Samakal:
2025-09-18@01:21:09 GMT

আলোকচিত্রে গণমানুষের জীবন

Published: 16th, May 2025 GMT

আলোকচিত্রে গণমানুষের জীবন

সমুদ্রের তীরে দুই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। গভীর মনোযোগ দিয়ে তাঁর চুল-দাড়ি কাটছেন আরেকজন। কিছুক্ষণ পরপর ঢেউ এসে দু’জনের পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পাশে চোখ ফেরালে আরেক দৃশ্যে নজর আটকায়। পরিত্যক্ত এক জোড়া জুতা পায়ে ময়লার বিশাল স্তূপ থেকে লাফিয়ে নামছেন এক মধ্যবয়সী নারী। তাঁর হাতে নোংরা প্লাস্টিকের বস্তা। আরেকটু দূরের ফ্রেমে নজর রাখলে দেখা মেলে নিখাদ আনন্দের। রেলপথের পাশের দুটি খুঁটিতে দড়ি বেঁধে দোলনা বানিয়ে একে অপরের ওপর মুখোমুখি বসে দুলছে দুই পথশিশু। তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। এমনই বিচিত্র সব দৃশ্যের প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে। জুলাই আন্দোলন থেকে শুরু করে নিত্যজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে দর্শকদের সামনে তুলে এনেছেন দেশের আলোকচিত্র সাংবাদিকরা।
দেশের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও সাহসিকতা উদযাপনের লক্ষ্যে টানা চতুর্থবারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট ২০২৫’-এর আয়োজন করে দৃক। ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত ছবি আহ্বানের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতাটি যাত্রা করে এবং ২৫২ জন আলোকচিত্র সাংবাদিক গত বছরব্যাপী তোলা ছবি জমা দেন। জমা পড়ে ১ হাজার ৩১০টি ছবি। এর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাণ-প্রকৃতি ও তথ্যচিত্রনির্ভর ৩১টি ছবি নিয়ে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে আজ ১৭ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। জায়গা সংকুলানের কারণে আরও ছবি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান আয়োজকরা।
এ বছরের সাতজন বিজয়ী যথাক্রমে ‘পিকচার অব দ্য ইয়ার ২০২৪’ হয়েছেন আলোকচিত্র সাংবাদিক আশরাফুল আলম। রাজনীতি বিভাগে বিজয়ী হন কাজী সালাহউদ্দিন রাজু এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন ড.

কুমার বিশ্বজিৎ। জনস্বার্থে সাংবাদিকতায় বিজয়ী হয়েছেন এম ইউসুফ তুষার এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন মো. আবু নোমান অমিত। শিল্প, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিভাগে বিজয়ী হন জহির আহাম্মেদ শাকিল এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন রাশেদ সুমন। ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট ২০২৫’-এ বর্ষসেরা আলোকচিত্রের জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে বিজয়ীদের ৫০ হাজার টাকা এবং সম্মাননাপ্রাপ্তদের ১০ হাজার টাকার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে সম্মাননা স্মারক ও সনদ। বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্টের অধীনে এবার ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী 
গ্রান্ট ২০২৫’ অর্জন করেছেন সমতলের আদিবাসী গারো আলোকচিত্রী জাজং নকরেক। এ প্রদর্শনীতে ২০২৪ সালের আদিবাসী গ্রান্টজয়ী ডেনিম চাকমার ছবি স্থান পেয়েছে। তেমনি ২০২৬-এর প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী জাজং নকরেক তুলে ধরবেন তাঁর কাজ। এবারের বিচারক প্যানেলে অংশ নিয়েছেন চাকমা সার্কেল চিফ উপদেষ্টা এবং মানবাধিকারকর্মী রানী য়েন য়েন, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার স্থানীয় সাংবাদিক তানভীর চৌধুরী, প্রথম আলোর বিশেষ আলোকচিত্র সাংবাদিক জাহিদুল সেলিম এবং দৃকের প্রতিষ্ঠাতা, আলোকচিত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. শহিদুল আলম।
বর্ষসেরা আলোকচিত্র নির্বাচিত হয় আশরাফুল আলমের তোলা মব ভায়োলেন্সের একটি ছবি। তিনি ১১ বছর প্রথম আলো পত্রিকায় আলোকচিত্রী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন ফ্রিল্যান্সার অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটি প্রসঙ্গে আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘ওইদিন ছিল ১০ নভেম্বর, নূর হোসেন দিবস। আওয়ামী লীগের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ওরা মাঠে নামবে। সে জন্য সকাল থেকেই উত্তেজনাটা সেখানে ছিল। ওখানে ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়। আমার ছবিটার ঘটনা বিকেলের দিকের। আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাই। ওখানে কিছু না পেয়ে আমি খবর পাই, আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের সামনে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়েছে। সেখানে আসার পর আমি দেখলাম, কিছু মানুষকে ধরে মারধর করা হচ্ছে। বেশকিছু ছেলেকে মারধর করা হয়। এক নারী ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্দেহজনক গতিবিধি থাকার কারণে ওরা তাঁকে ধরে। ওই নারী বারবার বলছিলেন, ‘আমি কোনো দলের না। আমি যাচ্ছিলাম এ পথ দিয়ে।’ তাঁর কথা কেউ শোনেনি। তাঁকে মারতে মারতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে থেকে স্টেডিয়ামের দিকে নিয়ে আসে। ছবিটা স্টেডিয়ামের রাস্তায় তোলা। আমি ধাক্কাধাক্কিতে ৩-৪টার বেশি ছবি তুলতে পারিনি।’’
আশরাফুল আলম আরও বলেন, ‘কথিত মব জাস্টিস নিয়ে আমি তখন ভালো ছবি খুঁজছিলাম। ওইটা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। বাংলাদেশে এমন সময় আর আসেনি, যেখানে কোনো বিচারকাজ নাই, যাকে যেভাবে খুশি মারতে পারছে। ছবিটার কথা যখন ভাবি, তখন আমার কাছে মনে হয়, নারী বলেই শুধু নয়, কোনো মানুষকেই এভাবে মারা উচিত নয়। দ্বিতীয় কথা হলো– একজন নারীকে এত পুরুষ মিলে মেরেছে; শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে– আমার কাছে মনে হয়েছে, এ ছবিটা একটা ইতিহাসের অংশ। পরে কখনও কেউ এ ছবিটি দেখলে মনে করবে, এক সময় বাংলাদেশে এমন প্রশাসনিক পরিস্থিতি চলছিল। আমি এমন ছবি কামনা করি না, এমন ঘটনা ঘটুক, তাও আমি চাই না।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটোর কাজটা মূলত বাংলাদেশের পেশাজীবী সাংবাদিকদের বিগত বছরের সেরা কাজগুলো তুলে ধরা। বর্ষসেরা পুরস্কার একটা দেশের, একটা বছরের ঘটনাবলি তুলে ধরতে সাহায্য করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকে, যা নিয়ে আলোচনা কম হয়, সেটিকে যেমন রাখার চেষ্টা করি; তেমনি জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ও রাখার চেষ্টা করি।’ 
জনমুখী সাংবাদিকতা বিভাগে এবার একটি ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। একজন নারী বাচ্চাসহ যিনি বাসে উঠতে চাচ্ছেন; কিন্তু কন্ডাক্টর তাঁকে গলায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের দেশে গণপরিবহন যে নারীবান্ধব নয়, এ একটা ছবি তা আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আমরা অনেক বড় বিষয় নিয়ে কথা বলি, কিন্তু অনেক সময় এ ছোট ছোট বিষয় চোখ এড়িয়ে যায়; যা ছবির মাধ্যমে উঠে আসে। একজন নিম্নবিত্ত মানুষ, তার প্রতিদিনকার যাতায়াতের বাহন হয়তো বাস। তাঁর বেশভূষা ও নারী হওয়ায় তাঁকে বাসে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ঘটনাগুলো আমাদের আলাপ-আলোচনার অংশ হওয়া উচিত বলে মনে করেন রেজাউল করিম। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল আলম

এছাড়াও পড়ুন:

ভোট ম্যানুয়ালি গণনার আবেদন করলেন উমামা ফাতেমা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট ম্যানুয়ালি (হাতে) গণনা করার আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা। সোমবার প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি।

আবেদনে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘আমরা স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের পক্ষ থেকে সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচনকেন্দ্রিক স্বচ্ছতা যাচাইকরণের উদ্দেশ্যে প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটদাতাদের তালিকার কপি, ওএমআর মেশিনের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি পুনরায় ভোট গণনা এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশের সিসিটিভি ফুটেজ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার অনুরোধ করছি।’

৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। ওই দিন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা চলার মধ্যে রাত সোয়া তিনটার পর ফেসবুকে এক পোস্টে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন উমামা ফাতেমা।

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাদিক কায়েম। তিনি পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। অন্যদিকে ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা।

আরও পড়ুনডাকসুর ২৮ পদে কার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো, জয়ের ব্যবধান কত১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • জানুয়ারি থেকে বিশেষ বৃত্তি পাবেন জবি শিক্ষার্থীরা
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন অংশ নিল ভারত
  • তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৫৪ পদের চাকরি, করুন আবেদন
  • বাংলাদেশে সফরের সূচি জানিয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • রাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়া চলছিল, ‘অবাক করে দিয়ে’ হাজির মার্কিন কর্মকর্তারা
  • ভোট ম্যানুয়ালি গণনার আবেদন করলেন উমামা ফাতেমা