরপর দুটি কোবরার কামড় তাঁকে কোমায় পাঠিয়ে দেয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মরতে চাইনি। আমি একটি আঙুলও হারাতে চাইনি। তবে এখন আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি মানবতার জন্য ভালো কিছু করছি। আমি এতে গর্বিত।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অভিনয় থেকে দূরে প্রিয়দর্শিনী
একটা সময় ছিল, যখন তাঁর একটুখানি হাসি, চোখের দৃষ্টি কিংবা নিঃশব্দে ঘুরে যাওয়া চুলের ভঙ্গিমাও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিত। নাম তাঁর মৌসুমী। ‘প্রিয়দর্শিনী’– এ নামটা যেন তাঁর জন্যই সৃষ্টি। শুধু অভিনয় দিয়ে নয়; নিজের ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য এবং কোমল আচরণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটি ভক্তের হৃদয়ের রানী।
মৌসুমী এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। দুই বছর ধরে সেখানেই। মায়ের অসুস্থতা আর মেয়ের পড়াশোনার কারণে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে পর্দায় দেখা মিলছে না তাঁর। ফলে ক্যামেরার ঝলক, শুটিং সেটের কোলাহল কিংবা মেকআপ রুমের আয়নায় প্রতিফলিত হয় না প্রিয়দর্শিনীর মুখ। তিনি আছেন শুধুই আপনজনের সঙ্গে– নীরবে, নিশ্চুপে। ওমর সানী– যিনি একসময় ছিলেন পর্দার নায়ক, বাস্তবে আছেন তাঁর জীবনসঙ্গী হয়ে। সম্প্রতি তিনি বললেন এক গভীর বিষাদের কথা, ‘মৌসুমী ভুলে যেতে চাইছে, সে কখনও মৌসুমী ছিল।’
ওমর সানীর এই কথায় আছে তীব্র এক নীরবতা। যে অভিনেত্রী একসময় সিনেমা হলের অন্ধকার ভেঙে আলো হয়ে উঠতেন, তিনিই আজ নিজেকে পেছনে সরিয়ে রাখছেন সময়ের গহ্বরে। সিনেমাকে ভালোবেসে এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া সেই মৌসুমী কি তবে বিদায় নিতে চাইছেন? কারণ? একটা সময় আসে, যখন মানুষ নিজেকেই প্রশ্ন করে– আর কতদূর? কী পেলাম? আর কী চাই? মেয়ের পড়াশোনা, অসুস্থ মা, পরিবার– এসব হয়তো ‘উত্তর’ নয়, তবে ব্যাখ্যা।
তবু প্রশ্ন থাকে, এত সহজে কি বিদায় বলা যায়? একজন মৌসুমী কি হারিয়ে যেতে পারেন? তিনি তো শুধু একজন অভিনেত্রী নন; একসময়ের আবেগ, এক প্রজন্মের ভালোবাসা। নতুন প্রজন্ম হয়তো তাঁর নাম জানে, ছবিগুলো চেনে, কিন্তু অনুভব করে না তাঁর পর্দার উপস্থিতি। সেই সৌজন্যবোধ, সেই মায়া– সব যেন ধীরে ধীরে আটকে যাচ্ছে সময়ের ফ্রেমে। একজন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো অভিনেতা তাঁর চরিত্রের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন, তবে সে-ই সত্যিকারের কিংবদন্তি।’ মৌসুমী ঠিক তেমনই একজন। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে যাঁর যাত্রা শুরু, তা থেমে থেমে নয়; বরং গানে, গল্পে, কান্নায় আর ভালোবাসায় ছিল পূর্ণ। সেই সিনেমায় সালমান শাহর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।
এখন প্রশ্ন মৌসুমী কি কখনও চলে যেতে পারেন? তিনি তো আমাদের স্বপ্নের মতো সুন্দর। যারা মৌসুমীর সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, যারা আজও তাঁর পুরোনো ছবির গান শুনে একা রাতে জানালার বাইরে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাদের জন্য খবরটা যেন হারিয়ে যাওয়ার গল্প– একটা সময়ের, একটা আবেগের, একটা ভালোবাসার।
হয়তো এ বিরতিটা তাঁর প্রয়োজন ছিল। হয়তো তিনি আর ফিরবেন না। অথবা একদিন, হঠাৎ করেই আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে বলে উঠবেন– ‘আমি ফিরেছি।’ যদি না-ই ফেরেন, তাহলেও মৌসুমী ঠিক যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। স্মৃতির মণিকোঠায়, আলো-ছায়ার কল্পনায় আর কোটি ভক্তের ভালোবাসায়।