প্রতিবছর বর্ষা এলেই রাজধানী ঢাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নাগরিকদের জন্য এক বিভীষিকায় রূপ নেয়। মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটে হাঁটু থেকে কোমরপানি জমে। তলিয়ে যায় স্কুল-কলেজ, অফিসপাড়া, এমনকি হাসপাতাল এলাকাও। বন্ধ হয়ে পড়ে যানবাহন চলাচল; দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। এ শুধু সাময়িক দুর্ভোগ নয়; বরং একটি দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল।
জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। নতুন নতুন ভবন নির্মাণের সময় জলাধার বা পানি নিষ্কাশনের তেমন ব্যবস্থা রাখা হয় না। শহরের খাল, ডোবা ও জলাশয় দখল হয়ে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। নর্দমা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নষ্ট, অপরিষ্কার কিংবা ভরাট হয়ে আছে ময়লা- আবর্জনায়। প্লাস্টিক, পলিথিন, খাবারের প্যাকেটসহ নানা বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে পানি চলাচলের পথ আটকে যায়। এতে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না, যা ঢাকাকে অচল করে ফেলে। এই দুরবস্থা দিনের পর দিন চলতে থাকলেও তা রোধে নেই দৃশ্যমান উদ্যোগ।
এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। প্রথমেই ঢাকার বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার ও আধুনিকীকরণ আবশ্যক। প্রতিটি ওয়ার্ডে পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ড্রেন নিশ্চিত এবং তা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। খালগুলোকে অবৈধ দখলমুক্ত করে পুনরুদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে কঠোরভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নগরের নতুন যে কোনো নির্মাণকাজে অবশ্যই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি সড়ক নির্মাণের সময় এমনভাবে নকশা করতে হবে, যাতে সহজেই পানি বেরিয়ে যেতে পারে।
এ সমস্যার টেকসই সমাধানে স্বতন্ত্র ও দক্ষ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। এই কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলা কিংবা যত্রতত্র ফেলা থেকে বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন। পানি নিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিতে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা শুধু বর্ষাকালীন সমস্যা নয়। এটি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্যও বড় হুমকি। প্রতিবারের মতো সমস্যা চিহ্নিত করে আলোচনা করলেই চলবে না; এবার চাই বাস্তবায়ন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। এই মহানগরকে বাসযোগ্য রাখতে হলে আজই শুরু করতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। কারণ একটি অচল ঢাকা মানে পুরো দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হওয়া।
নবাব শাহজাদা: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
alinobab164@gmail.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসবমুখর পরিবেশে হবে দুর্গাপূজা: ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। আগের মতোই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুকূল পরিবেশে ও নির্বিঘ্নে হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
এবার ঢাকা মহানগরীতে ২৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, মণ্ডপভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনার বাইরে পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও থাকবে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
প্রস্তুতি সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, উপাধ্যক্ষ রামকৃষ্ণ মিশন মঠসহ সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জিললুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকতা এবং সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এমআর/রফিক