পুনেতে ধর্মীয় সম্প্রীতির দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল মুসলিম পরিবার
Published: 23rd, May 2025 GMT
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে এক অসাধারণ ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল। পুনের ওয়ানওরিতে বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে একটি হিন্দু পরিবারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল একটি মুসলিম পরিবার।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়ানওরি এলাকার একটি হলে এক মুসলিম যুগলের বিয়ে–পরবর্তী অনুষ্ঠান চলছিল। ওই সময় ঠিক পাশেই খোলা মাঠে এক হিন্দু যুগলের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে তাদের ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল।
সংস্কৃতি কাওয়াদে পাতিল ও নরেন্দ্র গালান্দে পাতিলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল অলংকরণ লনসে সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে। কিন্তু হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়।
নরেন্দ্রের পরিবারের এক সদস্য জানান, ওই মাঠের চারপাশে তখন হুলুস্থুল অবস্থা। ঠিক পাশেই একটি মুসলিম যুগলের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল।
ওই সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের অনুরোধ করি, যেন কিছু সময়ের জন্য আমাদেরকে তাদের হলের অর্ধেক অংশ ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়। সেখানে আমরা “সপ্তপদী” (বিয়ের প্রধান রীতির) অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে চাই।’
মুসলিম পরিবারটি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যায় এবং তারা তাদের মঞ্চ ছেড়ে দেয়।
পাতিল পরিবারের ওই সদস্য বলেন, ‘ওই পরিবারের অতিথিরাও মঞ্চে আমাদের ধর্মীয় রীতির আয়োজন করতে সাহায্য করেন। দুই ধর্মের রীতিনীতি ও বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ করা হয়।’
পরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া উপভোগ করেন। নববিবাহিত মুসলিম দম্পতি মাহিন ও মোহসিন এবং হিন্দু দম্পতি নরেন্দ্র ও সংস্কৃতি মঞ্চে উঠে একসঙ্গে ছবি তোলেন।
এই ঘটনা দুই ধর্মের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহানুভূতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন ষ ঠ ন পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধারে চট্টগ্রামে পাউবো’র অভিযান
চট্টগ্রামে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারে ১৬ বছর পর অবশেষে কঠোর অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরের উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তর কাট্টলী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাগরিকাস্থ সাগর উপকূলঘেঁষা বেড়িবাঁধ ও বন্দর লিংক সড়কের পাশে মিনি স্টেডিয়াম এলাকায় আজ উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তারা হলেন, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হুছাইন মুহাম্মদ, পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারিস্তা করিম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুল হাসান। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিন টানা চলবে উচ্ছেদ অভিযান।
২ জুন সমকালের শেষের পাতায় ‘৩২০ কোটি টাকার জমি ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেও উচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি প্রভাবশালীরা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এসব জমি উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরু করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলদারদের হাত থেকে দুখলমুক্ত জমিতে পিলার ও কাটাতার দিয়ে সংরক্ষণ করে বনায়ন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই উচ্ছেদ ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সরকারি জায়গা যাদের দখলে
অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলমের দখলে থাকা ৭ একর জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটার ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর দখলে রয়েছে পাউবো’র আড়াই একর জায়গা। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু দশমিক ৪২ একর জায়গা বছরে ১৫ লাখ টাকায় মুনছুর মিস্ত্রি কাছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, দশমিক ৩৮ একরের আরেকটি জায়গা আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায়, দশমিক ৫৪ একরের আরেকটি জায়গা আব্দুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ভাড়া এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গা ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা আদায় করছেন।
এভাবে ৩৯ প্রভাবশালী ‘ভূমিখেকোর’ পেটে চলে গেছে চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকার পাউবো’র ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। গত ১৬ বছর ধরে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, স্কেভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পকেটে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিখেকোরা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯টি দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।