গল্প আড্ডা আনন্দ স্মৃতিচারণে ৯৮-৯৯ ব্যাচের পুনর্মিলনী
Published: 16th, May 2025 GMT
পাস করে যাওয়ার পর আর আসা হয়নি। আমার কনভোকেশনও নিইনি। প্রায় ২০ বছর পর এবারই প্রথম এলাম। এসে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আগেও আসা দরকার ছিল। পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়েছে, কলাভবনে ঘুরে এলাম; এখানে ক্লাস করেছি, গল্প করেছি, আড্ডা দিয়েছি। রোকেয়া হলে থেকেছি, লাইব্রেরি … আগের কথাগুলো মনে পড়ছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কত বছর পর! এখন তো একেকজনের জীবন একেক রকম।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে ১৯৯৮-৯৯-এর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে এভাবেই স্মৃতিচারণ করলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী রোকসানা পারভীন। বর্তমানে তিনি ডেমরা তাঁর বাসার কাছাকাছি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
পুনর্মিলনী উপলক্ষে এদিন টিএসসি চত্বরে ছিল দেশের নানা প্রান্ত থেকে ১৯৯৮-৯৯ বর্ষের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভিড়। তারা বর্তমানে কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ‘বন্ধুত্বের ২৬ বছর’ নাম নিয়ে এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন গল্প, আড্ডা, আনন্দ আর স্মৃতিচারণে। ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মারক উপহার, ছবি তোলা, কুইজ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ নানা কর্মসূচি।
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী উম্মে জাকিয়া সূচি বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তিনি বলেন, এখন তো প্রফেশনাল লাইফে ঢুকেছি, কারও সঙ্গে দেখা হয় না। নিত্যদিনের জীবনে অনেক ঝামেলা-চাপ থাকে। আজকের দিনটায় হালকা লাগছে। যেন সেই ফার্স্ট ইয়ারের ক্যাম্পাস জীবনে ফেরত চলে এসেছি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ইলিয়াস হোসেন জানান, বর্তমানে তিনি প্রথম সারির একটি পত্রিকায় কর্মরত। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এখনও বন্ধুদের সান্নিধ্য পেলে মনে হয় ইউনিভার্সিটির সেই তারুণ্যদীপ্ত সময়ে ফেরত গেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর ২০ বছর পার হলেও মনে হয় বন্ধুত্ব আগের মতোই আছে।
মাস্টারদা সূর্য সেন হলের মার্কেটিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মোহাম্মদ আলম সরকার বলেন, সব বন্ধুর সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেছি। র্যা লিতে অংশ নিলাম। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। খুবই ভালো লাগছে।
পুনর্মিলনী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শেখ সেলিম রেজা বলেন, সবার আগে আমরা, আমাদের বন্ধুত্ব। জীবনে যত ব্যস্ততা থাকুক, আমরা প্রতিবছর মিলিত হতে চাই। এবার ঘোষিত হবে আগামী বছর কবে অনুষ্ঠানটি হবে। এই মিলনমেলা আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজ্জাক-ছফার এক জীবন
মহাকবি আলাওল লিখেছেন, ‘গুরু মুহম্মদে করি ভক্তি, স্থানে স্থানে প্রকাশিত নিজ মনোউক্তি’। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটির বৈশিষ্ট্য আহমদ ছফা নিজেই শনাক্ত করেছেন আলাওলের লেখা এই পঙ্ক্তি দিয়ে। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বইটি প্রকাশের আগে দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে দীর্ঘ চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এই লেখা। অনেকেই সেই সময়ে লেখাটির প্রশংসা করেছিলেন। অনেকেই বলেছিলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের জবানিতে লেখা কথাগুলো আহমদ ছফা নিজে বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন। অবশ্য মুখবন্ধে লেখক দাবি করেছেন, ‘আমার শিক্ষক অধ্যাপক রাজ্জাকের অনন্য ব্যক্তিত্বের মহিমা আমি যেভাবে অনুভব করেছি, অন্তত তার কিছুটা উত্তাপ দশজনের কাছে প্রকাশ করি।’
‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই হিসেবে প্রকাশের সময় অধ্যাপক রাজ্জাক বেঁচে ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭০ সাল থেকে নিয়মিত অধ্যাপক রাজ্জাকের কাছে যাওয়া-আসা করতেন আহমদ ছফা। তাঁর ভাষায়, তাঁর কাছে অধ্যাপক রাজ্জাক ‘একদিনের জন্যও পুরানো হয়ে যাননি’। অধ্যাপক রাজ্জাকের বহুমাত্রিক দিক পাঠকের কাছে উন্মোচন করেছেন লেখক। সমালোচক-পণ্ডিতেরা এমনটাই মনে করেন।
অধ্যাপক রাজ্জাকের সংস্পর্শে এসে মানুষ হিসেবে চিন্তার কাঠামো-দেখার ভঙ্গি বদলে গিয়েছে—এ কথা নিঃসংকোচেই বলেছেন লেখক। অধ্যাপক রাজ্জাককে পিএইচডির সুপারভাইজার হিসেবে চেয়েছিলেন ছফা। এই অনুরোধ থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ইতি টেনে শুরু হয় গুরু-শিষ্যের জ্ঞানজগতের সম্বন্ধ। যদিও বইটিতে ছফা উল্লেখ করেছেন, প্রচলিত নিয়ম ভেঙে সুযোগ দেওয়ার পরও তাঁর পক্ষে পিএইচডি করা সম্ভব হয়নি। পিএইডি শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি অধ্যাপক রাজ্জাকেই দায়ী করেছেন।
যদ্যপি আমার গুরু, আহমদ ছফা, প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮