সমুদ্রের তীরে দুই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। গভীর মনোযোগ দিয়ে তাঁর চুল-দাড়ি কাটছেন আরেকজন। কিছুক্ষণ পরপর ঢেউ এসে দু’জনের পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পাশে চোখ ফেরালে আরেক দৃশ্যে নজর আটকায়। পরিত্যক্ত এক জোড়া জুতা পায়ে ময়লার বিশাল স্তূপ থেকে লাফিয়ে নামছেন এক মধ্যবয়সী নারী। তাঁর হাতে নোংরা প্লাস্টিকের বস্তা। আরেকটু দূরের ফ্রেমে নজর রাখলে দেখা মেলে নিখাদ আনন্দের। রেলপথের পাশের দুটি খুঁটিতে দড়ি বেঁধে দোলনা বানিয়ে একে অপরের ওপর মুখোমুখি বসে দুলছে দুই পথশিশু। তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। এমনই বিচিত্র সব দৃশ্যের প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে। জুলাই আন্দোলন থেকে শুরু করে নিত্যজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে দর্শকদের সামনে তুলে এনেছেন দেশের আলোকচিত্র সাংবাদিকরা।
দেশের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও সাহসিকতা উদযাপনের লক্ষ্যে টানা চতুর্থবারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট ২০২৫’-এর আয়োজন করে দৃক। ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত ছবি আহ্বানের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতাটি যাত্রা করে এবং ২৫২ জন আলোকচিত্র সাংবাদিক গত বছরব্যাপী তোলা ছবি জমা দেন। জমা পড়ে ১ হাজার ৩১০টি ছবি। এর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাণ-প্রকৃতি ও তথ্যচিত্রনির্ভর ৩১টি ছবি নিয়ে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে আজ ১৭ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। জায়গা সংকুলানের কারণে আরও ছবি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান আয়োজকরা।
এ বছরের সাতজন বিজয়ী যথাক্রমে ‘পিকচার অব দ্য ইয়ার ২০২৪’ হয়েছেন আলোকচিত্র সাংবাদিক আশরাফুল আলম। রাজনীতি বিভাগে বিজয়ী হন কাজী সালাহউদ্দিন রাজু এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন ড.
গ্রান্ট ২০২৫’ অর্জন করেছেন সমতলের আদিবাসী গারো আলোকচিত্রী জাজং নকরেক। এ প্রদর্শনীতে ২০২৪ সালের আদিবাসী গ্রান্টজয়ী ডেনিম চাকমার ছবি স্থান পেয়েছে। তেমনি ২০২৬-এর প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী জাজং নকরেক তুলে ধরবেন তাঁর কাজ। এবারের বিচারক প্যানেলে অংশ নিয়েছেন চাকমা সার্কেল চিফ উপদেষ্টা এবং মানবাধিকারকর্মী রানী য়েন য়েন, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার স্থানীয় সাংবাদিক তানভীর চৌধুরী, প্রথম আলোর বিশেষ আলোকচিত্র সাংবাদিক জাহিদুল সেলিম এবং দৃকের প্রতিষ্ঠাতা, আলোকচিত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. শহিদুল আলম।
বর্ষসেরা আলোকচিত্র নির্বাচিত হয় আশরাফুল আলমের তোলা মব ভায়োলেন্সের একটি ছবি। তিনি ১১ বছর প্রথম আলো পত্রিকায় আলোকচিত্রী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন ফ্রিল্যান্সার অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটি প্রসঙ্গে আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘ওইদিন ছিল ১০ নভেম্বর, নূর হোসেন দিবস। আওয়ামী লীগের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ওরা মাঠে নামবে। সে জন্য সকাল থেকেই উত্তেজনাটা সেখানে ছিল। ওখানে ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়। আমার ছবিটার ঘটনা বিকেলের দিকের। আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাই। ওখানে কিছু না পেয়ে আমি খবর পাই, আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের সামনে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়েছে। সেখানে আসার পর আমি দেখলাম, কিছু মানুষকে ধরে মারধর করা হচ্ছে। বেশকিছু ছেলেকে মারধর করা হয়। এক নারী ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্দেহজনক গতিবিধি থাকার কারণে ওরা তাঁকে ধরে। ওই নারী বারবার বলছিলেন, ‘আমি কোনো দলের না। আমি যাচ্ছিলাম এ পথ দিয়ে।’ তাঁর কথা কেউ শোনেনি। তাঁকে মারতে মারতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে থেকে স্টেডিয়ামের দিকে নিয়ে আসে। ছবিটা স্টেডিয়ামের রাস্তায় তোলা। আমি ধাক্কাধাক্কিতে ৩-৪টার বেশি ছবি তুলতে পারিনি।’’
আশরাফুল আলম আরও বলেন, ‘কথিত মব জাস্টিস নিয়ে আমি তখন ভালো ছবি খুঁজছিলাম। ওইটা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। বাংলাদেশে এমন সময় আর আসেনি, যেখানে কোনো বিচারকাজ নাই, যাকে যেভাবে খুশি মারতে পারছে। ছবিটার কথা যখন ভাবি, তখন আমার কাছে মনে হয়, নারী বলেই শুধু নয়, কোনো মানুষকেই এভাবে মারা উচিত নয়। দ্বিতীয় কথা হলো– একজন নারীকে এত পুরুষ মিলে মেরেছে; শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে– আমার কাছে মনে হয়েছে, এ ছবিটা একটা ইতিহাসের অংশ। পরে কখনও কেউ এ ছবিটি দেখলে মনে করবে, এক সময় বাংলাদেশে এমন প্রশাসনিক পরিস্থিতি চলছিল। আমি এমন ছবি কামনা করি না, এমন ঘটনা ঘটুক, তাও আমি চাই না।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটোর কাজটা মূলত বাংলাদেশের পেশাজীবী সাংবাদিকদের বিগত বছরের সেরা কাজগুলো তুলে ধরা। বর্ষসেরা পুরস্কার একটা দেশের, একটা বছরের ঘটনাবলি তুলে ধরতে সাহায্য করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকে, যা নিয়ে আলোচনা কম হয়, সেটিকে যেমন রাখার চেষ্টা করি; তেমনি জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ও রাখার চেষ্টা করি।’
জনমুখী সাংবাদিকতা বিভাগে এবার একটি ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। একজন নারী বাচ্চাসহ যিনি বাসে উঠতে চাচ্ছেন; কিন্তু কন্ডাক্টর তাঁকে গলায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের দেশে গণপরিবহন যে নারীবান্ধব নয়, এ একটা ছবি তা আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আমরা অনেক বড় বিষয় নিয়ে কথা বলি, কিন্তু অনেক সময় এ ছোট ছোট বিষয় চোখ এড়িয়ে যায়; যা ছবির মাধ্যমে উঠে আসে। একজন নিম্নবিত্ত মানুষ, তার প্রতিদিনকার যাতায়াতের বাহন হয়তো বাস। তাঁর বেশভূষা ও নারী হওয়ায় তাঁকে বাসে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ঘটনাগুলো আমাদের আলাপ-আলোচনার অংশ হওয়া উচিত বলে মনে করেন রেজাউল করিম। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল আলম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চাকরি, পদ ১৭১
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব খাতে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ১১ থেকে ২০তম গ্রেডে ছয় ক্যাটাগরির এ নিয়োগে মোট পদ ১৭১টি। এ নিয়োগে চট্টগ্রাম জেলার স্থায়ী বাসিন্দারা (বাংলাদেশের প্রকৃত নাগরিক) আবেদন করতে পারবেন। ৩০ অক্টোবর আবেদন শুরু হয়েছে।
পদের নাম ও সংখ্যা১. পরিসংখ্যানবিদ: ৫টি
বেতন স্কেল: ১০,২০০–২৪,৬৮০ টাকা।
২. অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক: ১৫টি
বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা।
৩. স্বাস্থ্য সহকারী: ১৩৪টি
বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা।
আরও পড়ুন১০ ব্যাংক ও ১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান নেবে ১৮৮০ অফিসার, ফি ২০০৩০ অক্টোবর ২০২৫৪. স্টোরকিপার: ৪টি
বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা।
৫. গাড়িচালক: ৩টি
বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা।
৬. অফিস সহায়ক: ১০টি
বেতন স্কেল: ৮,২৫০-২০,০১০ টাকা।
আবেদনে শিক্ষাগত যোগ্যতা: প্রতিটি পদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। বিস্তারিত তথ্য মিলবে বিজ্ঞপ্তিতে।
আরও পড়ুনমেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন৩০ অক্টোবর ২০২৫বয়সসীমা: ২৯/১০/২০২৫ তারিখে প্রার্থীর বয়স সর্বনিম্ন ১৮ (আঠারো) বছর হতে হবে। একই সময়ে সর্বোচ্চ ৩২ (বত্রিশ) বছর হতে হবে আবেদনকারী প্রার্থীর। সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য।
আবেদনের প্রক্রিয়া: আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। সরাসরি বা ডাকযোগে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও সময়আবেদন শুরু: ৩০/১০/২০২৫ খ্রি. সকাল ১০ ঘটিকা
আবেদনের শেষ তারিখ: ১৯/১১/২০২৫ খ্রি. বিকেল ৫ ঘটিকা
ফি জমা দেওয়ার শেষ সময়: অনলাইন আবেদন জমাদানের ৭২ (বাহাত্তর) ঘণ্টার মধ্যে।
আরও পড়ুন৪৮তম বিশেষ বিসিএসে আর পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই৩০ অক্টোবর ২০২৫আবেদন ফিক্রমিক নং ১ থেকে ৫ পর্যন্ত পদের জন্য: ১১২ টাকা (সার্ভিস চার্জসহ)।
ক্রমিক নং ৬ পদের জন্য: ৫৬ টাকা (সার্ভিস চার্জসহ)।
টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে এই ফি জমা দিতে হবে।
পরীক্ষার তথ্য: প্রবেশপত্র প্রাপ্তির বিষয়টি ওয়েবসাইট ও প্রার্থীর মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে (শুধু যোগ্য প্রার্থীদের) যথাসময়ে জানানো হবে।
আরও পড়ুন‘দই মই’ অর্থনীতি–‘ক্লাউড সিডিং’–পিএস মাহসুদ ও বুরেভেসতনিক কী৩০ অক্টোবর ২০২৫