বার্সেলোনাকে স্তব্ধ করে ১৮ বছর পর আর্সেনালের শিরোপা জয়
Published: 25th, May 2025 GMT
হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপায় চোখ রেখে গতকাল রাতে আর্সেনালের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনার মেয়েরা। টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সাকে এই ম্যাচেও ধরা হচ্ছিল ফেবারিট। কিন্তু ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের স্তব্ধ করে দিয়েছে আর্সেনাল।
লিসবনের ফাইনালে আর্সেনালের মেয়েদের জয় ১–০ গোলে। এই জয়ে ১৮ বছর পর প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান ট্রফি জিতল আর্সেনাল। ৭৪ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন বদলি নামা স্টিনা ব্লাকস্টেনিয়ুস।
ম্যাচের শুরু থেকেই আর্সেনালের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে বার্সা। ম্যাচজুড়ে আক্রমণ ও বল দখল, দুদিক থেকেই আর্সেনালের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিল কাতালান ক্লাবটি। ৬৮ শতাংশ বলের দখল রেখে বার্সা শট নেয় ২০টি, যার ৫টি লক্ষ্যে থাকলেও কোনোটিই গোল রূপান্তরিত হয়নি। এদিন ফাইনাল থার্ডে বার্সার তেমন কোনো আগ্রাসনই দেখা যায়নি। আইতানা বোনমাতি, ইউয়া পাজর এবং অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াসদের এই ব্যর্থতাই মূলত ভুগিয়েছে বার্সাকে।
আরও পড়ুনমেসির জাদুকরি গোল, ঘুরে দাঁড়িয়ে হার এড়াল মায়ামি২ ঘণ্টা আগেঅন্যদিকে আর্সেনাল ৩২ শতাংশ বলের দখল রেখে ৮ শটের ৩টি লক্ষ্যে রাখে এবং ১টি গোলও আদায় করে নেয়। ব্লাকস্টেনিয়ুসের করা গোলটিই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ৭৪ মিনিটে স্রোতের বিপরীতে আক্রমণে গিয়ে বক্সের ভেতর বল বাড়ান বেথ মিড। সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করেন সুইডিশ ফরোয়ার্ড ব্লাকস্টেনিয়ুস। পিছিয়ে পড়েও বার্সা অবশ্য চেষ্টা করেছিল ম্যাচে ফেরার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। শিরোপা হারানোর হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
আর্সেনালের শিরোপা উদ্যাপন চলেছে ড্রেসিংরুমেও.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর স ন ল র
এছাড়াও পড়ুন:
মালিক: রাজকুমার রাওয়ের রূপান্তরের গল্প
লক্ষ্ণৌর এক কুয়াশাময় সকাল। নিস্তব্ধতা ভেঙে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে একটি কালো রঙের এসইউভি। গাড়ি থেকে নামেন একজন। চোখে কালো চশমা, হাতে একটি পুরোনো রিভলবার। চারপাশের গলি যেন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে তাঁর চলার অপেক্ষায়। তাঁর নাম ‘মালিক’। এ শুধু একটি নাম নয়– এক সময়ের চিহ্ন, এক নির্ধারিত বাস্তবতার প্রতীক। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও; যিনি তাঁর ক্যারিয়ারে এতদিন প্রেমিক, নিঃস্ব, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এবার সেই চেনা রূপ ভেঙে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক ভয়ংকর, অথচ মানবিক গ্যাংস্টারের চেহারায়।
‘মালিক’ সিনেমা তাই কেবল একটি অ্যাকশনধর্মী থ্রিলার নয়, বরং এটি এক অভিনেতার রূপান্তরের গল্প। এক সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে গড়ে ওঠা একটি চরিত্রের গভীর অভ্যুত্থান। ‘কপালে যদি না লেখা থাকে, আমি নিজেই লিখে নেব’– রাজকুমারের কণ্ঠে উচ্চারিত এই সংলাপ যেন হয়ে ওঠে সিনেমাটির সারকথা। সিনেমায় তাঁকে শুধুই অস্ত্রধারী গ্যাংস্টার হিসেবে দেখানো হয়নি। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে, শরীরী ভাষায়, সংলাপে ফুটে ওঠে এক চাপা ক্ষোভ, অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের কাহিনি। চরিত্রটি নিয়ে রাজকুমার রাও জানিয়েছেন, এটি তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে আবার গড়ে তুলেছে। প্রতিটি অ্যাকশন দৃশ্য তিনি নিজে করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন মাসের পর মাস।
‘মালিক’ ছবিতে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন রাজকুমার রাও ও মানুষি চিল্লার। পুলকিত পরিচালিত এ অ্যাকশনধর্মী ছবিতে তারা হাজির হয়েছেন একেবারে নতুন রূপে। সাবেক বিশ্বসুন্দরী মানুষি এতদিন গ্ল্যামারাস চরিত্রেই বেশি পরিচিত ছিলেন। এ ছবিতে তিনি হাজির হয়েছেন সম্পূর্ণ গ্ল্যামারহীন, এক বাস্তব ও মানবিক স্ত্রীর ভূমিকায়।
রাজকুমারের স্ত্রী ‘শালিনী’ চরিত্র প্রসঙ্গে মানুষি বলেন, ‘এ চরিত্রের কথা যখন পরিচালক ও লেখক প্রথম কল্পনা করেন, তখন আমি তাদের ভাবনায়ও ছিলাম না। এর আগে কেউ আমাকে এমন চরিত্রে দেখেননি। সৌভাগ্যবশত আমি এ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, হয়তো পেরেছি।’ মানুষি প্রসঙ্গে রাজকুমার রাও বলেন, ‘মানুষির মুখে রয়েছে এক অপার ভারতীয় সৌন্দর্য। এমন চরিত্রে ওর আরও কাজ করা উচিত। মানুষি শুধু চরিত্রকে ধারণ করেননি, বরং তাঁর সরলতা, ভাষা ও চাহনির মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।’
এ সিনেমায় আরেকটি চমক হচ্ছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। টলিউডে বহুবার পুলিশ চরিত্রে অভিনয়ের পর এবার তাঁকে দেখা যাবে বলিউডের ‘মালিক’ ছবিতে এক দুঁদে পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায়। ছবিতে রাজকুমার ও প্রসেনজিৎ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াবেন, যা সিনেমার গতি ও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। শুটিং সেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজকুমার বলেন, “আমাদের ‘বং কানেকশন’ তো সবারই জানা। পত্র লেখা আমাদের সেই যোগসূত্র। এ ছবিতে আমাদের চরিত্রগুলো এমন, যেখানে একসঙ্গে বসে খাওয়ার সুযোগই ছিল না (হেসে)।
বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি খুব ভালো মানুষ। কোনো শিল্পীর সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছবিতে তাঁকে একদম আলাদা রূপে দেখা যাবে। তাঁর অভিনয়ে একটি বিশেষ দিক আছে, যা দর্শকদের চমকে দেবে।”
সিনেমার প্রচারে এসে অনুজ রাজকুমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন প্রসেনজিৎ। প্রশংসা করেন পরিচালক পুলকিতেরও। তিনি বলেন, ‘আমি তখন মুম্বাইতে একটি অন্য ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন এ ছবির জন্য ফোন আসে। এরপর পুলকিতের সঙ্গে দেখা করি। তাঁর গল্প বলার ধরন, কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে বুঝেছিলাম। এ ছেলেটি একদিন নিজেকে প্রমাণ করবেই। ৩০ মিনিট আলাপচারিতার পর বলি, আমি কাজটা করছি।’
রাজকুমার রাও প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘ও দারুণ ভালো একজন অভিনেতা। সে বরাবর তার অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করেছে। এবারও নিজের চরিত্রে ও মন দিয়ে অভিনয় করেছে।’ নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইশে শ্রাবণ আর দশম অবতার-এর মতো পুলিশের চরিত্র আমি অনেক করেছি। এ চরিত্রটায় একদম আলাদা একটা চমক আছে।’
সিনেমাটির পটভূমি আশির দশকের এলাহাবাদ। যেখানে ধর্ম, রাজনীতি এবং অপরাধ এক নতুন সমাজের ভিত্তি তৈরি করছিল। সে সময়েই মালিকের মতো এক চরিত্রের জন্ম। যিনি প্রথমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান; পরে সময়ের চাপে নিজেই হয়ে ওঠেন নিয়ন্ত্রক, বিচারক এবং শাসক।
‘মালিক’ একটি প্রশ্ন তোলেন– নায়ক কে? আর খলনায়কই বা কে? সবশেষে দর্শক বুঝতে পারেন, এটি কেবল একজন অপরাধীর গল্প নয়। বরং এটি সময়, অবিচার, ব্যর্থতা ও প্রতিশোধের গল্প।
রাজকুমার রাওয়ের অনবদ্য অভিনয়, মানুষি ও প্রসেনজিতের সপ্রাণ উপস্থিতি এবং পুলকিতের দক্ষ পরিচালনায় ‘মালিক’ হয়ে উঠেছে এক পূর্ণাঙ্গ, আবেগঘন এবং থ্রিলিং চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতা। আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পেলে পর্দায় ধরা পড়বে শুধু রক্ত, বন্দুক আর সংঘর্ষ নয়, ধরা পড়বে এক মানুষের অন্তরাত্মা, এক অভিনেতার নতুন জন্ম।