‘বোরো ধানের ভান্ডার’ খ্যাত জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ ধান দিয়েই স্বপ্ন বুনেন সারা বছরের। হাওর পাড়ের মানুষদের সংসারের খরচ, সন্তানদের পড়ালেখা, বিয়ে-শাদি, ঈদ-পূজাসহ সব কিছুই নির্ভর করে ধানের ওপর। বছরে একবার বৈশাখী ধান গোলায় তুলতে পাড়লে সারা বছর হাসি থাকে কৃষকদের মুখে।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুনামগঞ্জের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গোলায় ধান তুলতে শুরু করা কৃষকদের পরিবারে তাই ঈদ আনন্দ চলছে।

হাওরের কৃষকরা ইতোমধ্যে ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। শুধু কৃষকরা নন, তাদের সহযোগিতা করছেন পরিবারের সদস্যরাও। সামর্থ্যবান কৃষকরা এই কাজে শ্রমিকদের ভাড়া করেছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার।

আরো পড়ুন:

হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম কমে যাওয়ায় চিন্তায় কৃষক

সুনামগঞ্জের হাওরে বজ্রপাত, ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার ধানে রোগ কিংবা পোকার আক্রমণ হয়নি। বৈশাখ মাস শেষ হওয়ার আগেই হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। এবার জেলার হাওরগুলোতে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ কৃষি শ্রমিক ও কৃষক। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরাও কাজ করছেন। জেলার হাওরগুলোতে ধান কাটছে ১ হাজার ৩৫টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ১২০টি রিপার মেশিন।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মোট ১৩৭টি হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ধান। যা থেকে চাল উৎপাদন হবে ৯ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন।

কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটছেন এক কৃষক

জেলার জলভাঙা হাওরের কৃষক আব্দুল মালিক রাইজিংবিডি-কে বলেন, “এই বছর সোনার ফসল উঠেছে, যেটাকে আমরা সোনার বৈশাখী বলি। তবে খরায় কিছু ধান যদি নষ্ট না হতো কৃষকরা আরো ৫ মণ বেশি ধান পেতেন। এবার ধানের যা উৎপাদন তাতে আমরা সত্যি খুব আনন্দিত। পরিবারে সবাই ঈদ আনন্দে মেতেছেন। সব ঠিক থাকালে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারব।”

অমৃত বিশ্বাস নাম এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ধান বিক্রি করে পড়ালেখা করি, স্কুলের খরচ দেই, বাজার-হাট করি। এই বৈশাখী ধান দিয়েই আমাদের সংসার চলে। বৈশাখী আমাদের সম্পদ।”

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষক মোহাম্মদ ঝুমন মিয়া বলেন, “আল্লাহের রহমতে ধান খুবই ভালো হয়েছে। অন্য বছর তো পানি, শিলাবৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়ে যেত। এবার কোনো সমস্যা হয়নি। আল্লাহ রহমতে এবার সব ধান ঘরে তুলতে পারব।”

হাওরের কৃষক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, “এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি কিয়ারে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এবার মোটামুটি চলতে পারব।” 

মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন শ্রমিকরা 

ধানের দাম বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বছর ধানের ক্ষেতে খরচ বেশি হয়েছে। কিয়ার প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লেগেছে। সাত হাজার টাকা খরচ করে ১৫ মণ ধান পেয়ে কৃষক লাভবান হয় না, ফলে সরকারের প্রতি অনুরোধ অন্তত ধানের মণ যেনো ১৫০০-১৬০০ টাকা করা হয়। তাহলে কৃষক বাঁচবে।” 

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, “সুনামগঞ্জ জেলায় আমাদের এবারের লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ও আল্লাহের রহম থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি, সুনামগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত ধানের মূল্য দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। কৃষকরা ধান বিক্রি করে স্বচ্ছল হবেন।”

কৃষকরা ধানের সরকারি দাম নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, “সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্য হলো প্রতি মণ ১৪৪০টাকা। কৃষকদের আহ্বান জানাচ্ছি, সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার জন্য। সরকার যখন নির্ধারিত মূল্য ঘোষণা করে, তখন স্বাভাবিকভাবে ধানের দাম একটু বেড়ে যায়, এতে কৃষকরা খুব লাভবান হন।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর ধ ন র ব ম প র ফলন স ন মগঞ জ জ ল হ ওর র করছ ন উৎপ দ সরক র আনন দ ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচনে ১১ অনিয়মের অভিযোগ ছাত্রদলের 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে অসঙ্গতি ও অনিয়মের ১১টি অভিযোগ উত্থাপন করেছে করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। 

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের নানা অসঙ্গতির কথা তারা তুলে ধরেন। 

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যানকে নিয়োগ

এ সময় ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, জিএস পদপ্রার্থী তানভীর বারী হামীম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনেনীত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ১১টি অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “প্রচারণা চলাকালেই আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, আমরা তাদের ছেড়ে যাব না। শিক্ষার্থীদের দেওয়া সেই পবিত্র প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থেই আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি।”

তিনি বলেন, “সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সংঘটিত নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি অত্যন্ত দৃষ্টিকটূভাবে আমাদের সবার চোখে ধরা পড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পবিত্র ভোটাধিকার প্রয়োগের উৎসবটি হয়েছে নেতিবাচকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকালীন অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করছি।”

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা ডাকসু নির্বাচনে অসঙ্গতির অভিযোগ:

১. ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে দেওয়াসহ নানাবিধ জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালে সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাসহ অধিকাংশ প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোমধ্যেই ভোটার উপস্থিতির তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন সে বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কালক্ষেপণ করছে।

২. ২০১৯ সালের সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকায় ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এছাড়াও ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোটগ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি বারবার জানতে চাওয়ার পরেও এসংক্রান্ত তথ্যাদি কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টদেরও জানানো হয়নি।

ফলাফল প্রকাশের পর উল্লেখিত অভিযোগগুলো নিয়মানুসারে চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি এসব বিষয়ে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ব্যালট পেপার সংক্রান্ত ইস্যুতে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে অভিযোগ দায়ের করার পরও ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে।

৩. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতোমধ্যেই এসেছে। উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিলো না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

৪. ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার চারদিন পর, তথা গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদেরকে এ বিষয়ে মোটেও অবহিত করা হয়নি। ভোট গণনার বিষয়ে ইতোমধ্যেই নানা অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে, কিন্তু একটি কার্যকর গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি হত না।

৫. প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ভোটের আগেরদিন মধ্য রাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বাদ দেওয়া হয়। কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পোলিং এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।

৬. ভোটগ্রহণের আগে পোলিং এজেন্টদেরকে আইডি কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে অনেক পোলিং এজেন্ট যথাসময়ে ভোটকেন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হয়েও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থায়ই ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

৭. একটি নির্দিষ্ট প্যানেল বাদে সব প্রার্থী ও প্যানেলকে জানানো হয়েছে, আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কিন্তু ভোটের দিন দেখা যায় যে, আটটি ভোটিং এরিয়ায় মোট ১৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। যে কারণে ওই নির্দিষ্ট প্যানেল ব্যতীত আর কোনো প্রার্থী বা প্যানেল ১৮টি কেন্দ্র অনুসারে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেনি।

৮. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক পোলিং অফিসার নিয়োগ করার কথা থাকলেও তাদেরকে ঢাবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকায় অধিকাংশ পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।

৯. নিরাপত্তা ও ভোট সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের ভূমিকা ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে নিরাপত্তার দায়িত্বরত কতিপয় বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের সহায়তায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং একাধিক বহিরাগত শিবিরকর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করেছে।

১০. ভোট গণনার সময়ে পোলিং এজেন্টদের কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোটগণনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে পোলিং এজেন্টদের যথাযথভাবে যুক্ত না করায় এবং গণনা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সকল পোলিং এজেন্টসহ অধিকাংশ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করেই ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন।

১১. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ বুথে নির্বাচনের দিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মার্কার পেন না থাকায় ভোটারদের বলপেন দিয়েই ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিতে হয়েছে। বলপেনে ক্রস চিহ্ন দেয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি বলে অনেক ভোট গণনা করা হয়নি বলে পোলিং এজেন্টরা লক্ষ্য করেছেন।

একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যাবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টা ছিল কিনা তা নিয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর মনে শংকা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও ভোটার চিহ্নিত করার জন্য আঙ্গুলে যে মার্কারের কালি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অস্থায়ী কালি হওয়ার কারণে একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইন ও বিধি অনুসারে উপরোক্ত অনিয়ম ও অসঙ্গতি সমূহের বিষয়ে বার বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সমাধানের অনুরোধ করলেও তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেননি, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করেছেন। যার ফলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ ইতিহাসের পাতায় একটি নেতিবাচকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে ঠাঁই পাবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি। 

তারা আশা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্যতম স্তম্ভ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথে ফিরে এসে এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতিসমুহের বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক সকলের সামনে সত্য উন্মোচন করার দাবি জানিয়েছে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ