এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যৌথ বাহিনী পরিচয়ে ৭০ ভরি সোনা লুট হলো কীভাবে
Published: 18th, May 2025 GMT
আট মাস আগে ঢাকার দ্রুতগতির উড়ালসড়কে (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) যৌথ বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর ৭০ ভরি সোনা লুটে পুলিশের চার সদস্য জড়িত বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য হলেন কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও আবু বকর। এ ছাড়া লুটের কাজে ব্যবহার করা মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালামকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা মো.ইরফান খান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী সাইফুলের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কনস্টেবল মিজানুর ও আবদুস সালামকে শনাক্ত করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রমনা জোনের এসআই মো. ইরফান খান প্রথম আলোকে বলেন, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার তথ্য পর্যালোচনা ও দীর্ঘ তদন্ত করে ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনার রহস্য বের করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই রিপনসহ পুলিশের চার সদস্য জড়িত।
মামলার নথি, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। তাঁর এক আত্মীয়ের বিয়েতে পুরান ঢাকার বংশালে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সাইফুল তাঁর খালা সাজিয়া সুলতানা ও খালাতো বোন জিনাত সুলতানাকে নিয়ে উড়োজাহাজে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর তিনি পুরান ঢাকায় যাওয়ার জন্য উবারে একটি প্রাইভেট কার ঠিক করেন। প্রাইভেট কারটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মগবাজারের দিকে রওনা হয়। টোল প্লাজা পার হওয়ার পরপরই সাইফুলকে বহনকারী প্রাইভেট কারের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে। গাড়ি থেকে চারজন লোক নেমে প্রাইভেট কারের ভেতরে বসে থাকা সাইফুল ইসলামসহ অন্যদের কাছে নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা সাইফুলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে সবাইকে ওই কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। মাইক্রোবাসের জানালার গ্লাস কালো রঙের ছিল, যেন বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরের কিছু দেখা না যায়।
প্রাইভেট কারটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মগবাজারের দিকে রওনা হয়। টোল প্লাজা পার হওয়ার পরপরই সাইফুলকে বহনকারী প্রাইভেট কারের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে।ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ির ভেতরে তোলার পর তাঁদের মারধর করে সবকিছু লুটে নেওয়া হয়। তাঁদের কাছে মাদক থাকার কথা বলে মামলা ও গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়। এরপর তাঁদের ৩০০ ফিট এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৭০ ভরি সোনা লুটের এই ঘটনা ঘটলেও মামলা করা হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। এর কারণ জানতে চাইলে মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভয়ে প্রথমে মামলা করিনি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিই।’
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে অপরাধী শনাক্ত
মামলার কাগজপত্র ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মামলা করার পরদিন গ্রেপ্তার হন ওই মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালাম। তাঁর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ৯ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় পুলিশ কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে। পরে তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশ সদস্য মিজানুরের জবানবন্দিতে উঠে আসে সোনা লুটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী এসআই রিপন সরকারের নাম।
তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইরফান খান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী সাইফুলের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কনস্টেবল মিজানুর ও আবদুস সালামকে শনাক্ত করা হয়। পরে সোনা লুটে কারা জড়িত, মিজানুর তাঁদের নাম প্রকাশ করেন। রিপন, মিজানুর ও আবু বকরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কনস্টেবল হানিফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আবদ স স ল ম প রথম আল ক র সদস য ব যবস য় র পর ত
এছাড়াও পড়ুন:
৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেবে সিআইডি
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসব মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়।
তবে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব মরদেহই ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে থাকবে।
রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আজ সন্ধ্যায় ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক চিকিৎসকেরা ওই সব মরদেহ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সব দাবিদারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করবে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব। পোশাক কারখানার নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে মালিবাগে সিআইডির ল্যাবে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ল্যাবের পরীক্ষক মাসুদ রাব্বি।
রূপনগর থানার এসআই মোখলেছুর বলেন, বাকি মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত পর্যায়ক্রমে করা হবে। তিনি আরও বলেন, ডিএনের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
শিয়ালবাড়ির একটি টিনশেড দোতলা রাসায়নিক গুদামে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। সেদিনও সন্ধ্যার পর মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ দুপুরের দিকে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জন পুরুষ ও ৭ জন নারীর লাশ এখানে এসেছে। স্বজনেরা চাইলে, আর পুলিশ বা জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে শনাক্ত হওয়া লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা যাবে।
আরও পড়ুনমিরপুরে আগুন: ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি স্বজনদের৮ ঘণ্টা আগে