১২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত দিনাজপুরের জনজীবন
Published: 15th, January 2025 GMT
কনকনে হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় বিপর্যস্ত দিনাজপুরের জনজীবন। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ।
সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন।
তিনি জানান, আজ সকাল ৬টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.
তিনি আরো জানান, দেশের অন্যান্য কয়েকটি জেলার আজকের সকাল ৬টার তাপমাত্রা: তেতুলিয়া (পঞ্চগড়): ৯.৫, সৈয়দপুর: ১৪.০, রংপুর: ১৩.৬, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম): ১১.৩, ডিমলা (নীলফামারী): ১২.৫, বদলগাছি (নওগাঁ): ১৩.০, বগুড়া: ১৪.৪, ঈশ্বরদী (পাবনা): ১৩.০, যশোর: ১১.৬, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ১০.৭ এবং চুয়াডাঙ্গা: ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কনকনে শীতে সাধারণ মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তবে পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনেকেই শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটছেন।
অপরদিকে তীব্র শীতে অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে ব্যস্ততম সড়ক ও হাটবাজারগুলো। ভোরে ঘনকুয়াশা থাকার কারণে বিভিন্ন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এছাড়াও শীতে জবুথবু হয়েও কাক ডাকা ভোরে অনেক শ্রমজীবী মানুষেরা ঘর থেকে বের হচ্ছে। শীতকে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন ফসলি মাঠে কাজ করছেন শ্রমিকরা।
ঢাকা/মোসলেম/ইমন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের আরও শক্তিশালী অংশীদারত্ব প্রয়োজন: বিশ্বব্যাংক
সরকারি, বেসরকারি ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও অংশীদারত্বমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান করতে পারে বাংলাদেশ। যা শুধু জলবায়ু ঝুঁকিই কমাবে না বরং টেকসই সমাধান দেবে।
সোমবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ফ্রম রিস্ক টু রেজিলিয়েন্স: হেলপিং পিপল অ্যান্ড ফার্মস অ্যাডাপ্ট ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এই অংশীদারত্বমূলক কাজকে অগ্রাধিকার দিলে পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি শক্তিশালী হবে, দীর্ঘ মেয়াদে যার অগ্রগতি হবে আরও স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।
বেসরকারি খাতের সম্পদ ও বিনিয়োগ উপযুক্ত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হলে জলবায়ু সংকটজনিত ক্ষয়ক্ষতি এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বাজেট সংকটের মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অর্থায়নে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, পরিবহন ও ডিজিটাল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও নমনীয় সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জনসংখ্যার আধিক্য, উচ্চ তাপমাত্রা ও অবস্থানগত কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সর্বোচ্চ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম, আর এই অঞ্চলে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের ৯০ শতাংশ মানুষ চরম উচ্চ তাপের ঝুঁকিতে থাকবে ও প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে থাকবে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন প্রভাবিত হচ্ছে।
দেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সবচেয়ে জরুরি জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো। দীর্ঘ মেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার পর্যাপ্ত দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে; ৫৬ শতাংশ পরিবার বলেছে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রয়োজনীয় অভিযোজন করতে পারছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু পরিবেশগত নয়, বরং মানবিক। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুগছে দরিদ্র ও কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো।
জরিপে দেখা যায়, আগামী ১০ বছরে আবহাওয়াজনিত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে দক্ষিণ এশিয়ার তিন-চতুর্থাংশ পরিবার ও প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের উন্নত প্রযুক্তি বা অবকাঠামোর বদলে কম খরচের সাধারণ সমাধানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন সরকারি বিনিয়োগ দুর্যোগের সময় অনেক প্রাণ বাঁচিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সঠিকভাবে পরিকল্পিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং হালনাগাদ তথ্য দুর্যোগের সময় দরিদ্র মানুষের বড় সহায়ক হতে পারে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সরকারি উদ্যোগের পরিধি সীমিত। এ অবস্থায় জলবায়ু অভিযোজনে বেসরকারি খাতকে সামনে এনে একটি সমন্বিত নীতিপ্রকল্প প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে বলেন, ‘বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বারবার নতুনভাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। অভিযোজন ব্যাপক হলেও ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, ফলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। দুর্যোগ সহনশীলতা গড়ে তুলতে আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ুবান্ধব কৃষি এবং ঝুঁকিভিত্তিক অর্থায়ন বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলেও পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ জরুরি।’
জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিবেদনটির সহ-লেখক ও বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সিদ্ধার্থ শর্মা। তার মতে, পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে অভিযোজন করছে, কিন্তু সংকটের প্রকৃতি এতটাই জটিল ও বিস্তৃত যে সরকার ও বেসরকারি খাতকে আরও সমন্বিত ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনটি আরও বলছে, বাংলাদেশ অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে পারে। আগাম সতর্কবার্তা ও সাইক্লোন সেন্টারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুফল ইতিমধ্যে মিলেছে; প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সঠিক বিনিয়োগ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয় অভিযোজনে সাফল্য আরও বাড়ানো সম্ভব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে এবং মানবসম্পদের সুরক্ষা দেবে।