বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন মাসে ২০৩,৭১২-২৫৪,৬৪০ টাকা
Published: 18th, May 2025 GMT
বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির ট্যালেন্ট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড রিওয়ার্ডস বিভাগে ম্যানেজার পদে জনবল নিয়োগে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে অনলাইনে। নির্বাচিত প্রার্থীরা মাসিক বেতন ছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
প্রতিষ্ঠানের নাম: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
পদের নাম: ম্যানেজার-ট্যালেন্ট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড রিওয়ার্ডস
শিক্ষাগত যোগ্যতা: মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন অথবা সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। মানবসম্পদ বিভাগে ৭ থেকে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কর্মক্ষেত্র: অফিসে
বয়সসীমা: উল্লেখ নেই
কর্মস্থল: ঢাকা
বেতন: মাসে ২০৩,৭১২-২৫৪,৬৪০ টাকা। তবে অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে এ বেতন।
অন্যান্য সুবিধা: প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, উৎসব বোনাস, জীবন বিমা, হাসপাতালে ভর্তি বিমা কভারেজ ও চিকিৎসা–সুবিধা।
আবেদন যেভাবে: আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদনের বিস্তারিত ও আবেদনের বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনের শেষ সময়: ২৩ মে ২০২৫।
আরও পড়ুনপল্লী বিদ্যুতে বড় নিয়োগ, ২ পদে নেবে ২১৫০ জন১৬ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আলোকচিত্রে গণমানুষের জীবন
সমুদ্রের তীরে দুই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। গভীর মনোযোগ দিয়ে তাঁর চুল-দাড়ি কাটছেন আরেকজন। কিছুক্ষণ পরপর ঢেউ এসে দু’জনের পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পাশে চোখ ফেরালে আরেক দৃশ্যে নজর আটকায়। পরিত্যক্ত এক জোড়া জুতা পায়ে ময়লার বিশাল স্তূপ থেকে লাফিয়ে নামছেন এক মধ্যবয়সী নারী। তাঁর হাতে নোংরা প্লাস্টিকের বস্তা। আরেকটু দূরের ফ্রেমে নজর রাখলে দেখা মেলে নিখাদ আনন্দের। রেলপথের পাশের দুটি খুঁটিতে দড়ি বেঁধে দোলনা বানিয়ে একে অপরের ওপর মুখোমুখি বসে দুলছে দুই পথশিশু। তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। এমনই বিচিত্র সব দৃশ্যের প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে। জুলাই আন্দোলন থেকে শুরু করে নিত্যজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে দর্শকদের সামনে তুলে এনেছেন দেশের আলোকচিত্র সাংবাদিকরা।
দেশের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও সাহসিকতা উদযাপনের লক্ষ্যে টানা চতুর্থবারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট ২০২৫’-এর আয়োজন করে দৃক। ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত ছবি আহ্বানের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতাটি যাত্রা করে এবং ২৫২ জন আলোকচিত্র সাংবাদিক গত বছরব্যাপী তোলা ছবি জমা দেন। জমা পড়ে ১ হাজার ৩১০টি ছবি। এর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাণ-প্রকৃতি ও তথ্যচিত্রনির্ভর ৩১টি ছবি নিয়ে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে আজ ১৭ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। জায়গা সংকুলানের কারণে আরও ছবি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান আয়োজকরা।
এ বছরের সাতজন বিজয়ী যথাক্রমে ‘পিকচার অব দ্য ইয়ার ২০২৪’ হয়েছেন আলোকচিত্র সাংবাদিক আশরাফুল আলম। রাজনীতি বিভাগে বিজয়ী হন কাজী সালাহউদ্দিন রাজু এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন ড. কুমার বিশ্বজিৎ। জনস্বার্থে সাংবাদিকতায় বিজয়ী হয়েছেন এম ইউসুফ তুষার এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন মো. আবু নোমান অমিত। শিল্প, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিভাগে বিজয়ী হন জহির আহাম্মেদ শাকিল এবং বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন রাশেদ সুমন। ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট ২০২৫’-এ বর্ষসেরা আলোকচিত্রের জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে বিজয়ীদের ৫০ হাজার টাকা এবং সম্মাননাপ্রাপ্তদের ১০ হাজার টাকার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে সম্মাননা স্মারক ও সনদ। বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্টের অধীনে এবার ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী
গ্রান্ট ২০২৫’ অর্জন করেছেন সমতলের আদিবাসী গারো আলোকচিত্রী জাজং নকরেক। এ প্রদর্শনীতে ২০২৪ সালের আদিবাসী গ্রান্টজয়ী ডেনিম চাকমার ছবি স্থান পেয়েছে। তেমনি ২০২৬-এর প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী জাজং নকরেক তুলে ধরবেন তাঁর কাজ। এবারের বিচারক প্যানেলে অংশ নিয়েছেন চাকমা সার্কেল চিফ উপদেষ্টা এবং মানবাধিকারকর্মী রানী য়েন য়েন, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার স্থানীয় সাংবাদিক তানভীর চৌধুরী, প্রথম আলোর বিশেষ আলোকচিত্র সাংবাদিক জাহিদুল সেলিম এবং দৃকের প্রতিষ্ঠাতা, আলোকচিত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. শহিদুল আলম।
বর্ষসেরা আলোকচিত্র নির্বাচিত হয় আশরাফুল আলমের তোলা মব ভায়োলেন্সের একটি ছবি। তিনি ১১ বছর প্রথম আলো পত্রিকায় আলোকচিত্রী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন ফ্রিল্যান্সার অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটি প্রসঙ্গে আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘ওইদিন ছিল ১০ নভেম্বর, নূর হোসেন দিবস। আওয়ামী লীগের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ওরা মাঠে নামবে। সে জন্য সকাল থেকেই উত্তেজনাটা সেখানে ছিল। ওখানে ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়। আমার ছবিটার ঘটনা বিকেলের দিকের। আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাই। ওখানে কিছু না পেয়ে আমি খবর পাই, আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের সামনে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়েছে। সেখানে আসার পর আমি দেখলাম, কিছু মানুষকে ধরে মারধর করা হচ্ছে। বেশকিছু ছেলেকে মারধর করা হয়। এক নারী ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্দেহজনক গতিবিধি থাকার কারণে ওরা তাঁকে ধরে। ওই নারী বারবার বলছিলেন, ‘আমি কোনো দলের না। আমি যাচ্ছিলাম এ পথ দিয়ে।’ তাঁর কথা কেউ শোনেনি। তাঁকে মারতে মারতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে থেকে স্টেডিয়ামের দিকে নিয়ে আসে। ছবিটা স্টেডিয়ামের রাস্তায় তোলা। আমি ধাক্কাধাক্কিতে ৩-৪টার বেশি ছবি তুলতে পারিনি।’’
আশরাফুল আলম আরও বলেন, ‘কথিত মব জাস্টিস নিয়ে আমি তখন ভালো ছবি খুঁজছিলাম। ওইটা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। বাংলাদেশে এমন সময় আর আসেনি, যেখানে কোনো বিচারকাজ নাই, যাকে যেভাবে খুশি মারতে পারছে। ছবিটার কথা যখন ভাবি, তখন আমার কাছে মনে হয়, নারী বলেই শুধু নয়, কোনো মানুষকেই এভাবে মারা উচিত নয়। দ্বিতীয় কথা হলো– একজন নারীকে এত পুরুষ মিলে মেরেছে; শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে– আমার কাছে মনে হয়েছে, এ ছবিটা একটা ইতিহাসের অংশ। পরে কখনও কেউ এ ছবিটি দেখলে মনে করবে, এক সময় বাংলাদেশে এমন প্রশাসনিক পরিস্থিতি চলছিল। আমি এমন ছবি কামনা করি না, এমন ঘটনা ঘটুক, তাও আমি চাই না।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রেস ফটোর কাজটা মূলত বাংলাদেশের পেশাজীবী সাংবাদিকদের বিগত বছরের সেরা কাজগুলো তুলে ধরা। বর্ষসেরা পুরস্কার একটা দেশের, একটা বছরের ঘটনাবলি তুলে ধরতে সাহায্য করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকে, যা নিয়ে আলোচনা কম হয়, সেটিকে যেমন রাখার চেষ্টা করি; তেমনি জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ও রাখার চেষ্টা করি।’
জনমুখী সাংবাদিকতা বিভাগে এবার একটি ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। একজন নারী বাচ্চাসহ যিনি বাসে উঠতে চাচ্ছেন; কিন্তু কন্ডাক্টর তাঁকে গলায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের দেশে গণপরিবহন যে নারীবান্ধব নয়, এ একটা ছবি তা আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আমরা অনেক বড় বিষয় নিয়ে কথা বলি, কিন্তু অনেক সময় এ ছোট ছোট বিষয় চোখ এড়িয়ে যায়; যা ছবির মাধ্যমে উঠে আসে। একজন নিম্নবিত্ত মানুষ, তার প্রতিদিনকার যাতায়াতের বাহন হয়তো বাস। তাঁর বেশভূষা ও নারী হওয়ায় তাঁকে বাসে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ঘটনাগুলো আমাদের আলাপ-আলোচনার অংশ হওয়া উচিত বলে মনে করেন রেজাউল করিম। v