সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল না করে যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা দেশবাসীকে জানানো এবং তা অন্য দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা উচিত ছিল বলে মনে করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। পাশাপাশি টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ এবং শতাধিক নিত্যব্যবহার্য পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোরও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি। তারা এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে বজলুর রশীদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনিয়মের অভিযোগ তুলে সারা দেশে টিসিবির ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করেছে। এত বেশি কার্ডে অনিয়ম হওয়াটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই তাদের উচিত ছিল এই ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল না করে যথাযথ পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা দেশবাসীকে জানানো এবং অন্য দরিদ্রদের মধ্যে তা বিতরণ করা; কিন্তু তারা তা না করে উল্টো টিসিবির ট্রাক সেল কর্মসূচিও ডিসেম্বর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।

এই ট্রাক সেল কর্মসূচি চালু থাকলে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নিম্ন আয়ের মানুষ কম দামে অন্তত তেল, ডাল ও চাল কিনতে পারত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাসদ দীর্ঘদিন ধরে জনজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে গ্রাম ও শহরের শ্রমজীবী মানুষের জন্য সর্বজনীন রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার সে দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই বর্তমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের গণবিরোধী চরিত্র জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুনটিসিবির কর্মসূচি: ট্রাক সেল বন্ধ, ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড বাতিল১৫ ঘণ্টা আগে

বিবৃতিতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ফলে জনজীবন এমনিতেই দুর্বিষহ। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রামীণ স্বল্প উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে গভীর সংকট তৈরি করবে।

তাই বাসদের দাবি, অবিলম্বে সরকারকে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও খেলাপি ঋণ আদায় করে শিল্প, কৃষি ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করে জনজীবনের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের সকল প্রকার অনিয়ম ও গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুনটিসিবির কর্মসূচি: ট্রাক সেল বন্ধ, ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড বাতিল১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি। 

লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা/অনিক/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ