অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, সরকার সেই কাজের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে তারপর মান–অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য কাজ না।

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথাগুলো বলেন। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

অন্তর্বর্তী সরকার অস্থায়ী উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের স্থায়ী কোনো ‘ম্যান্ডেট’ নেই। এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না। তাই তার পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব না। তবে সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু কিছু পরিবর্তনের গতিমুখ তৈরি করতে পারে।

মানুষ পরিশ্রম করছে, সম্পদ তৈরি হচ্ছে, ফলে টাকাপয়সার অভাব নেই উল্লেখ করে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, সম্পদের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পর। সরকারের এটা প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার। সেই অঙ্গীকারের দিকে না গিয়ে বিদেশি কোম্পানি, বিদেশি বিনিয়োগ, স্টারলিংক, এলএনজি আমদানি—এসব দিকে মনোযোগ দেওয়া তো এই সরকারের দায়িত্ব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা, কৃষি–শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা এবং জনগণের জন্য পরিবেশবান্ধব যে পথ, সেই পথটাই যাতে শক্তিশালী হয়, সেটার জন্য প্রয়োজনীয় মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। সরকার সেই কাজটা করবে। সেই কাজের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে, তারপর মান–অভিমান করা, এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য পথ না।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা না করে, ধরেন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা এমনভাবে ঘোষণা করলেন এটা দিতেই হবে, যেকোনো মূল্যে দিতে হবে। হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি) এর নতুন নাম দিয়েছে ত্রাণ চ্যানেল। দুটির ঘটনা তো একই। এগুলো করতে হবে। কিংবা স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে জাতীয় সক্ষমতার বিকল্প হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব দুর্বলতা আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব আছে—সেগুলো দূর করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় তৎপরতা বাড়াতে পারত। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার জন্য পাঠাতে পারত। চট্টগ্রাম বন্দরে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো হলে সেটার স্থায়ী ও স্থিতিশীল প্রভাব ভবিষ্যতের জন্য থাকত।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টা হতাশ–ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা১৫ ঘণ্টা আগে

বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বিডার চেয়ারম্যান হঠাৎ করে এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি করে এলেন। পেট্রোবাংলা জানে না। এটা তো হওয়ার কথা না। দেশের দরকার ছিল গ্যাস উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। সেটার জন্য গত ৯ মাসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সামনের বাজেটে এই জিনিসগুলো থাকতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগত অবস্থানের একটা পরিবর্তন করতে হবে। সেটা হলে সস্তায় গ্যাস, বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আমদানির জন্য এত ব্যয়, ভর্তুকি দিতে হবে না।

সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামে রেলওয়ের যেসব ওয়ার্কশপ ছিল, সেগুলোর জনবল কমানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ওয়ার্কশপের সক্ষমতা কমিয়ে রেলের ইঞ্জিন, বগি, ওয়াগন—সবকিছু আমদানি করা হয়েছে। অথচ ওয়ার্কশপ শক্তিশালী করা হলে বাংলাদেশে বগি, ইঞ্জিন—সবই নির্মাণ করা সম্ভব হতো।

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: কেমন বাজেট চাই?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় (বাঁ থেকে) ড.

হারুন উর রশীদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও মোশাহিদা সুলতানা। আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ র জন য প সরক র র আমদ ন হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

‘যুগোপযোগী বিধি প্রণয়ন আগামী প্রজন্মের কাছে মাইলফলক হয়ে থাকবে’

বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা- ২০২৫ কে স্বাগত জানিয়েছে এফবিসিসিআই-এর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ। সংগঠনটি বলেছে, ৩১ পর ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুসারে যুগোপযোগী বিধি প্রণয়ন আগামী প্রজন্মের কাছে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই বিধি আগামীতে এফবিসিসিআইসহ দেশের সকল বাণিজ্য সংগঠন দখলদারমুক্ত হয়ে স্বকীয়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন এফবিসিসিআই-এর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সদস্যসচিব জাকির হোসেন।
 
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জনবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রণয়ন ও এফবিসিসিআই এর সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সারাদেশে বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এসব প্রস্তাব এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পাশাপাশি বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে সংস্কারের পক্ষে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করা হয়। গত ২০ মে সরকার বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। 

নেতারা বলেন, এই বিধিমালার অধীনে এফবিসিসিআই প্রশাসক খুব শিগগিরই নতুন নির্বাচনের পদক্ষেপ নেবেন। আমরা আশা করি আগামী নির্বাচনে সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ীর প্রিয় সংগঠন এফবিসিসিআই এর সাধারণ পরিষদ সদস্যরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করবেন। যারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন, উপদেষ্টা আবুল কাশেম হায়দার, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন, সদস্য বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া, আনিসুর রহমান বাদশা, ড. হাসিব মাহমুদ, ফিরোজ আলম, সাঈদা আখতার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজন জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন
  • নারায়ণগঞ্জে ‘আইন প্রণয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আইন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রকল্প’ শীর্ষক কর্মশালা
  • এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনের আশ্বাস অর্থ মন্ত্রণালয়ের
  • বাংলাদেশ যেন পরাশক্তির ছায়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত না হয়: এবি পার্টি
  • যে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না
  • ‘যুগোপযোগী বিধি প্রণয়ন আগামী প্রজন্মের কাছে মাইলফলক হয়ে থাকবে’
  • জেনিনে কূটনীতিকদের ওপর ইসরায়েলের গুলিবর্ষণ ‘অগ্রহণযোগ্য’: ইইউ
  • অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বান: অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ও এমপিদের চিঠি
  • অনেক প্রস্তাব পেয়েছি, তবু রাজি হইনি: হানিফ সংকেত