কাতার উপহার হিসেবে তাঁকে উড়োজাহাজ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা দাবি সঠিক নয়; বরং প্রথমে ট্রাম্প প্রশাসনই এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে প্রেসিডেন্টের ব্যবহার করার জন্য কাতারের কাছে একটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এ–সংক্রান্ত আলোচনা সম্পর্কে অবগত রয়েছে, এমন চারটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, প্রেসিডেন্টের পুরোনো উড়োজাহাজের স্থানে নতুন বিমান প্রস্তুত করতে আরও দুই বছর লাগবে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন উড়োজাহাজ স্থলাভিষিক্ত করণের এ কাজ আরও দ্রুত চাচ্ছিল। ফলে নানা বিকল্প খুঁজছিল মার্কিন বিমানবাহিনী। সে সময় ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে সম্ভাব্য উড়োজাহাজের একটি তালিকা খুঁজে বের করতে বলেন। হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে এ তথ্য জানান।

উল্লিখিত চার সূত্রের তিনটি জানায়, এ পরিস্থিতিতে পেন্টাগন বোয়িংয়ের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করে। তখন প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে তাদের অন্য গ্রাহকদের একটি তালিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়, যাদের উড়োজাহাজ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।

‘কাতার ছিল বোয়িংয়ের সেই গ্রাহকদের একজন’, জানায় দ্বিতীয় সূত্র। পেন্টাগন দেশটির কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিলে তারা সেটি বিক্রির আগ্রহ দেখায়।

‘কাতার ছিল সেই গ্রাহকদের একজন’, জানায় দ্বিতীয় সূত্র। পেন্টাগন দেশটির কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিলে তারা সেটি বিক্রির আগ্রহ দেখায়।

তৃতীয় সূত্র জানায়, হোয়াইট হাউস ওই ধারণাকে সমর্থন করেছে, এটি জানার পর পেন্টাগন কাতারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। স্টিভ উইটকফ প্রাথমিক কথোপকথন এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন বলে জানান হোয়াইট হাউসের এই কর্মকর্তা (তৃতীয় সূত্র)।

তৃতীয় সূত্রের ভাষ্যমতে, উড়োজাহাজটি সরাসরি কেনার চেয়ে লিজ নেওয়ার ব্যাপারেই প্রাথমিক আলাপ হয়েছিল।

আরও পড়ুনআমি এমন একটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার মতো লোক নই: ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার এটিকে কাতারের রাজপরিবারের ‘উপহার’ বা ‘শুভেচ্ছা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে তিনি লিখেছেন, ‘এটি একটি উপহার, একদম বিনা মূল্যে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, এটি এয়ার ফোর্স ওয়ানের একটি অস্থায়ী বিকল্প হবে এবং তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর এটি তাঁর প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে দেওয়া হবে। তবে তখন এ উড়োজাহাজে আর চড়বেন না বলে জানান তিনি।

উড়োজাহাজের এ সম্ভাব্য হস্তান্তর আমাদের দেশের জন্য একটি ‘অনুদান’ এবং তা সম্পূর্ণ আইনি ও নৈতিক প্রক্রিয়ায় গৃহীত হবে।—ক্যারোলিন লেভিট, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি

এয়ার ফোর্স ওয়ানের এই সম্ভাব্য স্থানান্তর নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এলে তা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়, যা গত সপ্তাহে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরেও ছায়া ফেলে। ডেমোক্র্যাট নেতাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতাও, যাঁরা সাধারণত ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক, তাঁরা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভাব্য এ চুক্তির বিরোধিতা করেন। কাতারও সমালোচনার মুখে পড়েছে। ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা উপসাগরীয় দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি আটকে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বোয়িং খুব দেরি করছে। এরপর কাতার সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। কাতারের নেতা একজন দারুণ নেতা। আমরা তখন কথা বলি। তিনি বলেন, “আমি যদি আপনাকে সাহায্য করতে পারি, তবে তা করার সুযোগ দিন।” তাদের কাছে এমন একটি উড়োজাহাজ আছে।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কাতারের কাছ থেকে কি ট্রাম্প উড়োজাহাজ উপহার নিতে পারেন১৬ মে ২০২৫

সিএনএনের খবরে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁর মার-আ-লাগো অবকাশকেন্দ্রের পাশে ফ্লোরিডার পাম বিচ বিমানবন্দরে কাতারের উড়োজাহাজটি পরিদর্শন করেন। পরে এটির বিলাসবহুল অবস্থা নিয়ে তাঁর পাশে থাকা ব্যক্তিদের কাছে মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্পের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চাং বলেছেন, উড়োজাহাজটির অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খতিয়ে দেখতে ট্রাম্প সেটিতে ওঠেন।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল-থানি সিএনএনকে বলেন, ‘এটি কোনো ব্যক্তিগত আলোচনার বিষয় নয়; বরং এটি যুক্তরাষ্ট্র বা কাতার সরকারের মধ্যকার বিষয়।’

এরপর পেন্টাগন হোয়াইট হাউসের কাছে বিষয়টি পাঠিয়ে দেয়। এসব বিষয়ে হোয়াইট হাউস, ওয়াশিংটনে কাতারের দূতাবাস ও বোয়িংয়ের একজন মুখপাত্রকে মন্তব্য করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ওয়াশিংটন ও দোহা উভয়েই বলেছে, যদি উড়োজাহাজটি হস্তান্তর করা হয়, তা কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মধ্যে আইনি চুক্তির মাধ্যমে হবে।

এ আলোচনা সম্পর্কে অবগত আছেন, এমন চারজন বলেছেন, আইনজীবীরা এখনো এ–সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরও পড়ুনউড়োজাহাজ কেউ বিনা মূল্যে দেয় না, বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা অবশ্যই থাকে: হিলারি ক্লিনটন১৭ মে ২০২৫

দ্বিতীয় সূত্র বলেন, ‘তখন থেকে এ পর্যন্ত বিষয়টি এখনো আইন বিভাগেই আছে এবং এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উড়োজাহাজটির মূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। তবে দুটি সূত্র বলছে, এটির মূল্য কমে গেছে।

এদিকে গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘উড়োজাহাজের এ সম্ভাব্য হস্তান্তর আমাদের দেশের জন্য একটি “অনুদান” এবং তা সম্পূর্ণ আইনি ও নৈতিক প্রক্রিয়ায় গৃহীত হবে।’

এর আগে সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরে ট্রাম্প বলেছেন, এ ধরনের একটি উপহার গ্রহণ না করা হবে বোকামি।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি বিনিময়ে কিছু চাইবে কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এটি তাদের সৌজন্যমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন একটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার মতো লোক নই। মানে, আমি বোকা হলে বলতাম, না; আমরা বিনা মূল্যে এত ব্যয়বহুল একটি উড়োজাহাজ চাই না।’

প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি কি এ উড়োজাহাজ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করবেন—এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প রেগে যান।

আলাবামা যাওয়ার আগে হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব দ র একজন র একট উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একদম বিপরীতমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায়, খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল’ আমেরিকার কথা বলছেন।

জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন, তিনি বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়। তিনি খ্রিষ্টান নন, একজন মুসলিম। তিনি অবশ্যই রক্ষণশীল নন, তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতে দ্বিধা করেন না।

‘মামদানি একজন ভয়ানক মানুষ’, সাবধান করে বলেছেন অ্যান্ড্রু কুমো, মঙ্গলবারের নির্বাচনে যিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা জীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য থাকলেও বাছাইপর্বে পরাজিত হয়ে তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এই নির্বাচনে তিনি একজন অদৃশ্য প্রার্থী। কুমোর পক্ষ নিয়ে তিনিও এই নির্বাচনের একজন অংশগ্রহণকারী। বড় ব্যবধানে মামদানির বিজয় হলে অনেকেই তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা হিসেবেই দেখবেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা। তিনি কোনোভাবেই চান না মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তাঁর বিবেচনায় মামদানি শুধু একজন পাক্কা কমিউনিস্টই নন, রীতিমতো উন্মাদ। এমন একজনকে নির্বাচিত করা হলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মামদানি একজন অবৈধ অভিবাসী। তা প্রমাণিত হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মামদানি যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের চলতি অভিযানে বাধা দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি।

ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়

শুধু নিউইয়র্কে নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরও অন্তত তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আগামীকাল, যার ফলাফল ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ব্যাপারে একটি রেফারেন্ডাম বা জনরায় হবে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচন। এই দুই রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হবে। উভয় রাজ্যই ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই রাজ্যেই ট্রাম্পের হার হয়, কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো ফল করেন। দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে এই দুই রাজ্যে ট্রাম্পের জনসমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।

এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গেভিন ন্যুসাম নির্বাচনী ম্যাপ পরিবর্তনের অনুমতি চেয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পের নির্দেশে টেক্সাসের নির্বাচনী ম্যাপ ঢেলে সাজানো হয়েছে, যার ফলে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে আরও পাঁচটি আসন নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবে ভাবা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘ব্লু স্টেট’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ন্যুসামের নির্দেশে নির্বাচনী ম্যাপ বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কংগ্রেসে পাঁচটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এই তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ভোটারদের মনে থাকবেন ট্রাম্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনি বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে সেনাসদস্যদের পাঠাচ্ছেন তিনি। যেসব ডেমোক্রেটিক নেতাকে শত্রু মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেয়নি এমন ডেমোক্রেটিক রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুদান বাতিল করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একাধিক সরকারি দপ্তর আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে মাদক পাচার বন্ধের নামে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় সামরিক হামলা চালাচ্ছেন। আমদানি শুল্কের নামে যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন, তার ফলে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে।

গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

এসব কার্যকলাপের ফলে সারা দেশে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেছে। অধিকাংশ জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় অন্য আর কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনে এমন ধস নামেনি।

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প কোনো রাজ্যেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচারে আসেননি। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে সরব সমর্থনও জানাননি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, জয়ী হবেন এমন প্রার্থীর সমর্থন দিতেই ট্রাম্প ভালোবাসেন। আগামীকালের নির্বাচনে তেমন সম্ভাবনা কম।

এই নির্বাচন যে ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়, তার আরেক প্রমাণ নির্বাচনী প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অংশগ্রহণ। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জাতীয় নেতা বলতে তিনিই সবেধন নীলমণি। শনিবার নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী মাইকি শেরিলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। একই দিন ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গারের পক্ষেও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। উভয় রাজ্যেই ওবামা কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণেই আমেরিকা আজ এক দুঃসময়ের মুখোমুখি।

জনমতে এগিয়ে মামদানি

ওবামা মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেননি। তবে তিনি যে মামদানির পাশে আছেন, সে কথাও গোপন রাখেননি। মামদানির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ওবামা নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর (মামদানির) বিজয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, মামদানির নির্বাচনী প্রচার ‘ইম্প্রেসিভ’ বা নজরে পড়ার মতো।

কুমো ক্যাম্প থেকে অহোরাত্রি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রচার সত্ত্বেও মামদানি যেসব জনমত জরিপে এগিয়ে, তার একটি বড় কারণ মাঠপর্যায়ে তাঁর এই ‘ইম্প্রেসিভ’ প্রচারণা। শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি। এতে তিনি ফল পাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহে মামদানির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ শতাংশের মতো কমে এসেছে। নিউইয়র্কের চলতি মেয়র নির্বাচন থেকে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুমোর লাভ হয়েছে সন্দেহ নেই, তবে এখনো মামদানির সঙ্গে যে ১৬-১৭ পয়েন্টের ব্যবধান রয়েছে, তা অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব, এই মত অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের।

ভূমিধস পরিবর্তন

একটা বিষয় স্পষ্ট। মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে তা মার্কিন রাজনীতিতে প্রজন্মগত ও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবে। ভূমিধস পরিবর্তন আসবে ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে। মধ্যপন্থী ও ডানঘেঁষা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই দলে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, করপোরেট আমেরিকার কাছে এদের হাত-পা বাঁধা। ইসরায়েল প্রশ্নে তাদের সমর্থন এখনো আগের মতো নতজানু।

পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল প্রশ্নে এখন নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ, যা তিন বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ধনতন্ত্রের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন নিম্নগামী। গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি খোলামেলাভাবে অভিবাসনবিরোধী, দক্ষিণপন্থী, খ্রিষ্টবাদী ও রক্ষণশীল। চলতি সপ্তাহের নতুন উদ্বাস্তু নীতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতকায় ও ইউরোপীয় আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে। এই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায় নাগরিকবৃন্দ, ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে যারা সে দেশের সরকারের বৈষম্যের শিকার।

এই প্রতিক্রিয়াশীল রিপাবলিকান পার্টির বিপরীতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য ওকাসিও-কর্তেজ ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সবাই মানেন, মামদানির মতো তরুণ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।

এই সম্ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, এই দেশ করপোরেট আমেরিকার নির্দেশে চলবে, না তার রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ—এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘যদি আমরা দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতে চাই, করপোরেট আমেরিকার বদলে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে আমাদের মামদানির পাশে দাঁড়াতে হবে।’

কোন পথ বেছে নেবে নিউইয়র্ক, মঙ্গলবারেই তা নিশ্চিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স