ভারতের নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার দীপ্তি শর্মা তাঁরই রাজ্য দলের সতীর্থ আরুশি গোয়েলের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ রূপি প্রতারণা এবং বাড়ি ভেঙে টাকা–গয়না চুরির মামলা করেছেন! উত্তর প্রদেশ পুলিশের ডেপুটি এসপি ২৮ বছর বয়সী দীপ্তির এই অভিযোগে ঘটনা তদন্তে নেমেছে আগ্রা পুলিশ। এ ব্যাপারে টাইমস অব ইন্ডিয়া আরুশির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন‘নতুন মেসি’ ইয়ামাল কত বেতন পাবেন বার্সায়, মেসিকে ছুঁতে কত দেরি৪ ঘণ্টা আগে

দীপ্তি ভারত নারী দলের হয়ে ৫টি টেস্ট, ১০৬টি ওয়ানডে ও ১২৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ২৭ বছর বয়সী আরুশির এখনো জাতীয় দলে অভিষেক হয়নি। খেলেন উত্তর প্রদেশ নারী ক্রিকেট দলে, একই সঙ্গে তিনি ভারতীয় রেলের আগ্রা বিভাগের জুনিয়র কেরানি। এই মৌসুমে উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে দীপ্তি ইউপি ওয়ারিয়র্সের অধিনায়কত্ব করেছেন, একই দলে খেলেছেন আরুশিও। মাঠে একসঙ্গে খেলতে খেলতে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব যে এমন নাটকীয় মোড় নেবে, কে জানত!

আরুশি গোয়েল ও দীপ্তি শর্মা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বন্যপ্রাণী রক্ষায় সাদিকের সংগ্রাম

বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সে কারণে আব্দুল্লাহ আস সাদিকের এক জায়গায় বেশিদিন থাকা হয়নি। বাবার বদলিজনিত কারণে তাঁর পারিপার্শ্বিকতাও বদলেছে নিয়মিত। ২০০৬ সালে ভৈরবের কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। প্রাণিবিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে স্নাতক এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বাবা, ছোট বোন, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন ঢাকার মগবাজার এলাকায়।
গাছপালা, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী– সবকিছুই সাদিককে খুব টানে। একবার এক প্রতিবেশী একটি বানরকে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছিল। 
অনেক চেষ্টা করে সেটি মুক্ত করার পর সাদিকের মনে হলো, বন্যপ্রাণী রক্ষায় তাঁর কাজ করা দরকার। এভাবে এ কাজের শুরু। এরপর পেশাগতভাবে বন অধিদপ্তরে যোগ দেওয়ার সুযোগ হলো। তখন আর তাঁকে পায় কে! এমনটাই যেন তিনি মনে মনে চাইছিলেন। সাদিকের ভাষায়, বন্যপ্রাণী রক্ষার কাজ শুধু চাকরি না– একটি দায়িত্ব, একটি ভালোবাসা। সাদিক ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বন অধিদপ্তরের অধীনে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে বন্যপ্রাণী পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। এই নতুন সৃষ্ট পদে বর্তমানে সারাদেশে মোট ছয়জন কর্মকর্তা কর্মরত। এ পদে কাজের অন্ত নেই। তিনি আইন প্রয়োগ ও তদন্ত, অভিযান ও উদ্ধার, সচেতনতা ও শিক্ষা, নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই শিক্ষক, সহপাঠী, সিনিয়রদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক জায়গায় ঘুরে বেড়ান। মা ছিলেন তাঁর অন্যতম অনুপ্রেরণা। অথচ সাদিকের অনেক প্রাপ্তি তিনি দেখে যেতে পারেননি। ২০২৪ সালে মা চলে যান না ফেরার দেশে। এই কষ্ট সাদিকের চোখের পাতা ভারী করে তোলে যখন-তখন।
মাস্টার্স থিসিসের সময় কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে বিশ্বের মহাবিপন্ন চামুচঠুটো বাটান পাখি নিয়ে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয় তাঁর। তিনি প্রায় দুই বছর পাখিটির আবাসস্থল, চলাচল ও শিকারের ওপর গবেষণা করেন।
সাদিকের বন্যপ্রাণী নিয়ে সরকারি কাজের ৯ বছর হয়েছে। এতদিনে বহু অভিযান চালিয়েছেন তিনি। প্রথম অভিযানটি ছিল গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারের নগর হাওলা এলাকায়, ২০১৬ সালের এক বিকেলে। একটি চক্রের খবর পান, যারা তক্ষক পাচার করছিল। নিজেই ক্রেতা সেজে পাচারকারীর বাড়িতে প্রবেশ করেন। ওদিকে র‌্যাব সদস্যরা আশপাশে লুকিয়ে ছিলেন। সংকেত পেয়েই তারা অভিযান চালান। ৪৮টি তক্ষক উদ্ধার ও ১০ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাদিক বলেন, ‘এই প্রথম অভিযানটি আমার জন্য ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অভিজ্ঞতার দিক থেকেই নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষার অঙ্গীকার আরও দৃঢ় করার দিক থেকেও। সেদিনের সাহসী পদক্ষেপ ও সফলতা আমাকে আজও অনুপ্রাণিত করে।’ 
সাদিকের আরও কিছু উল্লেযোগ্য অভিযান হলো– ২০২৩ সালের ২৯ মে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ৬৪টি সাইটিস তালিকাভুক্ত পাখি জব্দ; ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর সাতক্ষীরার মন্টু মিয়ার বাগানবাড়িতে অভিযান; ২০১৯ সালের অক্টোবরে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বাড়িতে অভিযান; ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি চকরিয়ায় গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে পাচার হওয়া দুই ভালুক শাবক উদ্ধার। সাদিক বন্যপ্রাণী পাচার, সংরক্ষণে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বিশ্লেষণ করেন। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৬০টির বেশি অভিযান পরিচালনা করেছেন তিনি। এতে আনুমানিক ৯ থেকে ১০ হাজার বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অভিযান পরিচালনার জন্য গিয়েছেন বাংলাদেশের ৫০টির বেশি জেলায়।
ভবিষ্যতে সাদিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত সচেতনতা বাড়ানোর দিকে আরও গভীরভাবে মনোযোগ দিতে চান। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী রক্ষায় আইনি প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ