কনকনে হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় বিপর্যস্ত দিনাজপুরের জনজীবন। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। 

সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন। 

তিনি জানান, আজ সকাল ৬টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.

৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার। গতকাল একই সময় তাপমাত্রা ছিলো ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৪ শতাংশ। 

তিনি আরো জানান, দেশের অন্যান্য কয়েকটি জেলার আজকের সকাল ৬টার তাপমাত্রা: তেতুলিয়া (পঞ্চগড়): ৯.৫, সৈয়দপুর: ১৪.০, রংপুর: ১৩.৬, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম): ১১.৩, ডিমলা (নীলফামারী): ১২.৫, বদলগাছি (নওগাঁ): ১৩.০, বগুড়া: ১৪.৪, ঈশ্বরদী (পাবনা): ১৩.০, যশোর: ১১.৬, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ১০.৭ এবং চুয়াডাঙ্গা: ১১.৬  ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কনকনে শীতে সাধারণ মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তবে পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনেকেই শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটছেন। 

অপরদিকে তীব্র শীতে অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে ব্যস্ততম সড়ক ও হাটবাজারগুলো। ভোরে ঘনকুয়াশা থাকার কারণে বিভিন্ন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এছাড়াও শীতে জবুথবু হয়েও কাক ডাকা ভোরে অনেক শ্রমজীবী মানুষেরা ঘর থেকে বের হচ্ছে। শীতকে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন ফসলি মাঠে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

ঢাকা/মোসলেম/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে কমবে শুল্ক, রপ্তানিতে প্রণোদনার প্রস্তাব

বিশ্বের নতুন যত গাড়ি বাজারে আসছে, তার ২০ শতাংশের বেশিই এখন বৈদ্যুতিক। বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা যত দ্রুত বাড়ছে, দেশে ততটা বাড়ছে না। তাই দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয় করতে নানা সুবিধা যুক্ত করে নতুন নীতিমালা করছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে এই নীতিমালার খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক, নিবন্ধন ফি কমানো এবং এ ধরনের গাড়ি কেনায় ব্যাংকঋণের সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, নীতিমালার সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে তাতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কমবে।

তবে গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ ও নগদ প্রণোদনার সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। আর বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ‘উৎপাদক’ ও ‘সংযোজনকারী’ সংজ্ঞা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বৈদ্যুতিক গাড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া হলে বৈশ্বিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে। ইভি ব্যবহার জনপ্রিয় করতে আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক সীমিত সময়ের জন্য প্রত্যাহারের কথাও বলছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

খসড়া নীতিমালায় পরিবহন খাতের কার্বন নিঃসরণ কমানো, জ্বালানিনির্ভরতা হ্রাস ও পরিচ্ছন্ন চলাচলব্যবস্থা গড়ে তোলার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়েছে। নীতির বাস্তবায়ন তদারকিতে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট ‘ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়ন কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমতে পারে দাম

দেশে বর্তমানে সম্পূর্ণ তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি (সিবিউ) আমদানি শুল্ক ৮৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এই শুল্ক কমিয়ে ৩৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালায়। আর দেশে এ ধরনের গাড়ি সংযোজনের জন্য যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহার ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরিতে শুল্কহার প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

এ বিষয়ে র‌্যানকন মোটরসের বিভাগীয় পরিচালক ইমরান জামান খান বলেন, সারা বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে জ্বালানি খরচ কমেছে। শিল্প মন্ত্রণালয় নতুন যে নীতিমালা করতে যাচ্ছে, তা দেশের বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পের জন্য বেশ ভালো পদক্ষেপ। এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়বে। নীতিমালায় প্রস্তাবিত শুল্কহার কার্যকর হলে এসব গাড়ির দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। ফলে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বড় হবে। বাজার বড় হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।

বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৬১ শতাংশ শুল্ক–কর দিতে হয়। তবে নতুন নীতিমালা হলে আমরা এই খাতের শিল্পোন্নয়নে কিছু সুবিধা পাব বলে আশা করছিমীর মাসুদ কবির, এমডি, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে দেশে সম্পূর্ণ তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি (সিবিউ) এসেছিল ৭৭টি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৮টিতে। আর চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ৩০টি বৈদ্যুতিক গাড়ি।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ১ কোটি ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি।

বিওয়াইডি বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইমতিয়াজ নওশের প্রথম আলোকে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত নীতিমালা কার্যকর হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কমার পাশাপাশি এ খাতের নতুন নতুন মডেলের গাড়ি আমদানিতে উৎসাহিত হবে গাড়ি ব্যবসায়ীরা।

খসড়া নীতিমালায় আরও যা রয়েছে

‘ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়ন’ শীর্ষক এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, নতুন ইভি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে, যার মেয়াদ হবে আট বছর। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি ও করপোরেট সংস্থাগুলোর জন্য কেনা গাড়ির ৩০ শতাংশ হবে বৈদ্যুতিক—এমন পরিকল্পনাও রয়েছে নীতিমালায়। সেই সঙ্গে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন, ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সম্পূর্ণ মওকুফ ও নিবন্ধন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।

এ ছাড়া স্থানীয় নির্মাতাদের রপ্তানিতে সহায়তার জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও আছে; আর ইলেকট্রিক ভেহিকেল ও যন্ত্রাংশ রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে নগদ সুবিধা বা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নীতিমালায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এনবিআরের আলোচনা হয়েছে। সরকার পরিবেশবান্ধব গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমাতে চায়। যেহেতু এই নীতিমালা এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে, তাই এটি নিয়ে আরও পর্যালোচনা রয়েছে। কিছু প্রস্তাব হয়তো নতুন করে সংযোজন আর কিছু বাদ দেওয়া হবে।

নীতিমালাটি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। চলতি মাসের শেষে ও ডিসেম্বরে প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করব। এরপর যত দ্রুত সম্ভব এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবেরশিদুল হাসান, অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীতিমালাটি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। তাই এখনো অনেক বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে এনবিআরের কাছ থেকে মতামত চেয়েছি। এ ছাড়া বুয়েটের একটি প্রতিনিধিদলের মতামত নেব। চলতি মাসের শেষে ও ডিসেম্বরে নীতিমালার প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করব। এরপর যত দ্রুত সম্ভব এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।’

দেশের প্রথম ইভি গাড়ির কারখানা

দেশে ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা তৈরির কাজ শুরু করে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চট্টগ্রামের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা এনএসইজেডে ১০০ একর জায়গায় এই কারখানার কাজ শুরু হয়েছিল। নতুন এই কারখানা তৈরিতে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত জুনে কারখানাটির কাজ শেষ হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস–সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মাসুদ কবির প্রথম আলোকে বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৬১ শতাংশ শুল্ক–কর দিতে হয়। তবে নতুন নীতিমালা হলে আমরা এই খাতের শিল্প উন্নয়নে কিছু সুবিধা পাব বলে আশা করছি। এ ছাড়া রপ্তানিতে প্রণোদনা দিলে এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ