মশা মারার যন্ত্র বানিয়ে বাণিজ্যিক সাফল্য থিংক ল্যাবসের
Published: 12th, May 2025 GMT
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হননি, দেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মশার কারণে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও অহরহ ঘটছে। মশার হাত থেকে সুরক্ষার জন্য কয়েল, স্প্রে, অয়েন্টমেন্ট প্রভৃতি উপকরণ রয়েছে। আবার বড় আকারে বিস্তার ঠেকাতে রয়েছে ফগার মেশিনের ব্যবহার। প্রায় সব কটি পদ্ধতিতেই রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার হয়, যা মানবশরীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
তবে রাসায়নিক বা কীটনাশকযুক্ত ওষুধের পরিবর্তে মশা নিধনে নতুন একটি যন্ত্র বানিয়েছে থিংক ল্যাবস নামের বাংলাদেশি এক প্রতিষ্ঠান। যন্ত্রটি বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা, বিপণিবিতানসহ যেকোনো খোলা জায়গায় স্থাপন করা যায়। যন্ত্রটি স্থাপনের দুই সপ্তাহের মধ্যেই ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
মশার মেশিন ছাড়াও প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান নিয়ে আরও কিছু যন্ত্র বানায় থিংক ল্যাবস। মাত্র ২০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত চার কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ করা হয়েছে। গত বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন ৪১ জন কর্মী।
থিংক ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আশিকুর রহমান তানিম। বর্তমানে থিংক ল্যাবসে তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন মালিকানা অংশীদার রয়েছেন। তানিম ২০০৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যান। পড়ালেখা শেষে সেখানেই কয়েক বছর তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করেন। তবে বাংলাদেশে ফিরে কিছু করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। সেই চিন্তা থেকেই গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে বিনিয়োগ নিয়ে ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর প্রতিষ্ঠা করেন ‘থিংক’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগ দেন একদল তরুণ বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও গবেষক। এই থিংক ল্যাবসেরই নিজস্ব আবিষ্কার ‘মশার মেশিন’। যেটি এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে।
যেভাবে কাজ করে যন্ত্রটি
আশিকুর তানিম জানান, মূলত নিশ্বাসের মাধ্যমে বের হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অনুসরণ করে প্রাণীদেহের কাছে পৌঁছায় মশা। এ কারণে থিংক ল্যাবের উদ্ভাবিত মশার মেশিনের একেবারে নিচে একটি ‘ট্র্যাপ’ চেম্বার রয়েছে। তার ঠিক ওপরে বিশেষ প্রলেপ দেওয়া সাকশন ফ্যান (যা বস্তুকণা নিজের দিকে টেনে নেয়) এবং তার ওপরে একটি বিশেষ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। মেশিনটি চালুর পর ফ্যানটি ঘুরতে থাকে। তখন প্রলেপটির সঙ্গে লাইটের আলোর একটি ফটোক্যাটালিটিক প্রক্রিয়া তৈরি হয়, যা মশার জন্য একটি শক্তিশালী ফাঁদ তৈরি করে।
মশা সাধারণত ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে নিজ থেকে উড়তে পারে না। স্ত্রী মশা যখন নির্দিষ্ট দূরত্বে চলে আসে, তখন যন্ত্রটির মাধ্যমে তৈরি হওয়া মানুষের মতো কৃত্রিম নিশ্বাসে আকৃষ্ট হয় ও ফাঁদে আটকা পড়ে। কোনো মশা যন্ত্রটির প্রবেশপথে একবার ঢুকে গেলে সাকশন ফ্যানের কারণে সেগুলো আর বের হতে পারে না এবং সরাসরি ট্র্যাপ চেম্বারে গিয়ে আটকে যায়। সেখানে ডিহাইড্রেড (পানিশূন্যতায়) হয়ে একপর্যায়ে মারা যায়। যন্ত্রটি ভবনের অভ্যন্তরে, প্রবেশদ্বার বা যেকোনো খোলা জায়গায় যেখানে মশার উপস্থিতি বেশি, সেখানে স্থাপন করা যায়।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, থিংকের মশা মারার যন্ত্রটি অন্যতম কার্যকর একটি ট্র্যাপ (ফাঁদ)। আমরা গবেষণার জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার পাঁচটি স্থানে এই যন্ত্রের মাধ্যমে মশা সংগ্রহ করেছি। তাতে দেখা গেছে, প্রতিটি যন্ত্রে দৈনিক পাঁচ হাজারের মতো স্ত্রী মশা (মৃত) জমা হয়। কবিরুল বাশার জানান, এই যন্ত্রের সুবিধা হলো, এটি মা মশা আটকায়। প্রতিটি মা মশা ৫০০ থেকে ৬০০ ডিম দেয়। তার মানে, এই যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মশার সংখ্যা ও বংশবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বর্তমানে ঢাকার উত্তরা, মিরপুর, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী, সাভারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও খোলা জায়গায় থিংক ল্যাবসের এই মশা মারার যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলায় গ্রাহকেরা যন্ত্রটি কিনে বসিয়েছেন। বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, সেনানিবাস, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁচ তারকা হোটেলেও মশা নিধনে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে।
যন্ত্রটি ২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে হয়। তবে এতে বিদ্যুৎ খরচ খুব কম। পুরোপুরি মেটাল কাঠামোতে বানানো যন্ত্রটি ঝড়বৃষ্টিসহ নানা ধরনের ঝুঁকি থেকেও মুক্ত। অত্যধিক ওজনের কারণে কারও পক্ষে এটি চুরি করে নেওয়াও কষ্টকর। তা ছাড়া কিছু মডেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সেন্সর লাগানো রয়েছে। সব মিলিয়ে এই যন্ত্রটি পাঁচ বছরের বেশি সময় স্থায়ী হবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে তিনটি আকারে যন্ত্রটি পাওয়া যায়। আকারভেদে দাম ৩১ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মশার মৌসুমের ওপরে নির্ভর করে মাসে গড়ে ৩০টি যন্ত্র বিক্রি হয়। তানিম বলেন, প্রভাব বিবেচনায় ও এককালীন স্থায়ী বিনিয়োগ হিসেবে যন্ত্রটির দাম খুব বেশি নয়। আর আমাদের বিশেষত্ব হচ্ছে—এটির যন্ত্রাংশ, প্রযুক্তি, কর্মী সব দেশীয়। ফলে বলতে পারেন, এটি শতভাগ দেশীয় পণ্য, যা বাংলাদেশিদের জন্যই বানানো।
আরও যেসব কাজ করে থিংক
মূলত গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান তৈরি করে দেয় থিংক ল্যাবস। মশার মেশিন ছাড়াও এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন৵ বেশ কিছু পণ্য তৈরি করেছে তারা। যেমন বেলজিয়ামের একটি কোম্পানির জন্য নয়েস মনিটরিং ডিভাইস তৈরি করেছে থিংক। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য ভ্যাকসিনের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের তারহীন সেন্সর বানিয়েছে তারা। আবার গ্যাসের সরবরাহ লাইনের তদারকি, জেনারেটরের ডিজেল পরিমাপ, হাইড্রোফোনিক উদ্ভিদের স্বয়ংক্রিয় তদারকি প্রভৃতি কাজের জন্য সেন্সর যন্ত্র বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আশিকুর তানিম বলেন, ‘আরঅ্যান্ডডি নিয়ে কাজ করতে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে আমাদের জন্য বিনিয়োগের চেয়েও সরকারের নীতিসহায়তা বেশি প্রয়োজন। দেশীয় প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বাড়ালে ও আমদানি নিরুৎসাহিত করলে আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সাড়ে ৮ বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত ৫৭, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা বদি আলম। ২০১৮ সালে মিয়ানমার সীমান্তে ঝাড়ুফুল কাটতে গিয়ে স্থলমাইন বিস্ফোরণে হারিয়েছেন তাঁর দুই পা। এর পর থেকেই চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। উপার্জন না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাঁর।
বদি আলমের মতো স্থলমাইন বিস্ফোরণের শিকার হয়ে অসহায় দিন কাটছে বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার অনেক বাসিন্দার। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের তথ্য, গত সাড়ে আট বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, দোছড়ি, সদর এবং রুমার রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের অন্তত ৫৭ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫ জন, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন।
মাইন বিস্ফোরণে আহত বদি আলমের স্ত্রী গুল ফরাস জানান, পাঁচ ছেলেমেয়ে রয়েছে তাঁদের। স্বামী বদি আলম আহত হওয়ার পর তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন। কিছুদিন ধরে তাঁর এক কিশোর ছেলেও সংসারের জন্য উপার্জন করছে। ভাঙাচোরা একটি বাড়ি ও ভিটা ছাড়া সম্বল কিছুই নেই। তাই পরিবার নিয়ে খুবই অর্থকষ্টে দিন যাচ্ছে তাঁদের।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা আমতলী এলাকার ফরিদুল আলম ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে পা হারান। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। এখন একটি বেসরকারি সংস্থার দেওয়া কৃত্রিম পা ও লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করেন, কিন্তু ভারী কাজকর্ম করতে পারেন না। বাবা মারা গেছেন। তিন ভাই ও তিন বোনের সবাই আলাদাভাবে বসবাস করেন। এক ভাইয়ের ঘরে বসবাস করছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, ‘খুব অসহায় জীবন যাপন করছি। বেশি দূরে হাঁটাচলা করতে পারি না। কেউ একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিল ভালো হতো।’
চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা সোনা আলী (৫০ ) ও সুরত আলীও (৪৫) মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছেন। তাঁরা জানান, বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর একদিকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। অন্যদিকে নিজেদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে দুঃসহ জীবন নিয়ে। কোনো কাজকর্ম করতে না পেরে পরিবারের বোঝা হয়ে থাকা কষ্টের বলে জানান দুজন।
পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হচ্ছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আশাতলী, জামছড়ি, ফুলতলী ও জারুলিয়াছড়ি সীমান্তের মানুষ। আগে এসব সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে ২০২৩ সাল থেকে এসব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)।চাকঢালার এক বাসিন্দা আমির উদ্দিন (২৭) সীমান্তের শূন্যরেখায় গিয়ে একটি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার। বলেন, শাশুড়ি ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে ছোট্ট একটি ঝুপড়িতে থাকেন তিনি। স্বামী নিখোঁজের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু চার মাস পার হলেও স্বামীর খোঁজ মেলেনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম বলেন, বিস্ফোরণে হতাহত পরিবারগুলোকে অসহায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা পা হারিয়েছেন, তাঁদের কষ্ট খুব বেশি।
পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হন। তখন থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হচ্ছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আশাতলী, জামছড়ি, ফুলতলী ও জারুলিয়াছড়ি সীমান্তের মানুষ। আগে এসব সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে ২০২৩ সাল থেকে এসব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)। গত বছর বান্দরবান পার্বত্য জেলার সঙ্গে মিয়ানমারের ২১০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এর পর থেকেই স্থলমাইনের বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে।
বিজিবির টহল ফাঁকি দিয়ে সেখানে গিয়ে লোকজন বিস্ফোরণে আহত হচ্ছেন, পা হারাচ্ছেন। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করলে সমস্যা হতো না। সীমান্ত এলাকার মানুষকে সব সময় সতর্ক করা হচ্ছে। যাঁরা শুনছেন না, তাঁরা হতাহত হচ্ছেনকর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, অধিনায়ক, রামু সেক্টর-কক্সবাজারআইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালের আগে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল খুবই কম। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দুটি ঘটনা ঘটে। তখন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে বিজিবি থেকে মিয়ানমারের বিজিপির কাছে প্রতিবাদ জানানো হতো। তবে এখন সীমান্তের ওপারের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে থাকায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো সম্ভব হয় না।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, মাইন বিস্ফোরণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে শুধু নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৩ জন পা হারিয়েছেন। গত বছরে ১০টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় পা হারান ১০ জন। ২০২৩ সালে মাইন বিস্ফোরণে চারজন পা হারিয়েছেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পা হারিয়েছেন ৯ জন। ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে পা হারান ৮ জন। ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন ৩ জন, এর পরের বছরগুলোয় দুজন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে নিহত ব্যক্তিরা সবাই রোহিঙ্গা। এর বাইরে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আরও ছয়জনের আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ভালুকখাইয়া এলাকায় সীমান্ত পারাপারের সময় মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে একটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা বদি আলম ২০১৮ সালে মিয়ানমার সীমান্তে ঝাড়ু কাটতে গিয়ে স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারান। এরপর থেকেই চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। সম্প্রতি তোলা