গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার মধ্যেই ইসরায়েল হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে অন্তত ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খান ইউনুসের ইউরোপীয় হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ে বোমা হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
হামলার তীব্রতার কারণে কিছু মৃতদেহ হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। গত মঙ্গলবার রাতে উত্তর গাজার হাসপাতালেও ভারী বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পূর্ণ শক্তি নিয়ে গাজায় সেনা প্রবেশের ঘোষণা দেওয়ার পরই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। দখলদার বাহিনীর দাবি, হাসপাতালে হামলার লক্ষ্য হামাসপ্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা। হামাস জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর হত্যাযজ্ঞ গাজায় ইসরায়েলের পতন ডেকে আনবে।
বিবিসি জানায়, রাতের হামলায় উত্তর জাবালিয়া এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতের হামলায় উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হন। জাবালিয়া শহর এবং শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে ২২ শিশু ও ১৫ নারী রয়েছেন। অনলাইনে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে মেঝেতে কমপক্ষে এক ডজন মৃতদেহ দেখা গেছে।
এদিকে গাজায় মার্কিন-ইসরায়েল বিতর্কিত মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ। এর পরিবর্তে ইসরায়েলকে গাজার ওপর থেকে দুই মাসের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। যুক্তরাজ্যের জাতিসংঘ দূত বারবারা উডওয়ার্ড ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সহায়তা পুনরায় প্রবেশে জাতিসংঘকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং মানবিক সহায়তা নিয়ে বলেন, মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা জঘন্য মানসিকতার পরিচয়।
সৌদি আরব সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় সংঘাত বন্ধ করার জন্য কাজ করছেন। সব পক্ষের বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু নেতানিয়াহু বলেছেন, এমন অবস্থা তৈরি করা হবে, যাতে যুদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি গাজায় আর না থাকে।
ত্রাণ সহায়তা প্রকল্পের আড়ালে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে এমন তথ্য উঠে এসেছে আলজাজিরার প্রতিবেদনে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ঘটনায় জানা যায়, ওই সময় গাজায় ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র মিলে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর আগে এক মাস ধরে মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখা হয়। পরে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত ঠিকাদারের মাধ্যমে আটা সরবরাহের ব্যবস্থা করে এবং জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষের বুকে গুলি চালানো হয়। ট্যাঙ্কগুলো আহতদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে অন্তত ১১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনাটি ‘ময়দার গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫২ হাজার ৯০৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন আহত হয়েছেন। এদিকে কাতারের দোহায় যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। কাতারের মধ্যস্থতায় এই আলোচনায় ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। এতে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি যুদ্ধ অবসানের আলোচনায় অগ্রগতির প্রত্যাশা করেছেন।
অন্যদিকে, গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ট্রাম্পের উপস্থিতিতে জিসিসি নেতাদের বৈঠকে তিনি বলেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ। আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি ‘নতুন দিগন্ত উন্মোচন’ হবে।
গাজার জাতিসংঘ সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধ অব্যাহত থাকায় উপত্যকায় পানি সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, একরাতে নিহত ৮১
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজায় হাসপাতালে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। আর উত্তর গাজায় হামলায় মধ্যরাতের পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৫১ জন। মূলত হাসপাতালে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই উত্তর গাজায় ওই হামলা চালায় ইসরায়েল।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে এবং মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে চিকিৎসকরা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৫ জন উত্তর গাজায় নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা বলছে, দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় এবং নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩০ জনকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই সর্বশেষ হামলাগুলো শুরু হয়েছে। হাসপাতালে হওয়া ওই হামলায় নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসা একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৫২ হাজার ৯০৮ জনে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও প্রায় ৭ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।