ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ ‘আস্থা’ এখন ৯ লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। ডিজিটাল জ্ঞানসম্পন্ন এত বড় গ্রাহকবেসকে সেবা দেওয়া ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের অবিচল আস্থার প্রতিফলন। এটি ব্র্যাক ব্যাংকের জন্য এক অনন্য মাইলফলকও বটে।

২০২১ সালে যাত্রা শুরু করা আস্থা অ্যাপ ডিজাইন করা হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের বৈচিত্র্যময় লাইফস্টাইল ও আর্থিক প্রয়োজন পূরণ করার লক্ষ্য নিয়ে। বর্তমানে এই অ্যাপ বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ও পছন্দের ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গ্রাহকেরা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে উপভোগ করতে পারছেন নানাবিধ ব্যাংকিং সেবা।

শুধু ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই আস্থা অ্যাপে প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতে মাসিক অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে এক নতুন বেঞ্চমার্ক।

আস্থা অ্যাপটি বিশেষত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এ অ্যাপ ব্যবহারকারী ৫৩ শতাংশ গ্রাহকেরই বয়স ২১ থেকে ৩৫-এর মধ্যে, যাঁরা ব্যাংকিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্য, সুবিধা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আবার আস্থা অ্যাপের লাইফস্টাইল ফিচার ব্যবহারকারীর ৬১ শতাংশই এই বয়সী তরুণ প্রজন্ম, যাঁদের কাছে এ অ্যাপ দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আস্থা অ্যাপের গ্রাহকেরা নিজেদের ব্যাংকিং লেনদেনের ৭১ শতাংশই সম্পন্ন করেন এ অ্যাপের মাধ্যমে। গ্রাহকেরা যে ‘মোবাইল ফার্স্ট’ ব্যাংকিং সলিউশনের দিকে ঝুঁকছেন, এটি তারই উদাহরণ।

আস্থা অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকেরা যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে নিজেদের দৈনন্দিন ব্যাংকিং প্রয়োজন পূরণ করতে পারছেন। এখানে প্রতিটি সেবা নেওয়ার প্রক্রিয়া গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত সহজ। এনপিএসবি ও আরটিজিএসের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে রিয়েল টাইম ফান্ড ট্রান্সফার থেকে শুরু করে গ্রাহকেরা এ অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল টপআপসহ বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধও করতে পারছেন ঝামেলাহীনভাবে। এ ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার ফলে গ্রাহকদের এখন আর ব্রাঞ্চে যেতে হচ্ছে না কিংবা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এখানে নেই কোনো ট্রানজেকশন ফি। গ্রাহকেরা হাতের নাগালেই পাচ্ছেন নিরাপদ ও সুরক্ষিত ব্যাংকিং সেবা।

গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পনাও সহজ করেছে আস্থা অ্যাপ। গ্রাহকেরা খুব সহজেই আস্থা অ্যাপের মাধ্যমে এফডিআর ও ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি সেগুলো এনক্যাশও করতে পারছেন এখান থেকে। এ ছাড়া এ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকেরা পিন জেনারেট কিংবা রিসেট করা, কার্ড সাময়িকভাবে ব্লক করা, এমনকি নমিনির তথ্যও হালনাগাদ করতে পারছেন খুব সহজেই। যাঁরা দ্রুততা এবং পরিকল্পিত আর্থিক সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দেন, এই সেবাগুলো তাঁদের জীবনকে করেছে আরও সহজ ও নিশ্চিন্ত।

আস্থা অ্যাপের ‘ক্যাশ আউট বাই কোড’ ফিচারের মাধ্যমে এটিএম থেকে কার্ড ব্যবহার ছাড়াই খুব সহজে টাকা উত্তোলন করা যায়, যা গ্রাহকদের জন্য উন্মোচন করেছে প্রচলিত এটিএম ট্রানজেকশনের এক আধুনিক বিকল্প ব্যবস্থা। বিকাশ, রকেট ও ইনস্যুরেন্স পেমেন্টের মতো পৌনঃপুনিক লেনদেনগুলোকে স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন ফিচারের আওতায় নিয়ে আসা যায়। ফলে গ্রাহক ভুলে গেলেও বিল পেমেন্ট হয় সময়মতো। বিকাশের ‘পুল মানি’ ফিচারটির মাধ্যমে যোগ হয়েছে আরও বিশেষ সুবিধা। আস্থা অ্যাপের এ সুবিধার ফলে গ্রাহকেরা বিকাশ থেকে তাঁদের ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে সরাসরি টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেন।

আস্থা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সহজ ও সুবিন্যস্ত। গ্রাহকেরা অ্যাকাউন্ট নম্বর, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর, কিংবা ডিপিএস নম্বরের মাধ্যমেই এখানে সাইন-আপ করতে পারেন। এ কারণে প্রক্রিয়াটি সবার কাছেই সহজবোধ্য। এ অ্যাপের মাধ্যমে ইকেওয়াইসিভিত্তিক অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কার্ড ও ঋণের আবেদনও এখান থেকে সহজেই করা সম্ভব। এ ছাড়া আস্থা অ্যাপে ব্র্যাক ব্যাংকের সব এটিএম বুথ, ব্রাঞ্চ ও মার্চেন্ট লোকেশন বের করা যায়, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ব্যাংকিং ও লাইফস্টাইলের দারুণ সংমিশ্রণ সবার কাছে আস্থা অ্যাপকে করে তুলেছে অনন্য। এখানে গ্রাহকদের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুকে একসঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছে। ‘আস্থা লাইফস্টাইলের’ মাধ্যমে গ্রাহকেরা বাসের টিকিট কাটতে পারেন, বিনা মূল্যে প্রথম আলোর ই-পেপার পড়তে পারেন, ‘আস্থা প্লে’র মাধ্যমে গান শুনতে পারেন, এমনকি ‘আস্থা লার্নিং’–এর মাধ্যমে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন কোর্সও করতে পারেন। ‘আস্থা ইসলামিক’-এ রয়েছে এমন সব কনটেন্ট, যেখানে একজন গ্রাহক খুঁজে পাবেন আত্মিক সন্তুষ্টি। এখনকার গ্রাহকদের দরকার ব্যাংকিংয়ের চেয়েও বেশি কিছু। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েই ব্র্যাক ব্যাংক আস্থা অ্যাপে যুক্ত করেছে দারুণ সব ফিচার।

গ্রাহকদের আর্থিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনায়ও আস্থা অ্যাপ ভূমিকা রাখছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স সার্টিফিকেট, চেকবুক কনফারমেশন মুহূর্তেই পাওয়া যায়। এতে আছে ‘পজিটিভ পে’, যা এসএমই গ্রাহক, স্যালারি অ্যাকাউন্টহোল্ডার ও স্বনির্ভর পেশাজীবীদের জন্য জরুরি এক ফিচার। আস্থা অ্যাপের বিল পেমেন্টের ঝামেলাহীন প্রক্রিয়ায় সহজেই ইউটিলিটি বিল এবং সরকারি বিভিন্ন পেমেন্টসহ ভূমি করের মতো পেমেন্টও করা যায়। এসব সুবিধা দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গ্রাহকদের দেয় বাড়তি সুবিধা।

এই প্ল্যাটফর্ম যত বড় হচ্ছে, ততই এর প্রভাবও বাড়ছে। ৯ লক্ষাধিক ব্যবহারকারীর এ প্ল্যাটফর্ম শুধু বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যাংকিংকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িতই করছে না; বরং একই সঙ্গে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রসার, মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য এবং ব্যাংকিংয়ে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের বিকাশ ঘটাচ্ছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা অ্যাপ সম্পর্কে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আস্থা শুধু একটি অ্যাপই নয়, এটি বাংলাদেশের কোটি মানুষের স্মার্ট ভবিষ্যতের এক নতুন দুয়ার। এ অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি উদ্ভাবন, গ্রাহককেন্দ্রিকতা এবং সহজ ব্যাংকিংয়ের প্রসারে আমাদের ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, স্বাচ্ছন্দ্যময়, নিরাপদ, সহজ ও স্মার্ট ব্যাংকিং সুবিধার মাধ্যমে আস্থা বাংলাদেশের মানুষের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাকে বদলে দেবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হকদ র দ প ল য টফর ম অ য ক উন ট গ র হক র ব যবহ র ল নদ ন র জন য আর থ ক সহজ ই

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি বিশ্বকাপ ২০৩৪ : বাংলাদেশি জনশক্তির বড় সুযোগ

ফিফার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন– ২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ হবে সৌদি আরবে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে লাখো সৌদি নাগরিকের উল্লাস শুধু ফুটবলপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং দেশটির অর্থনৈতিক রূপান্তরের সম্ভাবনার উদযাপন। কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরব অর্থনীতিকে তেলনির্ভরতা থেকে বহুমুখী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পর্যটন ও ক্রীড়া খাতের বিকাশে বিপুল বিনিয়োগ করছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে সৌদিতে নিয়ে আসা, এমনকি লিওনেল মেসিকে নেওয়ার প্রচেষ্টা– এ সবই তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। হজ ব্যবস্থাপনার মতো জটিল বিষয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রমাণ করে– সৌদি আরব আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার পথে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ সৌদির অর্থনৈতিক রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি। এই মহাপরিকল্পনার অধীনে নিওম, কায়েদিয়া, দিরিয়াহ, রোশন, কিং সালমান পার্কের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য অত্যাধুনিক শহর, বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র, বিনোদন হাব এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, যা সৌদি অর্থনীতিকে নতুন খাতে প্রসারিত করবে। একসময় তেলের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতির চাকা ঘুরলেও এখন তারা অন্যান্য প্রকল্পের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সৌদি আরবে বিপুল দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরি করবে। বর্তমানে ৩০ লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদিতে কর্মরত। কিন্তু দেশটির কঠোর শ্রমনীতি ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে তাদের আয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। আগে নির্মাণ খাতে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন থাকলেও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগ কমে আসছে। কাতার বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম নির্মাণে বাংলাদেশের কর্মীদের বড় অংশগ্রহণ থাকলেও দক্ষতার অভাবে তারা উচ্চ পর্যায়ের পদে কাজ করার সুযোগ পাননি।
দুঃখজনক, বাংলাদেশি জনশক্তির বেশির ভাগই অদক্ষ হওয়ায় তারা প্রবাসে ভালো বেতনে কাজ করতে পারেন না। বিশেষত ইংরেজি ও আরবিতে দক্ষতার অভাবে কাজে দক্ষ হয়েও ভালো পদে যেতে পারেন না। অনেক সময় দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে কম বেতনের বা অস্তিত্বহীন চাকরির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসার ঘটনাও ঘটে। শ্রম আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ভাষাবিষয়ক বাধা তাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।

২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সামনে রেখে বৈশ্বিক বড় বড় ব্র্যান্ড সৌদিতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করবে। ফলে ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, আইটি, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘হোয়াইট কলার’ বা উচ্চমানের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। পর্যটন খাতে ট্যুর গাইড, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, রিসেপশনিস্টসহ বিভিন্ন পদে বিপুসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে। পরিবহন খাতেও দক্ষ ড্রাইভারের চাহিদা বাড়বে। এখানেই বাংলাদেশের জন্য লুকিয়ে আছে বিশাল সম্ভাবনা। আমাদের বিপুলসংখ্যক মাদ্রাসা-শিক্ষিত তরুণ আরবি ভাষায় পারদর্শী। তাদের যদি সঠিক ইংরেজি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্যুর গাইড, অনুবাদক বা রিসেপশনিস্ট হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তা হবে অভাবনীয় পরিবর্তন। একইভাবে ইলেকট্রিক্যাল, প্লাম্বিং, এইচভিএসি টেকনিশিয়ান, ওয়েল্ডার, ফ্যাব্রিকেটর, মেশিন অপারেটর, ফুড সাপ্লাই বা নিরাপত্তা কর্মী– এসব খাতে লাখো তরুণকে আধুনিক কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। এমনকি বুয়েটসহ দেশের নামকরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সৌদির নির্মাণ খাত হতে পারে ইউরোপ বা আমেরিকার বিকল্প কর্মক্ষেত্র। এই মেগা প্রকল্পগুলোতে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কারিগরি বিশেষজ্ঞের চাহিদা থাকবে।

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ তরুণ শিক্ষাজীবন শেষ করেন। অথচ তাদের মধ্যে প্রায় ৯ লাখই চাকরির বাইরে থেকে যান। দেশের এই বিশাল বেকারত্বের সমাধান হতে পারে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণদের যুক্ত করা। কিন্তু দুঃখজনক, দক্ষ জনবল রপ্তানির জন্য সরকারের এখনও সুসংগঠিত জাতীয় কৌশল নেই। ভারত, পাকিস্তান, এমনকি নেপালের মতো দেশও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ‘হোয়াইট কলার’ বা উচ্চমানের চাকরিতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ফিফা বিশ্বকাপ ২০৩৪ সামনে রেখে দেশব্যাপী সমন্বিত ও কার্যকর দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। এ পরিকল্পনায় সৌদি আরবের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরবি জানা তরুণদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারে এবং উচ্চ পদে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করে।

ড্রাইভিং (ভারী ও হালকা উভয়), ইলেকট্রিক্যাল, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, পর্যটন, নির্মাণ নকশা, আইটি সাপোর্ট, স্বাস্থ্যসেবা সহকারী– এসব খাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এসব প্রশিক্ষণ হাতে-কলমে এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।

বুয়েটসহ আমাদের প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের বড় বড় প্রকল্পের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। সৌদি আরবে একটি স্থায়ী বাংলাদেশি কনসালট্যান্সি সেবা চালু করা যেতে পারে, যা দক্ষ ও শিক্ষিত তরুণদের সঠিক কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরবের শ্রম আইন, সংস্কৃতি ও কর্মপরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করা উচিত।
২০৩৪ সালের বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন সামনে রেখে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা: হয় আমরা এই বিশাল সুযোগ হাতছাড়া করব, নয়তো দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের তরুণদের জন্য সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করব। 
সময় এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সময় এখন কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন মাত্রা যোগ করতে।

আকরাম হুসাইন: সাবেক ডাকসু নেতা 
hossaincf@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘প্রাসাদের’ বৈদ্যুতিক সকেটও সোনা দিয়ে মোড়ানো
  • সৌদি বিশ্বকাপ ২০৩৪ : বাংলাদেশি জনশক্তির বড় সুযোগ
  • ফুসফুসের সুরক্ষায়
  • ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ চুক্তি হচ্ছে বলে জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • কবুতর থেকে ল্যাবরেডর কুকুর, সবই আছে খুলনার যে হাটে
  • সুতা বা চুল পেঁচিয়ে আঁচিল ঝরালে কী হয় জানেন
  • মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু : ট্রেন্ডের ফাঁদে সিনেমা