ভবনের কাজ শেষ না করে আত্মগোপনে ঠিকাদার
Published: 19th, May 2025 GMT
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে বাঁ পাশেই চোখে পড়ে একটি বহুতল ভবন। ৯ তলা এ ভবনের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ ২০২০ সালে শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার বারবার কাজের মেয়াদ ও নির্মাণ খরচ বাড়িয়েছে। ভবনটির কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় দূর হচ্ছে না সদর হাসপাতালের শয্যাসংকট। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশী মানুষজন।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ৯ তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা, কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসাবে কাজটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বারবার কাজের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৭ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুপালি জি এম সন্স কনসোর্টিয়াম ৯ তলা ভবনের নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় বলে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। এর ফলে ভবনের শেষ সময়ের কাজ ঝুলে গেছে।
ভবনের রং, সিঁড়ির রেলিং, দরজার পাল্লা, পানির লাইনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সময়মতো বুঝে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর গণপূর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইস্কান্দার মির্জার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, এই তথ্যও দিতে পারেননি কেউ।
গত বুধবার ভবনটির অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গণপূর্ত বিভাগের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নাছিম আহমেদ। জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অল্প কিছু কাজ শেষ না করায় ভবনটি রোগীদের কোনো উপকারে আসছে না। গণপূর্ত বিভাগকে আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। তারা জানিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করে দেব।’
শয্যাসংকট, মেঝেতে রেখে চিকিৎসা
গত শনিবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। পঞ্চাশোর্ধ্ব আমেনা বেগম এক সপ্তাহ ধরে বুকের ব্যথায় ভুগছেন। তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছেলে মামুনুর রশিদ। কিন্তু শয্যা না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মামুনুর রশিদ বলেন, শয্যাসংকটে রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শেষ করে শয্যাসংকট দূর করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত ২০ মার্চ সদর হাসপাতালের সামনে নতুন এ ভবনের কার্যক্রম চালুর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ গ্রহণ করেন।
মূলত অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে চিকিৎসা–সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। নতুন একটি ভবন হয়েছে। ভবনটি বুঝে পেলে কার্যক্রম চালু হবে। তখন রোগীদের ভোগান্তি অনেকটা কমবে বলে আশাবাদী তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণপ র ত ব ভ গ র লক ষ ম প র ভবনট র র জন য শ ষ কর ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্সের ১০% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন
ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্স ২০২৪ সালের পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করেছে। গত সোমবার কোম্পানির ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এ লভ্যাংশ অনুমোদিত হয়। এই বছরের জন্য স্পনসর-পরিচালকেরা লভ্যাংশ নেবেন না।
কোম্পানির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এ সভায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিমসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার অংশ নেন। সভায় কোম্পানির ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী উপস্থাপন ও অনুমোদন করা হয়।
সভায় চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধের ঘনঘটার কারণে অর্থনীতি ব্যাপক হারে সংকুচিত হয়েছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। এ রকম সময়ের মধ্যেও ২০২৪ সালে ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৪২০ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিমা দাবি পরিশোধ করেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্স শুরু থেকে ব্যবসায়িক নীতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বজায় রেখেছে। অনবদ্য ব্যবসায়িক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এই কোম্পানিকে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ‘সেরা বার্ষিক প্রতিবেদন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। ২০২০ সালে বিমা খাতে অনবদ্য কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্ন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সাফা) ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্সকে ‘সেরা বার্ষিক প্রতিবেদন’ পুরস্কার প্রদান করে।
এ ছাড়া ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্স ২০১২-১৫ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) ‘বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে এবং ২০১৩ সালে আইসিএবির ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ সম্মানে ভূষিত হয়।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সোমবার ইস্টল্যান্ড ইনস্যুরেন্সের শেয়ার ১৭ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।