মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিন আসামি খালাস পাওয়ায় রায়ে সন্তুষ্ট নন শিশুটির মা। আজ শনিবার (১৭ মে) সকালে রায় ঘোষণার পর আদালত চত্ত্বরে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামিদের পাশাপাশি মামলার বাদী শিশুটির মা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় আছিয়ার মা বলেন, ‘‘আমি খুশি না। এই মামলায় তিন আসামি খালাস পেল? ওরা তো এ কাজে সহযোগিতা করিছে। আমার বড় মেয়েরে হুমকি দেছে। তারে মারধোর করছে, মুখ আটকায় রাখছে। ওরাও দোষী, ওদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।”

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় ধর্ষণের কারণে মৃত্যুর অপরাধ, শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ অভিযোগ গঠন করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘‘মূল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে অন্য তিনজনকে কেন খালাস দেওয়া হয়েছে, সেটা পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আমরা জানতে পারব। সেটা পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

এদিকে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী (লিগ্যাল এইড অফিস থেকে নিয়োগ দেওয়া) সোহেল আহম্মেদ। 

তিনি বলেন, ‘‘তিন আসামিকে যে খালাস দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা খুশি। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হয়নি। মূল আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, তা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।”

এটি একপেশে বিচার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মেয়ে। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কোনো উকিল আমাদের পক্ষে দাঁড়াতে চায়নি। লিগ্যাল এইড থেকে একজন উকিল দেওয়া হইছিল, সে আমাদের কথা আদালতে ভালোভাবে বলেনি। আমরা কয়েকজন সাক্ষী দিতে চাইছিলাম। আইনজীবী বলে, এ সাক্ষী দেওয়া যাবে না। আমার আব্বার ফাঁসি দিয়ে যদি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, হোক। কিন্তু যা হলো, তা একপেশে বিচার।” 

তিনি জানান, ঘটনার পর তার বাবার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে তার দাদি অন্যের বাড়ির বারান্দায় রাত কাটান। এ ঘটনার বিচার কে করবে? এ প্রশ্নও করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিটু শেখের মেয়ে।

চলতি বছরের ১ মার্চ শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই দিন রাতেই শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। 

ওই দিন সামরিক হেলিকপ্টারে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় আনা হয়। দুই দফা জানাজা শেষে শ্রীপুরে গ্রামের বাড়ির একটি কবরস্থানে শিশুটির মরদেহ সমাহিত করা হয়।

এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আলাউদ্দিন আদালতে চার আসামির নামে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

এস/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট
  • বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড