এক চিঠিতে পুলিশের দুই ইউনিটে এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এই দুই ইউনিট হলো– গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) ও হাইওয়ে পুলিশ। উপপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদ মর্যাদার এই সদস্যরা দুই মাসে জিএমপি ও হাইওয়ে পুলিশে দায়িত্ব পালন শেষে পূর্বের ইউনিটে ফিরে যাবেন। 

গত ২৩ এপ্রিল পুলিশ সদর থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সেখানে বলা হয়, জিএমপি ও হাইওয়ে পুলিশ ফোর্সের মঞ্জুরি প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই কাজের চাপ বিবেচনা করে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। 

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাইওয়েতে একের পর এক ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে। আবার গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা গেছে। এ ছাড়া ঢাকার অন্যতম প্রবেশ মুখ গাজীপুর প্রায়ই শ্রমিকদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ থাকে।  

পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জিএমপিতে ৫০০ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পিবিআই থেকে ১০০ জন, পুলিশ টেলিকম থেকে ১০০ জন, সিলেট রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৫০ জন, বরিশাল রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৫০ জন ও সিআইডি থেকে ২০০ জন সদস্যকে জিএমপিতে মোতায়ন করা হয়েছে। 

এদিকে জিএমপির মঞ্জুরি কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৬০জন। ১ হাজার ৫৬০ জন কর্মরত ছিলেন। ৩০ এপ্রিল থেকে আরও ৫০০ জনের ফোর্স যুক্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে দেশের কয়েকটি জেলা থেকে ৭০০ জনের ফোর্স গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশে মোতায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে ১০০ জন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা থেকে ১০০ জন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে ১০০ জন, রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ১০০ জন, দিনাজপুর জেলা থেকে ৫০ জন, কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ৫০ জন, গাইবান্ধা জেলা থেকে ৫০ জন, রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৫০ জন, বরিশাল জেলা থেকে ৫০ জন ও পিরোজপুর জেলা থেকে ৫০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন ৫০০ জন মোতায়েনের পর জেএমপিতে মোট জনবল দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬০ জন। তবে বর্তমান কাঠামোতে তাদের পদের সংখ্যা এক হাজার ৬০টি। তবে নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব এরই মধ্যে পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠিয়েছে জিএমপি। সেখানে দুই হাজার ৮২৪টি পদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।  

হাইওয়ে পুলিশের এসপি ড.

আ.ক.ম. আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, গাজীপুর হাইওয়ে ঢাকার প্রবেশ মুখ ও ঢাকা সঙ্গে প্রায় ১০-১৫টি জেলার যোগাযোগ এখানে। সেই তুলনায় গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশে ফোর্সের সংখ্যা খুবই কম ছিল। আবার সামনে ঈদুল আজহা। তাই ফোর্সের চাহিদা চাওয়া হয়েছে। সেই বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

জিএমপির উপকমিশনার (প্রশাসন) জাহিদ হাসান সমকালকে বলেন, জিএমপির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ফোর্স খুবই কম। সম্প্রতি সময়ে জেল থেকে আসামি নিয়ে যাওয়া–আসায় ফোর্স লাগে। কিন্তু জিএমপির মঞ্জুরি কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১ হাজার ১৬০জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। অতিরিক্ত ৪০০ ফোর্স যুক্ত ছিল। আরও ৫০০ ফোর্স যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন থানা ও ইউনিটে তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ত য় ন কর জ এমপ র ইউন ট হ ইওয় সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

উন্নয়ন প্রকল্প যেন অপচয়ের প্রতীক না হয়

উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু এ লক্ষ্য ছাপিয়ে কেবল দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণেই যখন প্রকল্প সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তা উন্নয়ন নয়—একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও সম্পদের অপচয়ের নিদর্শনে পরিণত হয়। জামালপুর, রংপুর ও গোপালগঞ্জে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বর্তমান অবস্থা দেখে সেটিই স্পষ্ট হচ্ছে।

জামালপুরের মেলান্দহে ৫০ একর জমিতে নির্মিত ১৮টি ভবনের একটিও এখনো ব্যবহারে আসেনি। ভবনগুলোয় বাসা বেঁধেছে মাকড়সা, চত্বরজুড়ে ঝোপঝাড়, যন্ত্রপাতিতে জমেছে ধুলাবালু। রংপুরের তারাগঞ্জে নির্মিত ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন, গেস্টহাউস, মেডিকেল সেন্টার, লাইব্রেরি, কোয়ার্টার, হোস্টেলসহ সব ভবনই পড়ে আছে জনবল ও কার্যক্রমহীন। এসব ভবনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো যন্ত্রপাতি ও আসবাব অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। গোপালগঞ্জে সীমিত পরিসরে কিছু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চললেও প্রকল্প শুরুর আগে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি।

সরকারি নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করেছেন, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এই প্রশাসনিক দৈন্য কেবল একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান নয়; পুরো ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক অপচয় নয়; এটি পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার নিদর্শনও বটে।

এ প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তর করা। কিন্তু যেখানে জনবল নিয়োগই হয়নি, সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কীভাবে চলবে? জামালপুরে অনুমোদিত ১১০টি পদের একটিতেও নিয়োগ নেই মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ ছাড়া। রংপুরে ডিজি ও উপপরিচালক ছাড়া কারও নিয়োগ হয়নি। গোপালগঞ্জেও জনবলসংকট প্রকট।

এখানে প্রশ্ন ওঠে—এই প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা ও অনুমোদনের সময় কী পরিমাণ ভাবনাচিন্তা করা হয়েছিল? একটি প্রকল্প শুরু করার আগে এলাকাভিত্তিক চাহিদা, সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী ও বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করে শুধু নির্মাণকাজ শুরু করা হয় কেন—এ প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই দিতে হবে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন পর্যন্ত বলছে, এত একাডেমির প্রয়োজনই নেই। বরং খালি পড়ে থাকা ভবনগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য, কারিগরি শিক্ষা বা দক্ষতা প্রশিক্ষণ খাতে ব্যবহারের জন্য ইজারা দেওয়া যেতে পারে।

আমাদের দাবি, অবিলম্বে এসব প্রকল্প নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা হোক। যাঁরা এসব প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়নে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। ভবন নির্মাণের পেছনে কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ বা এলাকার নামে বরাদ্দ নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।  উন্নয়ন মানে শুধু দালান নয়, মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন—এই বোধ না ফিরলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কেবল অপচয়ের প্রতীক হয়েই থেকে যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উন্নয়ন প্রকল্প যেন অপচয়ের প্রতীক না হয়