পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) এবার লাহোর কালান্দার্সে খেলছেন ইংল্যান্ডের পেসার টম কারেন। একই দলে খেলেছেন বাংলাদেশের লেগ স্পিন অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেন। তবে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে পিএসএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় দুজন দেশে ফিরে যান।

রিশাদ পাকিস্তান ছেড়ে দুবাই হয়ে ১০ মে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। দুবাই বিমানবন্দরেই সংবাদমাধ্যমকে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন ছিল এবং লাহোর সতীর্থরা কতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, তা বোঝাতে গিয়ে টম কারেনকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যও করেছিলেন।

সাক্ষাৎকারে রিশাদ বলেছিলেন, ‘টম কারেন বিমানবন্দরে পৌঁছার পর যখন শুনল বিমান চলাচল বন্ধ, তখন সে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করেছিল। তাকে দু-তিনজন মিলে সামলাতে হয়েছিল।’

রিশাদের সেই মন্তব্য নিয়ে এত দিন চুপ থাকলেও অবশেষে মুখ খুলেছেন কারেন। লাহোর সতীর্থের দাবিকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা এই পেসার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল থেকে পিএসএল আবার মাঠে গড়িয়েছে। বাংলাদেশ দলের আরব আমিরাত সফরের স্কোয়াডে থাকায় পিএসএলের বাকি অংশে রিশাদকে পাবে না লাহোর। তবে কারেন আবারও পাকিস্তানে গেছেন।

পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জার্সের দুই সদস্যের সঙ্গে গতকাল ছবিও তুলেছেন কারেন। সেই ছবি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘খেলা (পিএসএল) আবার শুরু হচ্ছে দেখে আমি আনন্দিত। বিশেষ দুই দেশের মধ্যে যেন শান্তি বিরাজ করে, সে জন্য আমি প্রার্থনা করছি। তবে কসম খেয়ে বলছি, আমি কাঁদিনি। খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’

অবশ্য রিশাদ তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ১১ মে রাতে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘দুবাই বিমানবন্দর অতিক্রমের সময় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের দেওয়া একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম, সেখানে মন্তব্যটিতে পুরো প্রেক্ষাপট উঠে আসেনি এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে আবেগকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হয়েছে। এর ফলে যে ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি টম কারেনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি।’

পিএসএল খেলতে পাকিস্তানে ফেরা কারেন এবার সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন আরেক বাংলাদেশিকে। সাকিব আল হাসান যে এরই মধ্যে লাহোর কালান্দার্সে যোগ দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: টম ক র ন প এসএল

এছাড়াও পড়ুন:

ঋতুদের প্রতিটি গোলেই বড় মাপের ফুটবলারের ছাপ

ফলাফলটা অনুমেয়ই ছিল! ইয়াঙ্গুনের থুন্না স্টেডিয়ামের স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের নামের পাশে কত ডিজিটের সংখ্যা বসবে, সেটা নিয়েই ছিল আগ্রহ। বাংলাদেশ ৭: ০ তুর্কমেনিস্তান– হুট করে স্কোর লাইনটা দেখে বা শুনে থাকলে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যারা নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের খোঁজখবর রাখছেন, তাদের কাছে এ স্কোর লাইন স্বাভাবিক মনে হওয়ারই কথা!

প্রথম দুই ম্যাচে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা বাহরাইন ও স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারানোর পর র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৩ ধাপ পিছিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তান বাংলাদেশের আক্রমণ ঝড়ের সামনে উড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে দলটির কোচ বোরিস বোরোভিক বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারের ওপর অভিমান করলেও করতে পারেন! কারণ ‘আনুষ্ঠানিকতা’য় পরিণত হওয়া এমন ম্যাচে সেরা একাদশটাই অপরিবর্তিত রেখেছিলেন বাটলার।

আসলে ইংলিশ ম্যানের দোষ কী! খেলার সঙ্গে বাংলাদেশ যে মানসিকতায়ও বড় দল হয়ে উঠছে, তা তো প্রথমে তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে। বুধবার এক ম্যাচ হাতে রেখে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ নিশ্চিত হওয়ার পরও পা মাটিতে রেখে ইংলিশ কোচ বলেছিলেন, এখনও অর্ধেক কাজ বাকি। পুরো কাজ শেষ করে অর্থাৎ ষোলোকলা পূর্ণ করে উদযাপন সারার প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বাটলারের মাঠে আসা। 

শিষ্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে কোচের বার্তা। দলের প্রাণভোমরা ঋতুপর্ণা চাকমা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ শেষ করেই হবে উদযাপন। বাহরাইন, মিয়ানমার, সর্বশেষ তুর্কমেনিস্তান– তিন ম্যাচে ১৬ গোল দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এদিন ম্যাচ শেষে সবাই গোল হয়ে হইহুল্লোড় করে উদযাপন সারলেন আফিদা, ঋতুপর্ণারা। সাত গোলের ম্যাচে ঋতুপর্ণা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র করেছেন জোড়া গোল। একটি করে গোল করেছেন মনিকা চাকমা, স্বপ্না রানী ও তহুরা খাতুন। স্বপ্না, ঋতুপর্ণা, শামসুন্নাহারদের প্রতিটি গোলে বড় মাপের ফুটবলারের ছাপ।

৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে গোলের মালা গাঁথা শুরু করেন স্বপ্না। খেলা শেষেও ইউটিউবে বারবার লুপ করে দেখা যায় এমন দর্শনীয় গোল। এর পরে কে কখন তুর্কমেনিস্তান বক্সে ঢুকে গোল করে বের হয়ে যাচ্ছেন, নোটবুকে তা টুকে রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। পাঁচ গোলের পর তুর্কমেনিস্তান গোলরক্ষক পরিবর্তন করে। তবুও প্রথমার্ধ শেষে গোল সংখ্যা হলো সাতটি এবং শেষ পর্যন্ত স্কোর লাইন সেটাই থাকল। 

বিশেষভাবে মনে রাখা গেল শেষ গোলটি এসেছে আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা ঋতুপর্ণার ট্রেডমার্ক গোল থেকে। কাল মুড়িমুড়কির মতো গোল করেও মেয়েদের উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। ভাবখানা এমন যেন এ আর এমন কি! শামসুন্নাহাররা আঙুল দেখিয়ে শুধু গোল নম্বরগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল হলো না কেন, এই নিয়েই বরং আফসোস থাকতে পারে।

তবে টানা তিন জয় নিয়ে অপরাজিত থেকে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব শেষ করা বাংলাদেশের কাছে গোল সংখ্যা তো আর মুখ্য হয়ে ওঠার কথা নয়। মেয়েরা যে সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়েছে, ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে তা ফুল হয়ে ফুটে থাকবে অনেক দিন। বাংলাদেশের মেয়েদের খেলা দেখতে বসলে মাঝেমাঝে আকাশের রামধনুর কথা মনে হতে পারে। সুন্দর পাস, সুন্দর ক্রস, সুন্দর গোল নামক কত রং সেখানে ছড়িয়ে! প্রথম থেকে আবির ছড়িয়ে তা স্মরণীয় হয়ে থাকা এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখল বাংলাদেশ। ২০২৬ এশিয়ান কাপেও বাংলাদেশের ফুটবল আকাশে ছড়িয়ে পড়ুক এমন রঙের মেলা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ