সংঘর্ষের তিন দিন পরও কমেনি উত্তেজনা
Published: 4th, February 2025 GMT
বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগ ও আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গত শনিবার মধ্যরাতে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের থামাতে গিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হন। এ ঘটনার তিন দিন পার হলেও উত্তেজনা থামেনি।
জানা গেছে, ঘটনার জেরে দুই পক্ষই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি ও কথার লড়াই চালাচ্ছে। তিন শিক্ষার্থীকে হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযোগ তুলে করা হয়েছে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। সংঘর্ষের পরদিন থেকে শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় সরব শিক্ষার্থীরা
দু’পক্ষের মারামারিতে শিক্ষকদের আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে দায়ীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন তারা। একই দাবিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে প্রক্টরের ওপর হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। এ দাবিতে উপ-উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেন। এসব কর্মসূচির বাইরেও শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জড়িতদের শাস্তি চেয়েছেন।
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
মারামারির পরদিন রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দাবি করেছেন, শনিবার রাতের ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে আল-ফিকহ্ বিভাগ ও অন্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করেন। ঘটনার বিষয়ে আল ফিকহ্ বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, শুরু থেকেই আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আক্রমণাত্মক ছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছেন। প্রক্টরকে ধাক্কা দেওয়াকে কেন্দ্র করেই হাতাহাতি শুরু হয় বলে দাবি তাদের।
যদিও প্রক্টরকে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে অস্বীকার করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রাতের হামলায় বঙ্গবন্ধু হলের যাকারিয়া, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আমিরুল ও লালন শাহ হলের হাসানুল বান্না সরাসরি সম্পৃক্ত এবং ইন্ধনদাতা ছিলেন বলে দাবি তাদের। তবে সরাসরি হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণ নেই বলে জানান। হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন বলে সে সময় দাবি করা হয়।
গত সোমবার বিকেলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন এ তিন শিক্ষার্থী। এতে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযোগকে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও মানহানিকর বক্তব্য বলে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি তারা শিক্ষকদের ওপর হামলাসহ পুরো ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। এতে ঘটনার কারণ ও তথ্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন ব ভ গ স ঘর ষ র র ঘটন য় কর ছ ন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
গম্ভীরার তালে আলোচনায় উঠল বারনই নদদূষণের কথা
‘হে নানা দূষণ হইল, নদী মইল, এই দুঃখ কাখে জানাই...হে নানা বারনই নদীর কথা শুনো বইলা যাই, ঐতিহ্যে ভরা আমাদের বারনই।’ গম্ভীরা গানে এভাবেই বরনই নদের কথা বলছিলেন নানা-নাতি ভূমিকায় মোস্তফা সরকার ও কার্তিক চন্দ্র হালদার। গান ছেড়ে কথায় কথায় বললেন, ‘এগারো সাল থেকে এই নদী লিয়্যা কত কিছু লেখলো! এই প্রথম আলো পেপারে জাইল্যাদেরকে লিয়্যা একজাগাতে বইস্যা আলোচনা কইরা তাঁদের কথা লেখলো। কত সাংবাদিক কত মিডিয়াতে লেখলো, কিন্তু এই নদীকে বাঁচানোর লাইগ্যা কেহু আগাইয়া আসল না।’
রাজশাহীর বারনই নদের দখল, দূষণ ও নদীতীরের মানুষের দুর্ভোগের কথা নিয়ে আজ সোমবার সকাল থেকে জেলার পবা উপজেলার নওহাটায় নদীর ধারে দিনভর নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টা থেকে নদীর ধরে মন্দির চত্বরে গম্ভীরা। নদীর ধারে মানববন্ধন ও পরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সমন্বিতভাবে দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা এএলআরডি, রুলফাও ও বেলা। বুকস, মাসাউস, পরিবর্তন ও দিনের আলো হিজড়া সংঘসহ ১২টি সংগঠন এতে সহায়তা করে।
বারনই নদ রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী এলাকায় শীব নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার শেরকোল পৌরসভায় আত্রাই নদে পতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৩ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ প্রস্থ ৯১ মিটার, সর্বনিম্ন ২৭ মিটার এবং গড় প্রস্থ ৫১ মিটার। এটি রাজশাহী ও নাটোর জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, নলডাঙ্গা, নাটোর সদর এবং সিংড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই নদ রক্ষায় গম্ভীরা ও মানববন্ধনের পরে বিকেলে নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে ‘নদীর জন্য একসাথে—নদী রক্ষায় প্রয়োজনে সমন্বিত উদ্যোগ: জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বারনই নদী রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি সংস্থা রুলফাওর নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন।
সামাজিক কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন, এএলআরডির প্রতিনিধি সানজিদা খান, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য জামাত খান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পার্থ সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় স্যানাল, বাঁচার আশা সাংস্কতিক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা সরকার, পরিবর্তনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদ রিপন, বিইউকেএস–এর নির্বাহী পরিচালক হাসিনুর রহমান, সাংবাদিক ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।
দখল ও দূষণ থেকে বারনই নদীকে বাঁচাতে আলোচনাসভা