এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিট
Published: 17th, May 2025 GMT
বিদ্যমান কাঠামো পুনর্গঠন করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য জারি করা অধ্যাদেশটির বৈধতা নিয়ে রিট করেছেন এক আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ শনিবার রিটটি দায়ের করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।’
এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে নতুন দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ শিরোনামের ওই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। রাজস্ব সংগ্রহের মূল কাজ করবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, সংবিধানের ২৬, ৩১ ও ২৯(১) অনুচ্ছেদের আলোকে ওই অধ্যাদেশটি কেন সাংঘর্ষিক এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে অংশীজনদের (দলগত) প্রস্তাব প্রকাশ করতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রুল বিচারাধীন অবস্থায় ওই অধ্যাদেশের কার্যক্রমও স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে। আইনসচিব ও অর্থসচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আরও পড়ুনএনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে আজ তৃতীয় দিনেও চলছে কলমবিরতি৩ ঘণ্টা আগেসংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইন বাতিল, ৩১ অনুচ্ছেদে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং ২৯(১) অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
রিটের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আইনজীবী জুয়েল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা না করেই তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠনসংক্রান্ত ১৯৭২ সালের আদেশ (রাষ্ট্রপতির) বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটা বাতিল করতে হলে যথাযথ ন্যায্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। রাজস্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
আরও পড়ুনএনবিআর বিলুপ্ত, গঠিত হচ্ছে দুই সংস্থা ১৩ মে ২০২৫জুয়েল আজাদ আরও বলেন, অংশীজনেরা এ বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। তবে প্রস্তাবগুলো কী ছিল, তা প্রকাশ না করেই অধ্যাদেশ জারি করা সমীচীন হয়নি। বিগত বছরগুলো এনবিআর যথাযথভাবেই তাদের কাজ করেছে। তাই এটি বিলুপ্ত না করে সংস্কার করা যেত।
একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বিলুপ্ত করতে যাওয়া সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ ‘সমর্থন করে না’ উল্লেখ করে আইনজীবী জুয়েল আজাদ বলেন, এখন দুটি বিভাগের শীর্ষ পদগুলো প্রশাসন ক্যাডার থেকে পূরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হবেন, যা সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ সমর্থন করে না। মূলত এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনএনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে হচ্ছে দুটি বিভাগ, কী হবে তাদের কাজ১৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য় ল আজ দ ব ল প ত কর অন চ ছ দ আইনজ ব অ শ জন
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিসংঘের প্রতিবেদন ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা কেন নয়, রুল হাইকোর্টের
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান আহরণ বা গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি কেন সংরক্ষণ করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন।
এর আগে ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখা এবং গণহত্যায় (জুলাই-আগস্ট) দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দেন। দেশজুড়ে গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য অপরাধীদের বিচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ ও গুরুতর আহতসহ অনেক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল। ওই প্রতিবেদন গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি যুক্ত করে চলতি মাসে সম্পূরক আবেদনটি করেন রিট আবেদনকারী।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
পরে আইনজীবী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জড়িতদের বিচারের জন্য গত বছরের আগস্টে রিটটি করা হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে রুল দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আইন সংশোধন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দল কাজ করছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে দেখা যায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে খুন করা হয়েছে। এখানে কীভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে, এখানে রাজনৈতিক প্রভাব কেমন ছিল এবং সে সময় বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল অর্থাৎ প্রতিবেদনটি যথাযথ। এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তাই তিনটি উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি সংরক্ষণ করা উচিত। শুনানি নিয়ে আদালত ওই রুল দেন।
আরও পড়ুনদায়ীদের সুবিচার নিশ্চিতের তাগিদ ফলকার টুর্কের০৫ মার্চ ২০২৫