মাগুরায় এবার মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেয়েটির মা বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার আসামি অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে মাগুরা সদর উপজেলার একটি গ্রামের পাটখেতে ওই কিশোরীকে দুই যুবক ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। আজ রোববার কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তির পর বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে রাতে এ ঘটনার বিচার চেয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা। এমন এক সময়ে এ ঘটনা, যখন গতকাল মাগুরায় আলোচিত শিশুধর্ষণ মামলায় এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

কিশোরীর পরিবার, মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী কিশোরী কানে শোনে না, কথাও বলতে পারে না। তাকে সামলাতে অনেক সময় বেঁধে রাখা হয়। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে মেয়েটিকে ঘরে রেখে তার মা গোসল করতে যান। ফিরে এসে মেয়েকে না পেয়ে বাড়ির আশপাশে খুঁজতে থাকেন। পরে মেয়েটিকে বাড়ির পাশের একটি পাটখেত থেকে উঠে আসতে দেখেন। মেয়েটির গায়ে কাদামাখা ছিল। একই সময়ে প্রতিবেশী এক যুবককেও দেখা যায়। ওই যুবকের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আরও এক যুবকের নাম বলেন। অভিযুক্ত দুই যুবকের একজন মেয়েটির চাচাতো ভাই। তিনি মেয়েটিকে পাটখেতে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনা দেখে ফেলায় অপর যুবকও মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন।

মাগুরা সদর থানা-পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা জানার পরই মেয়েটির চাচাতো ভাইকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে গতকালই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য যুবককে গতকাল রাতে গ্রেপ্তারের পর আজ কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলাটি তদন্ত করছেন শত্রুজিৎপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো.

পিয়ার উদ্দিন। তিনি আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার দুই আসামির একজন (মেয়েটির চাচাতো ভাই) গতকাল আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনা প্রতিবেশী আরেক যুবক দেখে ফেলেন, তখন ওই যুবকও ধর্ষণ করেন। মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা পিয়ার উদ্দিন আরও বলেন, মেয়েটি যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন, তাই এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কারও সহায়তায় ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাগুরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা। মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ভায়নার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সবুজ, যুবদল নেতা খান মাহাবুব শান্তি, অপু শেখ প্রমুখ। বক্তারা ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এর আগে গত ৬ মার্চ মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছরের এক মেয়েশিশু। ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। ওই ঘটনায় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই মামলায় শনিবার মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শিশুটির বোনের শ্বশুরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি তিন আসামি খালাস পেয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ই য বক গতক ল এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে

খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।

হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় না

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।

কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’

পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ