বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এক নেতার পদত্যাগ
Published: 23rd, May 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি থেকে এক নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে একটি পোস্ট দেন।
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া ওই নেতার নাম আবদুল হাফিজ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নের রশিদার ঘোণা এলাকায়।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়কের উদ্দেশে আবদুল হাফিজ লেখেন, ‘আমি আপনার সংগঠনের একজন একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বিগত সময়গুলোতে কাজ করে গেছি এবং জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে শহীদ ভাই ও বোনদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে আমি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কারণে আমি এই পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’
জানতে চাইলে আবদুল হাফিজ আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পরপর আমাদের প্রতি মানুষের যে সম্মান, আলাদা একটা ভালোবাসা ছিল, সেটি এখন নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর পারস্পরিক বিভাজন আমাকে হতাশ করেছে। আমার দলের কোনো অপকর্ম আমি গায়ে মাখতে চাচ্ছি না। এখন থেকে পড়াশোনা, পারিবারিক ব্যবসা ও ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। তাই পদত্যাগ করেছি।’
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আহ্বায়ক জুবাইর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুকে হাফিজের পদত্যাগের ঘোষণা আমরা দেখেছি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেওয়ারিশ প্রাণীদের অবহেলা নয়
বেওয়ারিশ প্রাণী আমাদের পরিবেশের অদৃশ্য সৈনিক। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অংশ হিসেবে প্রাণীরা আমাদের পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্যে কিছু প্রাণী রয়েছে, মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখে। আবার কিছু প্রাণী আছে, আমাদের অবহেলার কারণে ‘বেওয়ারিশ’ হয়ে গেছে। এসব প্রাণী বিশেষত শহরাঞ্চলে, রাস্তার ধারে, পার্কে কিংবা বাসাবাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। তাদের জীবনের প্রতি দায়িত্ব ও সহানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অনেকের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।
এরা কখনোই নিজেদের জীবনধারণের জন্য অপরাধী নয়, বরং মানব সভ্যতার অবহেলার শিকার। এসব প্রাণীর অবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।
‘বেওয়ারিশ’ শব্দটি শুনলে অনেকেই ধারণা করি, এই প্রাণীরা কোনো অপরাধ করেছে অথবা তাদের কোনো অধিকার নেই। কিন্তু আমরা কি জানি, এসব বেওয়ারিশ প্রাণী একইভাবে জীবন ধারণের অধিকারী, ঠিক যেমন আমরা মানুষ হিসেবে অধিকারী? তাদের প্রতি আমাদের অবহেলা নয়; ভালোবাসা ও সহানুভূতির দাবি রয়েছে।
বেওয়ারিশ প্রাণী বিশেষ করে কুকুর-বিড়াল আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। তাদের জীবনযাত্রার বাস্তবতা অনেক সময় আমাদের চোখে পড়ে না। এসব প্রাণী, যাদের কোনো নির্দিষ্ট মালিক নেই এবং যারা রাস্তা অথবা জনবহুল জায়গায় বসবাস করে, তাদের জীবন কাটে খাদ্যাভাব ও বিপদের মধ্যে।
বেওয়ারিশ প্রাণীরা সাধারণত মানুষের সাহায্য ছাড়াই জীবন যাপন করে। তারা নিজেরাই খাদ্য সংগ্রহ করে, ময়লা-আবর্জনা খেয়ে বাঁচে এবং নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক উদ্যোগের অভাব এসব প্রাণীর জীবনে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। এই প্রাণীদের সুরক্ষা ও সহায়তা জরুরি।
মানুষের মতো প্রাণীরাও প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে বেওয়ারিশ প্রাণীরা প্রায়ই অবহেলার শিকার হয়। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা কিংবা আশ্রয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় নানা বিপদের সম্মুখীন হয়। মানবিকতা ও নৈতিকতার স্বার্থে বেওয়ারিশ প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া শুধু কোনো একক ব্যক্তি বা সংগঠনের নয়। বরং সরকার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই এ সমস্যার যথাযথ সমাধান সম্ভব।
বর্তমানে দেশে কিছু এনজিও এবং প্রাণিপ্রেমী ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেওয়ারিশ প্রাণীদের চিকিৎসা, খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছেন। দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই প্রয়াস অত্যন্ত অপ্রতুল। রাজধানী এবং বড় বড় শহরেও বেওয়ারিশ প্রাণীদের দুর্দশা চোখে পড়ার মতো। এমন বাস্তবতায় প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত ও টেকসই ব্যবস্থা, যাতে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে প্রাণীরাও সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়।
সরকারের উচিত বেওয়ারিশ প্রাণীদের সুরক্ষা ও সহায়তার লক্ষ্যে একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা। দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় বেওয়ারিশ প্রাণীদের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি।
nসেলিম রানা: গাজীপুর