এক যুগসন্ধিক্ষণে আজ থেকে ১৫৪ বছর আগে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন প্রেমের ঠাকুর প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর। ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন তথা ফরিদপুরবাসী প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের আবির্ভাব উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উৎসব ৫ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ৯ দিনব্যাপী ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে।

প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ১২৭৮ সালের ১৬ বৈশাখ (১৮৭১ সালের ২৮ এপ্রিল) পবিত্র সীতানবমী তিথিতে মুর্শিদাবাদ জেলার ডাহাপাড়া গ্রামে আবির্ভূত হন। তাঁর মাতা বামা দেবী, পিতা দীননাথ ন্যায়রত্ন। পিতা দীননাথ ন্যায়রত্ন মুর্শিদাবাদ থেকে প্রভুকে সঙ্গে করে ফরিদপুর শহরের সন্নিকটে ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্রাহ্মণকান্দার অদূরেই গোয়ালচামটে অবস্থিত প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের নিত্য লীলাভূমি শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন। প্রভু সুন্দরের দিব্য জীবনের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৫০ বছর। বাংলা ১৩২৮ সনের আশ্বিন মাসের ১ তারিখে তিনি ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনে লীলা সংবরণ করেন। 

প্রভু সুন্দরের দিব্য জীবনের দুটি দিক রয়েছে। একটি সামাজিক, অপরটি আধ্যাত্মিক। প্রভু সুন্দরের আবির্ভাবের আগে শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এ ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে প্রেম ও ভালোবাসার বেদিমূলে মানুষকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর তিরোধানের প্রায় পৌনে তিনশ বছর পর এ দেশে ইংরেজ শাসন শুরু হয়। ফলে মানুষ জড়বাদ ও ভোগবাদিতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বাহ্যিক চাকচিক্য ও জৌলুস তার অন্তর্জগৎকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। ব্রিটিশ শাসকদের অর্থানুকূল্যে ও নব্য শিক্ষিতদের উগ্র আধুনিকতায় মহাপ্রভুর প্রেম ও ভক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। মানুষ ধর্ম আচরণ ভুলে যায়। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ও অশান্তি গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় ধর্মের এক অচলায়তন। ফলে গোটা হিন্দু সমাজে নেমে আসে এক মহাবিপর্যয়।

ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে হিন্দু নিম্নশ্রেণির বুনা, বাগদী, সাঁওতাল বসবাস করত। বুনা শ্রেণির অধিকাংশ লোকই ছিল অশিক্ষিত ও কুসংস্কারপূর্ণ। অসামাজিক কাজ ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আত্মকলহ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও হিংসা-বিদ্বেষের কারণে তাদের ব্যক্তিজীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের স্নেহের পরশে বুনা জাতির মধ্যে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। বুনাদের সর্দার রজনী বাগদী প্রভুর কৃপালাভে নবজীবন লাভ করেন। প্রভু সুন্দর তাঁকে হরিদাস মোহন্ত নামে বিভূষিত করে হরিসংকীর্তনে প্রবৃত্ত করান। নিম্ন শ্রেণির বুনা জাতির এই অপূর্ব পরিবর্তনের সংবাদে তৎকালীন ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় বাংলা ১৩২২ সনের শ্রাবণ সংখ্যায় ‘জগদ্বন্ধু’ শীর্ষক প্রবন্ধে জগদ্বন্ধু সুন্দরকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ছিলেন প্রচারবিমুখ। তিনি কোনো বক্তৃতা বা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তাঁর কোনো মহিমা প্রচার করেননি। অথচ ১৮৯১-৯২ খ্রিষ্টাব্দে ‘আবকারী’ নামে পত্রিকায় প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর বুনা জাতিকে ‘মনুষ্যত্ব’ পদবাচ্যে উন্নীত করেছেন মর্মে এক সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলে সারা ভারতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আজও বুনা জাতি মোহন্ত নামে পরিচিত।

এ যুগে সমাজের নিম্নস্তরের হীন-পতিতদের সেবায় নিবেদিত ছিলেন মহীয়সী নারী মাদার তেরেসা। প্রাচীনকালে অস্পৃশ্যতা বর্জন ও হরিজন আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন প্রাণপুরুষ মহাত্মা গান্ধী। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর এর বহু আগে ফরিদপুরের বুনা-বাগদী, কলকাতার রামবাগানের ডোমপল্লির অসভ্য নর-নারী, সোনাগাছির বারবনিতাদের উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বুনা-বাগদীদের ‘মোহন্ত’ ও ডোম পল্লিবাসীদের ‘ব্রজনন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

প্রভু সুন্দর কোনো জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমগ্র মানবগোষ্ঠী একটি জাতি। তার নাম নর জাতি। মানব জাতির ধর্ম মানবতা। আর মানবধর্মের মূল ভিত্তি মনুষ্যত্ব লাভ। 

তাঁর শুভ আবির্ভাব উৎসবে আমাদের শপথ হোক– জাতি ও বর্ণভেদ ভুলে গিয়ে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রেখে আমরা সবাইকে মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে তুলব।

সুবল চন্দ্র সাহা: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন স ন দর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসইসির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত

‘তারুণ্যের উৎসব–২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বুধবার (৬ আগস্ট) বিএসইসির উদ্যোগে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা লিংক জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত 

সহযোগী কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করবে কনফিডেন্স সিমেন্ট

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিশনের প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে কমিশনার, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।

এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ ও ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিবেশ ও প্রজন্মবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বিএসইসি।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রবি রিচার্জেই চরকিতে দেখা যাবে উৎসব–তাণ্ডব
  • নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
  • বিএসইসির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত
  • অস্ট্রেলিয়ায় ‘ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে’ বাংলাদেশ
  • প্রত্যাশা কি মেটাতে পারছেন রাজনীতিবিদেরা