এক চিঠিতে দু্ই ইউনিটে ১২০০ পুলিশ মোতায়েন
Published: 10th, May 2025 GMT
এক চিঠিতে পুলিশের দুই ইউনিটে এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এই দুই ইউনিট হলো– গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) ও হাইওয়ে পুলিশ। উপপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদ মর্যাদার এই সদস্যরা দুই মাসে জিএমপি ও হাইওয়ে পুলিশে দায়িত্ব পালন শেষে পূর্বের ইউনিটে ফিরে যাবেন।
গত ২৩ এপ্রিল পুলিশ সদর থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সেখানে বলা হয়, জিএমপি ও হাইওয়ে পুলিশ ফোর্সের মঞ্জুরি প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই কাজের চাপ বিবেচনা করে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করা হয়।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাইওয়েতে একের পর এক ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে। আবার গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা গেছে। এ ছাড়া ঢাকার অন্যতম প্রবেশ মুখ গাজীপুর প্রায়ই শ্রমিকদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ থাকে।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জিএমপিতে ৫০০ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পিবিআই থেকে ১০০ জন, পুলিশ টেলিকম থেকে ১০০ জন, সিলেট রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৫০ জন, বরিশাল রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৫০ জন ও সিআইডি থেকে ২০০ জন সদস্যকে জিএমপিতে মোতায়ন করা হয়েছে।
এদিকে জিএমপির মঞ্জুরি কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৬০জন। ১ হাজার ৫৬০ জন কর্মরত ছিলেন। ৩০ এপ্রিল থেকে আরও ৫০০ জনের ফোর্স যুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের কয়েকটি জেলা থেকে ৭০০ জনের ফোর্স গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশে মোতায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে ১০০ জন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা থেকে ১০০ জন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে ১০০ জন, রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ১০০ জন, দিনাজপুর জেলা থেকে ৫০ জন, কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ৫০ জন, গাইবান্ধা জেলা থেকে ৫০ জন, রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে ৫০ জন, বরিশাল জেলা থেকে ৫০ জন ও পিরোজপুর জেলা থেকে ৫০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে আসা হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন ৫০০ জন মোতায়েনের পর জেএমপিতে মোট জনবল দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬০ জন। তবে বর্তমান কাঠামোতে তাদের পদের সংখ্যা এক হাজার ৬০টি। তবে নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব এরই মধ্যে পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠিয়েছে জিএমপি। সেখানে দুই হাজার ৮২৪টি পদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের এসপি ড.
জিএমপির উপকমিশনার (প্রশাসন) জাহিদ হাসান সমকালকে বলেন, জিএমপির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ফোর্স খুবই কম। সম্প্রতি সময়ে জেল থেকে আসামি নিয়ে যাওয়া–আসায় ফোর্স লাগে। কিন্তু জিএমপির মঞ্জুরি কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১ হাজার ১৬০জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। অতিরিক্ত ৪০০ ফোর্স যুক্ত ছিল। আরও ৫০০ ফোর্স যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন থানা ও ইউনিটে তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ত য় ন কর জ এমপ র ইউন ট হ ইওয় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পসহ বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম দেশে নেই
ভূমিকম্পসহ বড় কোনো দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম দেশে নেই। গত ১৯ বছরে কেনা সরঞ্জামগুলোর অর্ধেকই মেয়াদোত্তীর্ণ বা অচল হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় ধাপে সরঞ্জাম সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, ৪ বছরে তার মাত্র ২০ শতাংশ কিনতে পেরেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহে অধিদপ্তর ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ২০২১ সালে। এর আগে ২০০৬ সাল থেকে দুই ধাপে ২১২ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। সংগৃহীত সরঞ্জামগুলো সশস্ত্র বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া ২০ শ্রেণির ৮০৭টি সরঞ্জাম অচল হয়ে পড়েছে।
৩৩ শ্রেণির ১৯১টি সরঞ্জাম মেরামতের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অচল হয়ে পড়া গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে স্প্রেডার, র্যাম জ্যাক, ব্রিদিং অ্যাপারেটাস, ক্রেন, এক্সকাভেটর, কংক্রিট কাটার, পাওয়ার চেইন স, ম্যানুয়াল ড্রিল মেশিন, হাইড্রোলিক এক্সকাভেটর ও হুইল ডোজার।
জমে থাকা কংক্রিটের স্তূপ সরানো, ভেঙে পড়া দেয়াল অপসারণ, সামনের বাধা অপসারণ করা, দেয়াল বা লোহার রড কাটা, আটকে পড়া মানুষের অক্সিজেনের সংকট হলে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজে এসব সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়।
ফায়ার সার্ভিসের মতে, ভূমিকম্পের সময় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে আছে গ্যাস ডিটেকটর, আটকে পড়া মানুষ শনাক্ত করতে লাইভ ডিটেক্টর, কংক্রিট কাটার, ক্রেন, ফর্কলিফ্টার, রোটারি হ্যামার ড্রিল, ব্রিদিং অ্যাপারেটাস, র্যাম জ্যাক, লক কাটার, সার্চ ভিশন ক্যামেরা, হাইড্রোলিক কাটার, রোটারি হ্যামার ড্রিল, চিপিং হ্যামার, হাইড্রোলিক এক্সকাভেটর।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র থেকে জানা গেছে, ৭ শ্রেণিতে ৩৫ ধরনের যন্ত্রপাতি তাদের প্রয়োজন। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ফায়ার ফাইটার স্যুট, কেমিক্যাল স্যুট, হিট প্রোটেকটিভ স্যুট, রেসকিউ স্যুট, কনফাইনড প্রোটেকটিভ স্যুট। এ ছাড়া ব্রিদিং অ্যাপারেটাস, কেমিক্যাল প্রোটেকশন ডিভাইস, ফায়ার ফাইটিং ড্রোন, রিফ্লেক্টিং হোস, মনিটর নোজল, পোর্টেবল গ্রাউন্ড মনিটর, হাই প্রেশার হোস, পোর্টেবল পেনিট্রেটর।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি মহাপরিচালক থাকাকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে আমরা কিছু সরঞ্জাম পেয়েছিলাম। এগুলোর অধিকাংশ এখন পুরোনো বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এসব সরঞ্জাম রাখা দরকার। এক জায়গায় থাকলে সেটা বড় দুর্যোগের সময় কোনো কাজে আসবে না।
আলী আহমদ খান আরও বলেন, সরঞ্জাম কেনা হলেও এগুলো চালানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। ফায়ার সার্ভিসের কোনো প্রশিক্ষণ একাডেমি নেই। বড় কোনো দুর্যোগ হলে বিদেশি অনেক উদ্ধারকারী দল আসবে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হলে ইন্টারন্যাশনাল অপারেশন অ্যান্ড রেসকিউ ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে হয়। সে ধরনের প্রশিক্ষণেও কেউ অংশ নেয় না। প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব পূরণ করতে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক তৈরির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই স্বেচ্ছাসেবকদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।
সরঞ্জাম সংগ্রহে কেন ধীরগতি২০০৬ সালে ‘ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার, অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প’ নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের প্রথম ধাপ। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৯ কোটি টাকা। পরের ধাপে (২০১৩-২০১৭) ১৪৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অধীনে গত ৪ বছরে লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশ সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
সরঞ্জাম সংগ্রহে ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কাজী শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান প্রকল্পের শুরুতে সরাসরি ক্রয়ের সুযোগ রাখা হয়েছিল। পরে তা পরিবর্তন করে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। পুরো প্রক্রিয়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে সময় লেগেছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও দুটি অর্থবছর আছে। বাকি সময়ে ৮০ শতাংশ সরঞ্জাম সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের কী ধরনের সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেটা স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আগে নির্ধারণ করতে হবে। আর যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আমাদের এখানে সরঞ্জাম সংরক্ষণ করার কথা, সেটা করা হয় না। আর যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আমাদের অন্যতম ঘাটতি আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। আমাদের অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু দেখা যায় প্রশিক্ষিত জনবল নেই। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে।’