আল্লাহর ওপর ভরসা রাখাকে আরবিতে বলে তাওয়াক্কুল। শব্দটির অর্থ হলো নিজের সবকিছু অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম রয়েছে। আল্লাহর যে নামটি ভরসার সঙ্গে সম্পর্কিত, তা হলো ‘আল-ওয়াকিল’ মানে কর্মবিধায়ক বা যিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। কোরআনে আল্লাহকে আল-ওয়াকিল নামটি চৌদ্দবার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ‘তারা বলল, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি সর্বোত্তম কর্মবিধায়ক’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩)। ‘আল্লাহ যথেষ্ট, তিনি কর্মবিধায়ক’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৮১)।

আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন তাঁর ওপর আস্থা রাখতে, ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের প্রভু। তিনি ছাড়া সত্যি কোনো উপাস্য নেই। তাই তাঁকেই তোমাদের কাজের হালকর্তা হিসেবে গ্রহণ করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ৯)

একইভাবে তিনি তাঁর সৃষ্টির ওপর আমাদের নির্ভর করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তা বনি ইসরায়েলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম, (অথবা বলেছিলাম): “আমার ব্যতীত অন্য কাউকে তোমাদের কাজের হালকর্তা হিসেবে গ্রহণ কোরো না।”’ (আল-ইসরা, আয়াত: ২)

আরও পড়ুনসুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের বিশেষ ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫

এই দুটি আয়াত আমাদের দেখায়, আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা একটি ইবাদত। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস এবং নির্ভরতা দিয়ে আমরা একত্ববাদী বিশ্বাস প্রকাশ করি এবং তাই এই ব্যাপারে আমাদের আল্লাহর কাছেই সমর্পিত থাকা উচিত।

আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা কীভাবে বাড়াব? আমরা আজ চারটি উপায় জানাব আজ।

১.

নির্ভরশীলতা ও অলসতার পার্থক্য করুন

তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর বিশ্বাস) ও অলসতার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাওয়াক্কুল মানে এই নয় যে চেষ্টা ত্যাগ করবেন এবং ভাববেন যে একভাবে আপনার চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান হয়েই যাবে। বরং আপনি চেষ্টা করবেন এই মনোভাব নিয়ে যে আল্লাহ আপনাকে সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে সাহায্য করবেন। নির্ভরশীলতা মানে এই নয় যে আপনি জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করবেন না, শিক্ষা উপেক্ষা করবেন, চাকরির জন্য আবেদন করবেন না বা সাক্ষাৎকারের সময়সীমা মিস করবেন। রিজিকের জন্য চেষ্টা করা শারীরিক ইবাদত। আল্লাহ বলেছেন, ‘তাহলে আল্লাহর কাছে রিজিক খোঁজো এবং তাঁর ইবাদত করো।’ (সুরা আনকাবুত: ১৭)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এক বেদুইনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কেন তোমার উট বেঁধে রাখো না?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছি!’ তখন নবী (সা.) বললেন: ‘প্রথমে তোমার উট বেঁধে রেখো, এরপর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৫১৭)

আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৮ এপ্রিল ২০২৫

২. আত্মগর্ব বিতাড়ন করুন

সর্বদা আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভা ও শক্তির ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা এবং কাজ করতে হবে। যে সমস্ত দান পেয়েছি, তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞ স্বীকার করতে হবে, কখনো আত্মগর্বে পড়া যাবে না। আমাদের সব শক্তি ও ক্ষমতা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং শেষপর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহই আমাদের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

৩. আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নিন

সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালানোর পর, যা ঘটবে তা মেনে নিন। বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাঁর প্রজ্ঞা অনুযায়ী, এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা আমাদের সব পরিকল্পনার বাইরে এবং তা শুধু আল্লাহ জানেন। নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে, তাকদিরে (ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে) বিশ্বাস করা ইমানের অন্যতম স্তম্ভ। যা ঘটবে তা ঘটবে, আমরা কেবল সেরা কাজ করে যেতে পারি।

আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কখন পড়ব০৪ মার্চ ২০২৫

৪. সব ধরনের সতর্কতা গ্রহণ করুন

কোরআনে আল্লাহ আমাদের নবী ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর ছেলে ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনি শুনিয়েছেন। যখন ইয়াকুব (আ.) তাঁর পুত্রদের মিসরে পাঠাচ্ছিলেন, তাদেরকে শহরের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে বলেন, যাতে সন্দেহ না হয়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর পরিকল্পনাকে অন্যভাবে ঠিক করেছিলেন। দেখুন, ইয়াকুব (আ.) নবী হয়েও সব ধরনের সতর্কতা গ্রহণ করেছিলেন, যাতে কোনো ঝুঁকি না থাকে।

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে তাওয়াক্কুল প্রয়োগ করা দরকার। তাওয়াক্কুলের একটি বড় উপকারিতা হলো যে এটি আমাদের অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ, চিন্তা এবং সেগুলোর ফলে সৃষ্ট বিষণ্নতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। একজন সৎ মুসলিম, যে তাওয়াক্কুল বোঝে, সে যেমন কখনো প্রচেষ্টা ত্যাগ করবে না, তেমনি সে সাফল্যে অত্যধিক আনন্দিত হবে না বা ব্যর্থতায় হতাশ হবে না।

‘ডিসকভারিং ইসলাম’ আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুনদুই কিশোরের বীরত্বে মারা গেল আবু জাহেল১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর ভ গ রহণ ক আম দ র র জন য আল ল হ কর ছ ল করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফটিকছড়িতে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকদের সড়ক অবরোধ

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহারকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর সমর্থকেরা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে তাঁরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পুলিশের আশ্বাসে রাত আটটার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি সদরের বিবিরহাটে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর নাজিরহাট ও হেঁয়াকোতে তিন দফায় বিক্ষোভ করেন কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা অবিলম্বে সরোয়ার আলমগীরকে প্রত্যাহার ও আজিম উল্লাহ বাহারকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে প্রায় দুই ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমদ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের সমাবেশ করেন আজিম উল্লাহ বাহারের সমর্থকেরা। সমাবেশ শেষে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় তাঁর কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। তিন শতাধিক কর্মী দুই স্থানে সড়কে বসে ছিলেন এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে আমরা গিয়ে সবাইকে বোঝালে অবরোধ তুলে নেন।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িসহ ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ফটিকছড়ি আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীরকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজিম উল্লাহ বাহারসহ পাঁচজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ