ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষ সংস্কারেও উদ্যোগ প্রয়োজন
Published: 17th, May 2025 GMT
গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জনগণের চোখে নতুন দেশের একটি ছবি ভেসে বেড়িয়েছে। এখনও সে ছবি আছে, তবে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নানা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এখন এসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে বেশ গুরুত্ব দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে কমিশনের সুপারিশগুলোতে ঐকমত্য পোষণ করলেই দেশ সংস্কার হয়ে যাবে আর মানুষের জীবনে নেমে আসবে অবারিত প্রশান্তি। কিন্তু এসব সুপারিশ কে বা কারা বাস্তবায়ন করবেন? এর জন্য তো সব ধরনের সংস্কারমুক্ত ন্যায়পরায়ণ নীতিবান মানুষ প্রয়োজন। সেই মানুষ হয়ে ওঠার কারখানা তথা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার উদ্যোগ কোথায়?
সংস্কার মানে কি শুধু কিছু আইন ও বিধি ব্যবস্থার পরিবর্তন? পুরোনো সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতায় যে জনআকাঙ্ক্ষা ছিল; তার অনেক কিছুই তো সংবিধানে ছিল এবং আছে। যেমন– সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদাবোধ কিংবা আইনের চোখে সবাই সমান। বিগত সময়ে এসবের কোনো বাস্তবায়ন ছিল কি দেশে? ছিল না বলেই ২০২৪-এ এসে বহু মানুষের জীবনের বিনিময়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। তাহলে বিগত সময়ের আলোকে দেখা যাচ্ছে, শুধু আইন বা বিধি ব্যবস্থার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি বা রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়, সেই বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনী অত্যাবশ্যকীয় একটি অংশ। এর সংস্কার ছাড়া উদার, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। এখন সরকার থেকে পুলিশের কার্যক্রম কেমন হবে, পুলিশ কী কী করতে পারবে আর কী কী করতে পারবে না– এসব নিয়ম-নীতি সংস্কার করে দেওয়া হলো। আরও ঠিক করে দেওয়া হলো যে, পুলিশ তার নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করতে পারবে না, ঘুষ গ্রহণ করতে পারবে না, পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে দেওয়া হলো। এমন অনেক বিষয় পুলিশ বাহিনী পরিচালনার নিয়মনীতির মধ্যে যুক্ত করে দিয়ে এর সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলো। এখন তাহলে আমরা আশা করতে পারি যে, পুলিশ আর কখনও কোনো প্রকার অনিয়ম বা অপরাধ করবে না।
অন্যদিকে যদি নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের কথা বলি, তাহলেও কমিশনার নিয়োগের আইন থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি সব কিছু এমনভাবে সংস্কার করা হলো যে আর অনিয়ম করার সুযোগ থাকল না। তাহলে কি সর্বজন গ্রহণযোগ্য, প্রতিযোগিতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হবে? এ ধরনের সংস্কারের ফলে কিন্তু একটা অনিশ্চয়তা বা সন্দেহ থেকেই যায়। কেননা এ ক্ষেত্রে অনেক ‘যদি’র ওপর নির্ভর করতে হবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়ার জন্য। সেটি কেমন? এখানে একটু আলোচনা করা দরকার। প্রথমে কয়েকটি ‘যদি’ নিয়ে আলোচনা করা যাক। প্রথম ‘যদি’ হচ্ছে যারা বা যিনি নির্বাচন কমিশনার বা পুলিশের বিভিন্ন পদে যুক্ত হবেন, প্রত্যেককে নিজের দায়িত্বের প্রতি যত্নবান এবং সৎ হবে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ‘যদি’ গণতান্ত্রিক চর্চা থাকে; ‘যদি’ সব দলের প্রার্থীরা অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার না করেন; ‘যদি’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে পুলিশ বাহিনী নিরপেক্ষতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে; ‘যদি’ প্রশাসনের সব স্তরের কর্মচারীরা চাকরি বিধি মেনে দায়িত্ব পালন করেন এবং সৎ থাকেন; ‘যদি’ বিচার বিভাগ সব দল ও মতের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে ও স্বাধীনভাবে কাজ পরিচালনা করতে পারে, ‘যদি’ সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও জনগণ দায়িত্ববান হন এবং ব্যক্তিজীবনে নীতি ও নৈতিকতা মেনে চলেন, তাহলে এ ধরনের সংস্কার তথা আইনকানুন ও বিধি-ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বির্নিমাণ সম্ভব হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতগুলো ‘যদি’র পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন কি সম্ভব? আসল কথা হলো, এসব আইন, বিধিবিধান তো আর জনগণকে কোনো সেবা দিতে পারবে না।
এগুলো তো কিছু লিখিত কাগজ মাত্র। এসবের তো নিজে থেকে কিছু করার ক্ষমতা নেই। মূলত এগুলো অনুসরণ করে জনগণকে সেবা দিয়ে থাকে মানুষ। সেই যোগ্য, নীতিবান, দায়িত্বশীল মানুষ তথা নাগরিক তৈরির উদ্যোগ কোথায়? যেখানে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার জন্য এমন কোনো কাজ নেই, যা সে করে না। যে সমাজে একজন নৈতিক ও মানবিক মানুষ খুঁজে পাওয়া বড় কঠিন কাজ, সেখানে শুধু বিধি ব্যবস্থা ও আইনকানুনের সংস্কার করলে কি চলবে? এর সঙ্গে সঙ্গে যোগ্য নাগরিক তথা মানুষ তৈরির ব্যবস্থাও করতে হবে। যদি যোগ্য, দায়িত্ববান, নৈতিক ও মানবিক মানুষ তৈরির ব্যবস্থা রাষ্ট্রে নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে কোনো সংস্কারই জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজে আসবে না– এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
শিশু একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ঠিকই কিন্তু সে বড় হয় সমাজে ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান তথা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্য দিয়ে। মানবসন্তান প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এসব মানুষ তৈরির কারখানা তথা সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। মানুষ তৈরির কারখানা সংস্কারে দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এখন পর্যন্ত যেসব কমিশন হয়েছে, সেগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি যে সংস্কার কার্যক্রমের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি; সেই শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তাহলে কি যে কারণে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার বাংলাদেশ তথা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দেশ বির্নিমাণ সম্ভব হয়নি; সেই একই কারণে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে এ জনপদের সাধারণ জনগণের?
মো.
সাইফুজ্জামান: শিক্ষাবিষয়ক উন্নয়নকর্মী
shakdip@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ র স স ক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অনৈক্যের সুর দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘এই বিভেদ এবং অনৈক্য উসকে দিয়েছে বাংলাদেশের একটি বড় পার্টি, সেটা হলো বিএনপি। অভ্যুত্থানের পরে যদি ইতিহাসে লেখা থাকে, প্রথম কোন দল বাংলাদেশে অনৈক্য জন্ম দিয়েছে? সেটা হলো বিএনপি।’ একে ‘অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা’ উল্লেখ করে এখান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাগুলো বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জামায়াত প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, লোয়ার হাউসে (নিম্নকক্ষে) পিআর; বিএনপি প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত); এগুলো নিয়ে তারা সরকারের সাথে বার্গেইন (দর–কষাকষি) করতে চায়—কোথায় ডিসি নিয়োগ দিবে, কোথায় এসপি নিয়োগ দিবে? জাতি যখন সংকটে, এই দুই দল বাংলাদেশকে অন্য একটা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
গণভোটের প্রসঙ্গ তুলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে এটি বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হবে। তিনি বলেন, ‘এটা তো জামায়াতে ইসলামীর জয় হবে না। এ জন্য আমরা জামায়াতে ইসলামীর কাছে আহ্বান রাখব, ভণ্ডামি বাদ দেন আপনারা। ভণ্ডামি বাদ দিয়ে অন্তরে কী আছে, একটু খুলে বলেন।’
অসুস্থ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান
নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে সালাহউদ্দিন সাহেব (সালাহউদ্দিন আহমদ) বলেছেন, কমিশনে যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছে, আমি সেগুলোকে বলব, “নোট অব ডিসেন্ট” নয় “নোট অব চিটিং”। ঠিক এই “নোট অব চিটিং”য়ের মাধ্যমে তারা পুরো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে প্রতারণা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতারণাটা বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র–জনতার কাছে ধরা পড়েছে।’
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ‘ভেটো’ দিয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অথচ তারা (বিএনপি) একটা সময় এটা চেয়েছিল।’
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিরপেক্ষ হওয়ার প্রস্তাবে বিএনপির ভিন্নমতের সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন। নিরপেক্ষ পিএসসি ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) গঠনের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপিকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এই কুসুম কুসুম প্রেম আপনারা আওয়ামী লীগের সাথে দিয়েছিলেন। এখন জাতীয় পার্টির সাথে দিচ্ছেন, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “‘নোট অব চিটিং” বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নিবে না। এবং এই “নোট অব চিটিং”য়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিএনপি যে ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাব যে আপনারা এই সব কার্যক্রম থেকে সরে আসুন। নতুনভাবে বাংলাদেশের মধ্যে রাজনীতি করুন।’
‘নিম্নকক্ষে পিআর জামায়াতের ভণ্ডামি’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াত একটা “বাইট” দেওয়ার চেষ্টা করছে যে তারা খুব সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু বিএনপি খারাপ হলেও একদিকে ভালো যে তারা যে সংস্কারের বিপক্ষে, এটা জনগণের সামনে সরাসরি বলে। আর জামায়াত হলো এমন যে মনে বলে সংস্কারের বিপক্ষে; মুখে তারা বলে সংস্কারের পক্ষে। আমরা এখনো সুপারিশমালার কোনো সমাধান করতে পারি...তারা নতুন করে মার্কেটে নিয়ে এসেছে গণভোট হবে।’
জামায়াতে ইসলামীকে সঠিক জায়গায় কথা বলার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘সঠিক জায়গায় কথা বলুন, বেজাগায় কথা বলিয়েন না। ’৭১–এ আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) উল্টাপাল্টা কাজ করেছিলেন, ’২৪–এ এসে এখন উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য জামায়াতে ইসলামীকে আমরা বলব, গণভোট নিয়ে জনগণের আতঙ্ক সৃষ্টি না করে, সংস্কারের জন্য নোট অব ডিসেন্টের প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে সমাধানে পৌঁছতে পারি, আদেশটা কীভাবে জারি করা যায়?... সে বিষয়ে আপনার দাবি তোলা উচিত। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে মনে করি, জামায়াত যে দাবিগুলো তুলছে, লোয়ার হাউসের পিআর...এগুলো হলো জামায়াতের ভণ্ডামি, এগুলো হলো কিছু সিটের (আসন) বার্গেনের (দর–কষাকষি) জন্য।’
এনসিপির রাজনীতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা সেই সম্ভাবনার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা দেখছেন, আপনারা বিচার করবেন। পুরো বাংলাদেশ বিচার করবে।’ এনসিপির নেতাদের গাড়ি–বাড়ি অর্জনের অভিযোগও নাকচ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রতীক হিসেবে এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বানও জানান নাসীরুদ্দীন।
‘জনতা বঙ্গভবনে যাবে’
দেশবাসী উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির জন্য গণ–অভ্যুত্থানের সরকারপ্রধান উপদেষ্টার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত আদেশ জারি করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাঁদের আবেদন থাকবে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘ডক্টর ইউনূসকে বাংলাদেশের সামনে অতিসত্বর শহীদ মিনারে গিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হয়ে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির আদেশ জারি করতে হবে। যদি সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হয়, তাহলে সেটা আমরা কীভাবে করব, সেটা আমরা বাংলাদেশের জনগণকে আবার রাজপথে দেখিয়ে দিব ইনশা আল্লাহ। আমরা যথেষ্ট উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যে আপনাদের কাছে নীতিমালা এসেছে। আপনারা দ্রুত আদেশ জারি করুন। আমাদের এই উৎকণ্ঠা, বিএনপি অনৈক্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, এটা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিন। আমরা দ্রুত ইলেকশনের ফেজে (নিবার্চনী পর্বে) ঢুকতে চাই।’
অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কোনো বৈধতা নেই, এমন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘যদি চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) দিয়ে আদেশ দেওয়ার বাংলাদেশে কোনো চেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা বঙ্গভবনে চলে যাবে। আগে গণভবনে গিয়েছিল, নতুন করে যদি এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা আবার বঙ্গভবনে যাবে ইনশা আল্লাহ।’
জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।