ড. ইউনূস থাকতে না চাইলে বিকল্প বেছে নেবে জনগণ: সালাহউদ্দিন আহমেদ
Published: 23rd, May 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে চাইলে সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমরা (বিএনপি) কখনও তার পদত্যাগ দাবি করিনি।
আজ শুক্রবার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে যদি তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, সেটিও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে একান্তই যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তাহলে রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বে বিকল্প ব্যবস্থা নেবে। জনগণ বিকল্প বেছে নেবে।’
তিনি আরও বলেন, এই পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়। তবে আমরা আশা করি, তিনি একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝবেন। আমরা চাই, জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। এ সময় নির্বাচন, করিডোর ও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য অভিযোগ করেন, সম্প্রতি কয়েক দফায় ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন আহম দ স ল হউদ দ ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
অষ্টম সংশোধনী রায় কি হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের বাধা
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে একটি জাতীয় জনমত জরিপ পরিচালনা করে।
সেখানে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রায় ৪৬ হাজার নাগরিকের মতামত সংগ্রহ করা হয়। জরিপের ফল থেকে দেখা যায়, প্রায় ৮৮ শতাংশ নাগরিক প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগে একটি করে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে মনে করেন (সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, দ্বিতীয় খণ্ড)।
দুই কমিশনের সুপারিশজনমতের পরিপ্রেক্ষিতে, এটি স্বাভাবিক যে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন—উভয়ই হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছে, যদিও তাদের সুপারিশে সামান্য ভিন্নতা আছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের সব বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে, আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।
স্থায়ী আসন বা স্থায়ী বেঞ্চ যেকোনো সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। ১০০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে।’
স্পষ্টতই সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুসারে, শুধু হাইকোর্টের ‘অধিবেশন’ ঢাকা শহরের বাইরে অনুষ্ঠিত হতে পারে; স্থায়ী আসন বা স্থায়ী বেঞ্চ রাজধানীর বাইরে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
দুটি সংস্কার কমিশনই ১০০ অনুচ্ছেদের ‘অধিবেশন’–সম্পর্কিত বর্তমান বিধানকে হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য অপ্রতুল বিবেচনা করেছে।
প্রথমত, এই বিধান গত পঞ্চাশ বছরে কোনো ধরনের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে সক্ষম হয়নি।
দ্বিতীয়ত, প্রধান বিচারপতির ইচ্ছায় অনুষ্ঠিত অধিবেশন, যা সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক নয় ও স্থায়ীও নয়, তা রাজধানীর বাইরে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অকার্যকর।
প্রকৃতপক্ষে ১০০ অনুচ্ছেদ কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করার ক্ষমতাই ধারণ করে না। এ কারণে যথার্থভাবেই উভয় কমিশনই স্থায়ী আসন বা স্থায়ী বেঞ্চের মাধ্যমে হাইকোর্টের স্থায়ী বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে সুপারিশ করেছে।
অষ্টম সংশোধনী মামলাঅতীতে হাইকোর্টকে স্থায়ীভাবে বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সালে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে কয়েকটি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। ১৯৮৮ সালে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদকে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংশোধন করে বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর ও সিলেটে ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অষ্টম সংশোধনীর সাংবিধানিকতা, বিশেষত এই সংশোধনীর হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ–সম্পর্কিত বিধান, বিখ্যাত অষ্টম সংশোধনী মামলায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর একটি ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংশোধিত ১০০ অনুচ্ছেদকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।
অষ্টম সাংশোধনী মামলা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো সাংবিধানিক আইনের ‘মৌলিক কাঠামো’ নীতি গ্রহণ ও প্রয়োগ করেন। এই নীতি অনুসারে সংবিধানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয় একজন সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে, যাঁর হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বার ও বেঞ্চ উভয়কেই দুর্বল করা। অষ্টম সংশোধনী রায় দেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছিল।
যেহেতু অষ্টম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিলেন, তাই যে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিকভাবেই উত্থাপিত হয় তা হলো, এই মামলা কি সংবিধান সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে?
তিনভাবে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে জোরালো উত্তর হবে ‘না’।
প্রথমত, অষ্টম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করার কারণগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে ১০০ অনুচ্ছেদের সংশোধনীতে সেসব বৈশিষ্ট্য এড়ানো যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, এবং এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ, সংবিধানিক ব্যাখ্যার যেসব নিয়ম একটি পরবর্তী মামলায় পূর্ববর্তী ব্যাখ্যা থেকে সরে আসার সুযোগ দেয়, সেসব নিয়মের ওপর নির্ভর করা। তৃতীয়ত, ১০০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংশোধনী গ্রহণ করতে জনগণের গাঠনিক ক্ষমতার (কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার) ওপর নির্ভর করা।
অষ্টম সংশোধনীর ত্রুটি এড়ানোঅষ্টম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিলেন যে এই সংশোধনীর মাধ্যমে হাইকোর্টকে প্রদত্ত রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এ কারণে এটি সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামোগত স্তম্ভ বিচার বিভাগকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। নিজস্ব আঞ্চলিক বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠা করে এই সংশোধনী ‘একক’ হাইকোর্টের ধারণাকে ধ্বংস করেছিল।
১০০ অনুচ্ছেদের ভবিষ্যৎ সংশোধনী এই ত্রুটিগুলো এড়াতে পারে, যদি সব স্থায়ী আসনকে আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতামুক্ত পূর্ণাঙ্গ বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট নিজস্ব নিয়মের মাধ্যমে এই আসনগুলোর মধ্যে মামলার বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারেন; যদিও সব আসন সম্পূর্ণ বিচারিক ক্ষমতার অধিকারী হবে, মামলার বণ্টন পক্ষগুলোর অবস্থান, বিরোধের বিষয়বস্তু, মামলা দায়েরের উৎস ও বিরোধের প্রকৃতি—এসবের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে।
এ ছাড়া প্রতিটি আসনকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে কোনো মামলা অন্য কোনো আসনে স্থানান্তর করার ক্ষমতা দেওয়া যায়। প্রধান বিচারপতিরও স্থানান্তরের জন্য আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে পারে। সঠিক নিয়মাবলি, কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও উপযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে আটটি বিভাগের স্থায়ী আসনের মধ্যে মামলার কার্যকর ও যথোপযুক্ত বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো এমন নয়, যার সমাধান অতীতে কখনো করা হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন বিচারব্যবস্থা নিয়মিতভাবে আঞ্চলিক ও বিষয়ভিত্তিক বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যদিও আমাদের হাইকোর্ট বর্তমানে সাধারণত এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হন না, বিকেন্দ্রীকরণ এসব প্রশ্নের জন্ম দেবে। তবে অন্য যেকোনো আদালতের মতো এগুলো উপযুক্ত প্রক্রিয়া ও নিয়মাবলির মাধ্যমে কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
অষ্টম সংশোধনী মামলা থেকে সরে আসাঅষ্টম সংশোধনীর ভুলগুলো এড়ানো হলেও ১০০ অনুচ্ছেদের ভবিষ্যৎ সংশোধনী এই মর্মে চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে যে ওই সংশোধনী অষ্টম সংশোধনী মামলার বৃহত্তর সিদ্ধান্তের (হাইকোর্টের একাধিক আসন বা বেঞ্চ থাকা অসাংবিধানিক) পরিপন্থী। এ কারণে ওপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় উত্তরটি, অর্থাৎ সংবিধানের পূর্ববর্তী ব্যাখ্যা থেকে সরে আসা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সংবিধান ব্যাখ্যার নিয়মাবলি অন্যান্য লিখিত দলিল, যেমন সাধারণ আইন, এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়মাবলির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। প্রচলিত আইনগত ব্যাখ্যার অনেক সীমাবদ্ধতা সংবিধানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে প্রযোজ্য হয় না, যে কারণে আদালত পূর্ববর্তী ব্যাখ্যা থেকে সরে আসতে পারেন।
সংবিধান দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে রচিত হয়। তবে সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার ওপরই এর প্রাসঙ্গিকতা নির্ভর করে। প্রতিটি সময়ের পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের আলোকে এর ব্যাখ্যা হওয়া প্রয়োজন। অনমনীয় ও অপরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নতুন প্রয়োজন ও ধ্যানধারণার যথাযথ সমাধান দিতে পারে না। এ জন্য সংবিধানকে একটি জীবন্ত দলিল হিসেবে দেখা হয়, যা বিকশিত হয়, অভিযোজিত হয় এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল থাকে।
প্রতিটি প্রজন্মের নিজস্ব প্রয়োজন অনুসারে আইনগত কাঠামো গড়ে তোলার অধিকার রয়েছে এবং কোনো সাংবিধানিক ধারা, যেমন ১০০ অনুচ্ছেদ, চিরকাল পরিবর্তন অযোগ্য থাকতে পারে না। যেহেতু সংবিধানপ্রণেতারা ভবিষ্যতের সব পরিস্থিতি পূর্বানুমান করতে পারেন না, তাই সংবিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে শুধু স্থিতিশীলতা নয়, পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তাও নিশ্চিত করতে হয়। এই নীতিগুলো বাংলাদেশসহ বহু দেশের সাংবিধানিক আইনে সুপ্রতিষ্ঠিত (শরীফ ভূঁইয়া, রেভল্যুশনারি কনস্টিটিউশনালিজম, ইউপিএল, ২০২৫, পৃ.১৪-২০)।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বর্ণবিভাজন ও গর্ভপাত–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো পূর্ববর্তী ব্যাখ্যা থেকে সরে আসার সুপরিচিত উদাহরণ। প্লেসি বনাম ফার্গুসন (১৮৯৬) মামলায় ওই আদালত জাতিগত বিভাজনকে বৈধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরে ব্রাউন ভার্সেস বোর্ড অব এডুকেশন (১৯৫৪) মামলায় আদালত রায় দেন যে বিদ্যালয়ে জাতিগত বিভাজন সংবিধানবিরোধী। একইভাবে রো ভি ওয়েড (১৯৭৩) মামলায় আদালত গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি দেন। তবে ডবস ভার্সেস জ্যাকসন উইমেনস হেলথ অর্গানাইজেশন (২০২২) মামলায় আদালত রো রায় বাতিল করেন এবং সিদ্ধান্ত দেন যে সংবিধান গর্ভপাতের অধিকার প্রদান করে না।
১৯৮৯ সালের অষ্টম সংশোধনী মামলার পর বাংলাদেশে জনসংখ্যাগত, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, মামলার ধারা এবং বিশেষভাবে আইনগত বিরোধ ও মামলার সংখ্যার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। উচ্চ আদালতকে বিকেন্দ্রীকরণের নতুন কোনো উদ্যোগের সাংবিধানিকতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১০ কোটি, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটির বেশি। একই সময়ে দেশের অর্থনীতির আকার (জিডিপি) ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হারে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার) থেকে বেড়ে ৪১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কয়েক লাখ থেকে বেড়ে ৪৫ লক্ষাধিক হয়েছে। এই ব্যাপক পরিবর্তনগুলো ১৯৮৯ সালের অষ্টম সংশোধনী মামলার রায় পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি করে তুলেছে।
তদুপরি কোনো একটি নির্দিষ্ট সংবিধানিক ব্যাখ্যাকে চিরকাল বাধ্যতামূলক হিসেবে গ্রহণ করলে, তা একধরনের ‘ন্যাক্রোক্রেসি’র জন্ম দেয়, যেখানে অতীতের সিদ্ধান্ত বর্তমানকে অযাচিতভাবে প্রভাবিত করে। ১৯৮৯ সালে যেসব বিচারক উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা তাঁদের সময়ের প্রেক্ষাপটে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিলেও সেই রায়কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক করে রাখা জনগণের বিচারিক আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদাকে গুরুতরভাবে খর্ব করতে পারে।
জনগণের গাঠনিক ক্ষমতার প্রয়োগভবিষ্যতে উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণকে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অসাংবিধানিক ঘোষণার সম্ভাবনার বিরুদ্ধে আরেকটি সমাধান হলো জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংশোধনী আনয়ন করা।
‘মৌলিক কাঠামো’ নীতিটি এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে সংবিধানের অধীনে সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সীমিত। সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একটি প্রদত্ত ক্ষমতা, যা সংবিধান দ্বারা প্রদান করা হয়। ফলে কেবল সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা সম্ভব। এর বিপরীতে, গাঠনিক ক্ষমতা হলো সংবিধান রচনা বা মৌলিকভাবে পরিবর্তনের ক্ষমতা। জনগণ এই ক্ষমতার মালিক।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সংসদের সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে, তবে এই ক্ষমতা একটি প্রদত্ত ক্ষমতা এবং এ কারণে তা সংবিধানের অধীন। ফলে এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে ব্যবহার করা যায় না। কারণ, মৌলিক কাঠামো সংবিধানের অপরিবর্তনীয় ভিত্তি।
জনগণের প্রত্যক্ষ গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত সংবিধান সংশোধনের দ্বারা যদি উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, তাহলে তা হবে জনগণের গাঠনিক ক্ষমতার প্রয়োগ। যেহেতু এই ক্ষমতা মৌলিক কাঠামো নীতির আওতার বাইরে, সেহেতু এমন একটি সংশোধনীকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারবেন না।
ড. শরীফ ভূঁইয়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মতামত লেখকের নিজস্ব