বহুমাত্রিক কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই নতুন কিছু অ্যাপ ডাউনলোডের প্রয়োজন সামনে আসে। অনেকেই হুট করে আগে-পরে কিছু না ভেবে ঝুঁকে পড়েন অ্যাপ ডাউনলোডে। জনপ্রিয় কোনো অ্যাপের নাম দিয়ে প্লে স্টোরে সার্চ করলে দৃশ্যমান হয় অনেক অ্যাপ। সবকটির নাম হয় কাছাকাছি ধরনের। যার মধ্যে অনেক থার্ড পার্টি ফেক অ্যাপ থাকে ছড়ানো। ডিভাইসে ডাউনলোড করার সময়ে ফেক থার্ড পার্টি অ্যাপ বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিনা, তা যাচাই করা প্রয়োজন। প্রথমে যে অ্যাপ ডাউনলোড করা প্রয়োজন, তার ডেভেলপারের নাম আগে জেনে নিতে হবে। অনেক সময়ে কোনো অ্যাপ সার্চ করার ক্ষেত্রে পরিচিত নামে অনেক অ্যাপ সামনে আসে।
সে ক্ষেত্রে কোনো অ্যাপের নাম ও ডেসক্রিপশন যাচাই করা প্রয়োজন। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে যে কোনো অ্যাপ ডাউনলোডের আগে তার ডাউনলোড কাউন্ট, রিভিউ ও রেটিং যাচাই করে নেওয়া শ্রেয়।
নির্বাচিত অ্যাপ কবে প্রকাশ পেয়েছে, তা জানা জরুরি। অ্যাপ ডাউনলোডের আগে স্ক্রিনশট দেখে নিতে হবে। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না। তা ছাড়া যে কোনো অ্যাপ ডিভাইসে কী কী অনুমতি (পারমিশন) চাইছে, তা তাৎক্ষণিক যাচাই করলে ক্ষতিকর অ্যাপ সহজে চিহ্নিত করতে পারবেন। কোনো অ্যাপ নিজের ডিভাইসে অপ্রয়োজনীয় ক্যামেরা, অডিও, লোকেশন, ফোনকল বা অন্য কিছুতে প্রবেশাধিকার চাইলে তা ভুয়া বলে বিবেচিত হবে। কারণ, ওই সব অ্যাপ দিয়েই সাইবার প্রতারণার সুযোগ নেওয়া হয়।
গুগল প্লে প্রোটেক্টের সহায়তায় অ্যাপ ও ডিভাইসকে ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। সে জন্য প্লে স্টোর অ্যাপে প্রোফাইল আইকনে গিয়ে প্লে প্রোটেক্ট ট্যাপ করে সেটিংসে প্লে প্রোটেক্ট দিয়ে স্ক্যান অ্যাপে যাচাই করে নেবেন। ডিভাইসটি ভেরিফাই সার্টিফাইড করতে পারেন। এমন কাজে গুগল প্লে স্টোর অ্যাপ খুলতে হবে। ওপরের ডানদিকে প্রোফাইল আইকনে গিয়ে সেটিংস থেকে ডিভাইসটি প্লে প্রোটেক্ট সার্টিফাইড কিনা, যাচাই করতে হবে। ডাউনলোড করার আগে ওই অ্যাপের বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
সার্চে পাওয়া অ্যাপে বানানে ভুল পেলে তা ক্ষতিকর হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। প্রকৃত অ্যাপে কোনো ভুল থাকে না। তবে ক্ষতিকর অ্যাপের লোগো কিন্তু প্রকৃত অ্যাপের মতো হুবহু ডিজাইন করা হয়। বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ কিন্তু থেকেই যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অ য প ড উনল ড ড উনল ড ক য চ ই কর
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
পর্যটকদের লাগেজ বহন করা থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য তুরস্ক ট্যুর ব্র্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়া মো. আল মামুনের গল্প অধ্যাবসায়, সাহস ও দূরদর্শিতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
২০০৮ সালে রসায়নে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মামুন বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে পাড়ি জমান। তাঁর একাডেমিক যাত্রা শুরু হয় তুরস্কের মনোরম শহর ইজমিরে। তৃতীয় বর্ষে তিনি চলে আসেন ইস্তানবুলে আর সেখানেই নিঃশব্দে শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়।
পড়াশোনার পাশাপাশি মামুন খণ্ডকালীনভাবে পর্যটন খাতে কাজ শুরু করেন। প্রথম চাকরি ছিল ট্রলি বয়ের হোটেল ও বিমানবন্দরে ভ্রমণকারীদের লাগেজ বহন করা। কাজটি ছিল কঠিন, কিন্তু এখানেই তিনি অর্থের চেয়ে অনেক মূল্যবান কিছু শিখেছিলেন পর্যটন শিল্পের প্রকৃত চিত্র।
স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, “আমি দেখতাম, তুরস্কে এসে মানুষ কতটা খুশি হয়। তখনই স্বপ্ন দেখেছিলাম, একদিন আমিও নিজে মানুষকে এই দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করব।”
শিক্ষা শেষ করে মামুন সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ও তুরস্কের পর্যটন খাতের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করবেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি ভ্রমণ সংস্থা, যা বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য তুরস্ক ট্যুর প্যাকেজ এবং ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য সেবা প্রদান করে। তবে শুরুর পথটা ছিল মোটেও সহজ নয়।
তিনি বলেন, “প্রথম বছর আমি বাংলাদেশের বহু ট্রাভেল এজেন্সি পরিদর্শন করেছিলাম। কেউ বিশ্বাস করত না। অনেক পরিশ্রম করেছি, কিন্তু ফল পাইনি। তবুও হাল ছাড়িনি।”
সবকিছু বদলে যায় যখন তিনি ঢাকায় একটি ট্রাভেল ফেয়ারের খবর পান। সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি একটি স্টল বুক করেন নিজের কোম্পানি ও তুরস্ক ট্যুর প্রচারের জন্য। বিশ্বাস অর্জনের লক্ষ্যে তিনি নিজের তুর্কি ব্যবসায়িক অংশীদারকেও আমন্ত্রণ জানান মেলায় অংশ নিতে।
তিনি বলেন, “যখন মানুষ দেখল আমাদের স্টলে তুর্কি প্রতিনিধিরা উপস্থিত, তখন তাদের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। সেই ট্রাভেল ফেয়ারই ছিল আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।”
মেলার পর মামুন ও তাঁর অংশীদার এক মাস ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ঘুরে ঘুরে নিজেদের সেবা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন, সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েকটি বাংলাদেশি এজেন্সি তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করে।
অংশীদার তুরস্কে ফিরে গেলেও মামুন থেকে যান বাংলাদেশে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এই বাজারের বিশাল সম্ভাবনায়। পরবর্তী দুই বছর তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। বন্ধুদের প্রশিক্ষণ দেন, তৈরি করেন একটি নিবেদিত টিম। শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিশ্রম সফল হয়। বহু এজেন্সি তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখে ও সহযোগিতা শুরু করে।
বর্তমানে মামুনের প্রতিষ্ঠানটি একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে তিনি ৫৬ সদস্যের একটি দল পরিচালনা করেন, যাদের সহায়তা করছে ইস্তানবুলের ৮ সদস্যের অপারেশন টিম। তুরস্কে রয়েছে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং বাংলাদেশের গাজীপুরে আঞ্চলিক অফিস।
এখন পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সি তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করছে এবং সবাই সন্তুষ্ট। শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মাল্টা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফিলিপাইনের মতো ৩৫টিরও বেশি দেশের ট্রাভেল এজেন্সি তাদের ক্লায়েন্ট পাঠাচ্ছে তুরস্কে মামুনের বিজনেস টু বিজনেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
ডিজিটাল মার্কেটিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারণা এবং সেলিব্রিটি স্পনসরশিপের মাধ্যমে মামুনের প্রতিষ্ঠানটি এখন অন্যতম পরিচিত তুরস্ক ট্যুর ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৮০ হাজারেরও বেশি পর্যটক তাঁর কোম্পানির মাধ্যমে তুরস্ক ভ্রমণ করেছেন সবাই পেয়েছেন পেশাদার সেবা ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
মামুন বলেন, “আমাদের পথ সহজ ছিল না। কিন্তু প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাদের আরো শক্ত করেছে। আমরা প্রমাণ করেছি বিশ্বাস, দলগত কাজ ও মানসম্মত সেবাই গ্লোবাল সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”
কোম্পানির অব্যাহত সাফল্যের মধ্যেও মামুন নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে স্পষ্ট বলেন, “আমার লক্ষ্য হলো আমার প্রতিষ্ঠানকে তুরস্কের সেরা ট্যুর অপারেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এমন একটি ব্র্যান্ড, যা বিশ্বাস, উৎকর্ষতা ও অনন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতার প্রতীক হবে।”
রসায়ন ছাত্র থেকে বৈশ্বিক পর্যটন শিল্পের নেতৃত্বে পৌঁছে যাওয়া মো. আল মামুনের গল্প তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। যা প্রমাণ করে, সততা, নিষ্ঠা ও নিজের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
ঢাকা/এস